পায়ের গোড়ালি ব্যথায় বিশেষজ্ঞ পরামর্শ
আমাদের শরীরের সমস্ত ভার গোড়ালির মাধ্যমে মাটিতে চলে যায় এবং আমরা হাঁটা চলাফেরা করতে পারি। আমাদের মধ্যে অনেকেই পায়ের গোড়ালি ব্যথায় ভুগছেন। কেউ কেউ সকালে ঘুম থেকে উঠে মাটিতে পা ফেললে গোড়ালিতে প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করেন। আস্তে আস্তে কয়েক কদম পা ফেললে ব্যথা কিছুটা কমে যায়। আবার কারও কারও মনে হয় পায়ের গোড়ালিতে সুচ ফুঁড়ে আছে এই রকম ব্যথা। তবে যে ধরনের ব্যথাই হোক না কেন গোড়ালি ব্যথা অত্যন্ত কষ্টদায়ক।
যে কারণে গোড়ালি ব্যথা হয়
প্লান্টার ফ্যাসাইটিস: পায়ের গোড়ালি ব্যথার অন্যতম কারণ প্লান্টার ফ্যাসাইটিস। আমাদের গোঁড়ালি থেকে পায়ের আঙ্গুল পর্যন্ত একটা শক্ত ব্যান্ডের মতো লাগানো থাকে, যা পায়ের আকৃতিকে রক্ষা করে। একে প্ল্যান্টার ফাসা বলে। এই শক্ত ব্যান্ডে চাপ বা প্রদাহ হলে প্রচন্ড ব্যথা অনুভূত হয়।
ক্যালকেনিয়াম স্পোর বা গোঁড়ালির নিচে হাড়ের বৃদ্ধি: সাধারণত গোড়ালির হাড়ে ক্যালসিয়াম জমে একটা তীক্ষ্ম হাড়ের মত বাড়তি অংশ তৈরী করে। এই বাড়তি অংশ গোড়ালির নিচের লিগামেন্ট বা মাংসপেশী ও টিস্যুতে চাপ প্রয়োগ করলে ব্যথা অনুভূত হয়।
গাটে বাত: সাধারণত ইউরিক অ্যাসিড বেশী হলে এটি হয়।
ফ্রাকচার বা হাড় ভাঙ্গা।
মচকানো।
হাড় ক্ষয় ইত্যাদি।
কাদের গোড়ালির ব্যথা বেশী হয়
১. যাদের ওজন বেশী
২. যারা সাধারণত দৌড়ানো বা জগিং করার সাথে জড়িত যেমন- খেলোয়াড়।
৩. ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রমের কাজ কম করেন এমন ব্যক্তি।
৪. ডায়াবেটিস রোগী।
৫. যাদের পায়ের পাতা জন্মগতভাবে ফ্লাট বা খুব বেশী খাঁজ।
৬. যাদের ‘কাফ’ মাসেল টাইট।
৭. যারা সঠিক মাপের জুতা ব্যবহার করেন না।
৮. দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকার কাজ করেন যারা যেমন- ট্রাফিক পুলিশ।
৯. মেয়েরা যারা হাইহিলের জুতা পরতে পছন্দ করেন।
গোড়ালি ব্যথায় কী করণীয়:
১. নিয়মিত হাঁটার অভ্যাস করুন। গবেষনা বলছে; সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট হাঁটলে যে কোন ব্যথা থেকে মুক্ত থাকা যায়।
২. যদি গোড়ালি ব্যথা হয়েই যায় তাহলে জীবনযাত্রার ধরন বদলান। খুব বেশী হাইহিলের জুতা, টাইট জুতা পরার অভ্যাস ত্যাগ করুন। নরম স্লিপার আরামদায়ক জুতা ব্যবহার করুন। প্রয়োজনে হিল কুশন বা কৃত্রিম আর্চ (খাঁজ) ব্যবহার করুন। সাধারণত গোড়ালির নিচে এক ইঞ্চির মত উুঁচ হলে গোড়ালি ব্যথা কমে যায়।
৩. পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম নেবেন।
৪. আইস থেরাপী: বাসায় পায়ের গোঁড়ালির চারপাশে কাপড়ে বরফ জড়িয়ে ১০ মিনিট ম্যাসেজ করুন। এটি দিনে ৩-৪ বার ১৫-২০ মিনিট করুন। কখনোই সরাসরি বরফ ম্যাসেজ করবেন না।
৫. কিছু স্ট্রেচিং এক্সারসাইজ বাসায় করুন। এতে আপনার গোঁড়ালি আরও শক্তিশালী এবং সুদৃঢ়
হবে।
ক) একটি টেনিস বল পায়ের গোড়ালি থেকে পাতা পর্যন্ত ১৫-২০ বার রোলিং করুন। এটি দিনে ৩- ৪ বার করুন।
খ) কোনো দেয়ালের কাছে দাঁড়িয়ে গোঁড়ালি তুলে পায়ের বৃদ্ধাঙ্গুলের উপর ভর করে দাঁড়ান এবং ২০ সেকেন্ড ধরে রাখবেন। এটি ১০ বার করে দিনে ৩-৪ বার করবেন।
গ) বিছানা বা মেঝেতে পা সোজা করে বসে তোয়ালে দিয়ে পায়ের পাতা টেনে সামনে দিকে আনুন এবং ৩০ সেকেন্ট ধরে রাখুন। এটি ১০ বার করে দিনে ৩-৪ বার করুন।
৬. ফিজিওথেরাপী: এরপরও যদি ব্যথা না কমে তবে আপনি আপনার নিকটবর্তী একজন ভালো ফিজিওথেরাপী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। পায়ের গোঁড়ালি ব্যথায় ফিজিওথেরাপী খুবই কার্যকরী চিকিৎসা, আলট্রাসাউন্ড থেরাপী, প্যারাফিন ওয়াক্স বাথ, ডিপ ট্রান্সভার্স ফ্রিকশন ম্যাসেজ, টেপিং গোড়ালি ব্যথায় খুবই কার্যকরী।
৭.খাদ্যাভাস: পায়ের গোড়ালি ব্যথা কমানোর জন্য প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করা উচিত। অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি খাবারে রয়েছে ভিটামিন, মিনারেলস, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, MSM (মিথাইলসালফোনাইলমিথেন) এবং ভিটামিন সি। পালংশাক কমলা, মিষ্টি কুমড়া, টমেটো, আনারস, গাজর, স্ট্রবেরী, ব্রকলি, ব্লু-বেরী, হলুদ ইত্যাদি খাবার অ্যান্টি ইনফ্লামেটরী সমৃদ্ধ যা পায়ের গোড়ালি ব্যথায় খুবই উপকারী।
ওগেমা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন: টুনা ফিস, সলমন ফিস, অলিভ অয়েল, অ্যাভোকোডা, খুবই উপকারী। প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন: মাছ, মাংস, ডিম, দুধ ইত্যাদি গ্রহণ করুন। দিনে কমপক্ষে ২ লিটার পানি পান করুন। চিনি জাতীয় এবং প্রসেসিং খাবার যেমন-সাদা পাউরুটি, জ্যাংক ফুড, বার্গার, ওমেগা-৬ সমৃদ্ধ খাবার পরিহার করুন। তাই পায়ের গোঁড়ালি ব্যথা রোধে সঠিক ধরনের জীবন যাপন করুন, প্রয়োজনীয় ব্যায়াম, পরিমিত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন, সুস্থ থাকুন।