বালিশ-কাণ্ডের দায় নেবে না মন্ত্রণালয়

  • সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের আওতায় ভবনের আসবাবপত্র ও বালিশ ক্রয়সহ অন্যান্য কাজের অস্বাভাবিক ব্যয়ের খবর নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় সরকারের উচ্চমহল থেকে সংসদীয় কমিটি সবখানে বিষয়টি আলোচিত হচ্ছে।

সোমবার সংসদে সম্পূরক বাজেটের সমাপনী বক্তৃতায় এ নিয়ে ব্যাখা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জানিয়েছেন, বালিশ-কাণ্ডে জড়িত কর্মকর্তা ছাত্রদল নেতা ছিলেন, তিনি বুয়েট ছাত্রদলের ভিপিও ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

পরদিন মঙ্গলবার (১৮ জুন) সংসদীয় কমিটিতে বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা হয়। এতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য মন্ত্রী ও সচিবকে অনুরোধ জানানো হয়। তবে মন্ত্রী ও সচিব জানিয়েছেন এর দায় তাদের নয়। যেহেতু কাজটি করছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় তাই দায় তাদেরই নিতে হবে।

বৈঠক শেষে কমিটির সদস্য সরকার দলীয় এমপি ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত বার্তা২৪.কমকে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন, আমরা সবাই অখুশি। মন্ত্রণালয়ের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিলাম। তারা বলেছে যেহেতু কাজ দিয়েছে অন্য একটা মন্ত্রণালয়কে, তাদের কাছ থেকে কাজ বুঝে নেওয়ার আগে এর দায় তাদেরই নিতে হবে।

তাহলে কি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় দায়ী? এর জবাবে হাবিবে মিল্লাত বলেন, মন্ত্রী ও সচিবের কথা অনুযায়ী তো তাই হয়। তবে আমরা বলেছি বিষয়টি দ্রুত পরিষ্কার করতে। এর সঙ্গে সরকারের ভাবমূর্তি জড়িত।

বৈঠকে আলোচনার সূত্রপাত করেন কমিটির সদস্য ডা. হাবিবে মিল্লাত। তিনি মন্ত্রণালয়ের কাছে বিষয়টির ব্যাখ্যা দাবি করেন। এ সময় মন্ত্রী বলেন, এটা আমাদের বিষয় না। আমরা গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে কাজ দিয়েছি। তাদের কাছ থেকে কাজ বুঝে নেওয়ার আগে আমাদের কিছু করার নেই। এ নিয়ে আদালতে রিট ও দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বৈঠক সূত্রে আরও জানা যায়, মন্ত্রীর কাছে ব্যাখ্যা দাবি করলে বৈঠকে মন্ত্রী বলেন, এটা নিয়ে বসে থাকলে তো চলবে না। আমাদের তো কাজ শেষ করতে হবে।

বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করার পাশাপশি ভবিষতে একই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে কমিটি। জবাবে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে হলেও অবকাঠামো ও প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় গৃহায়ন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত পিডব্লিউডির মাধ্যমে। ফলে সেখানে তদারকি করার অধিকার আমাদের নেই।

কমিটিকে আরো জানানো হয়, প্রকল্পের দুর্নীতির বিষয়ে দু’টি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে, সেই প্রতিবেদন হাতে পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া এ বিষয়ে আদালতে দুটি মামলা হয়েছে। আদালতের রায় পেলে তা বাস্তবায়ন করবে মন্ত্রণালয়।

সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি ডা. আ ফ ম রুহুল হক। কমিটির সদস্য ইকবালুর রহিম, ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত, মোজাফফর হোসেন, শিরীন আহমেদ, সেলিমা আহমাদ এবং হাবিবা রহমান খান বৈঠকে অংশ নেন। বিশেষ আমন্ত্রণে বৈঠকে যোগ দেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান।

বৈঠক সূত্র জানায়, রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্রে কেনাকাটায় দুর্নীতি নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। কমিটির সদস্য হাবিবে মিল্লাত বিষয়টি বৈঠকে উত্থাপন করে বলেন, একটি বালিশের দাম ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা এবং তা ওঠানোর খরচ ৭৬০ টাকা কিভাবে হয়?

কমিটির সভাপতি ডা. আ ফ ম রূহুল হক এ বিষয়ে বৈঠকে উপস্থিত বিজ্ঞানমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান ও মন্ত্রণালয়ের সচিব আনোয়ার হোসেনের কাছে ব্যাখ্যা চান।

মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আবাসনের জন্য ২১টি ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রের কর্মকর্তারা ওইসব ভবনে থাকবেন। এসব ভবন নির্মাণের কাজ করছে গণপূর্ত বিভাগ। তারা তাদের মতো করে কাজ করছে। বিজ্ঞান মন্ত্রণালয় শুধু প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিচ্ছে।

কমিটি প্রশ্ন রাখে, গণপূর্ত নিজেদের ইচ্ছামত খরচ করবে আর বিজ্ঞান মন্ত্রণালয় তদারক করবে না? জবাবে বিজ্ঞান মন্ত্রণালয় বলেছে, এটি তদারক করতে হলে আলাদা প্রকৌশল বিভাগ প্রয়োজন হবে, সেটা নেই। তাছাড়া পূর্ত বিভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠান, এখানে তাদের কাজ সেভাবে তদারক করার সুযোগও নেই। এই কাজ তারা করছে, কোনো ধরনের অডিট আপত্তি এলে তার জবাবও পূর্ত বিভাগকে দিতে হবে।