নিসর্গ ও নিঃসঙ্গতার লেখক রাসকিন বন্ড
'লেখকের কাজ শুধু লেখা। সারাদিন বই প্রমোশন, প্রচার, সোশ্যাল নেটওয়ার্কেই যদি তিনি ব্যস্ত থাকবেন, তিনি লিখবেন কখন আর ভাববেন কখন?'
এমন কথা বলতে পারেন একজনই। তিনি রাসকিন বন্ড। ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত ভারতীয় লেখক। বংশ ছাড়া আর সব কিছু তার ভারতীয়। জন্ম পাঞ্জাবে। পিতা ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের অফিসার ছিলেন। রাসকিন পড়াশোনা করেছেন সিমলা ও দেরাদুনের বোডিং স্কুলে।
ভারতের আপার-নর্থ বা হিমালয়ান অঞ্চলটি রাসকিন বন্ডের নখদর্পণে। নিজের লেখায় অনুপম ভাষায় ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি হিমালয়ে প্রকৃতি, নিসর্গ ও নিথর নিঃসঙ্গতা। এ কারণে দুটি উক্তি তার সম্পর্কে স্বতঃসিদ্ধ ভাষ্যে পরিণত হয়েছে: ১) রাসকিন বন্ড নিঃসঙ্গতাকে কথা বলিয়েছেন তার লেখায়; ২) যদি হিমালয়ে না গিয়েও হিমালয় দেখতে চাও তো রাসকিন বন্ডের বই পড়ো।
বন্ডের লেখা নিয়ে বিখ্যাত ভারতীয় পরিচালক শ্যাম বেনেগাল চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছে। বিশাল ভরতরাজও ছবি বানিয়েছেন বন্ডের বই 'ব্লু আমব্রেলা' অবলম্বনে, যাতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া। এসব ছবিতে নানা আখ্যান থাকলেও শিশুদের অধিকারের বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। বন্ড নিজেকে শিশু সাহিত্যিক বলতেই পছন্দ করেন সবচেয়ে বেশি।
অল্প বয়সে বাবা মারা যাওয়ার কিছুদিন পর তার মা আরেকজনকে বিয়ে করে চলে যাওয়ায় বন্ডের শিশুমনে যে ক্ষত ও বেদনা তৈরি হয়েছিল, তা তিনি কখনোই ভুলতে পারেন নি। শিশুর অধিকার ও মনস্তাপ সে কারণেই তীব্রভাবে উদ্ভাসিত হয়েছে তার লেখায়।
ফলে ইংরেজিতে লেখালেখি করলেও রাসকিন বন্ডকে বিবেচনা করা হয় সর্বভারতীয় শিশু সাহিত্য বিকাশের অন্যতম পথিকৃৎ রূপে। একই সঙ্গে তাকে প্রকৃতি-ঘনিষ্ঠ লেখকের মর্যাদাও দেওয়া হয়।
ভারতের সাহিত্য একাডেমি, পদ্মভূষণ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রণী সম্মাননা পেলেও রাসকিন বন্ড জীবন কাটান নিঃসঙ্গভাবে এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে। উত্তর ভারতের হিমালয় সংলগ্ন হিলটাউন মুসৌরীতে তিনি একটি সাজানো বাড়িতে থাকেন আর সার্বক্ষণিক লেখালেখি করেন। লেখালেখিই তার নেশা ও পেশা।
প্রতি সপ্তাহে শনিবারে এক ঘণ্টার জন্য একটি বইয়ের দোকানে আসেন রাসকিন বন্ড। লোকজন দেখা করতে বা অন্য কারণে ঐ সময়টুকু ছাড়া তাকে পান না। এতোটাই নিয়মনিষ্ঠ ও কঠোর জীবনযাপন করতে অভ্যস্ত কিংবদন্তী তুল্য রাসকিন বন্ড।
এহেন রাসকিন বন্ডের সম্পর্কে মধ্য আশি দশকে আমাকে জানান কবি ও ভারত বিচিত্রা সম্পাদক বেলাল চৌধুরী। ভারতের টেলিগ্রাফ পত্রিকার সানডে ম্যাগাজিনে বন্ডকে নিয়ে রচিত একটি প্রচ্ছদ কাহিনী অনুবাদ করতে দিয়েছিলেন বেলাল ভাই। সেই সূত্রে রাসকিন বন্ডকে জানা। আর তখন থেকেই বন্ড আমার অন্যতম প্রিয় লেখক। তার লেখা ও তার সম্পর্কে লেখা পেলে পড়ার অভ্যাস আমার তখন থেকেই।
আজ (১৯ মে) রাসকিন বন্ডের ৮৫তম জন্মদিন। প্রিয় লেখককে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।