সাঙ্গ হলো বাঙালির প্রাণের বইমেলা

  • মানসুরা চামেলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

অমর একুশে গ্রন্থমেলার শেষ দিনে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ/ ছবি: সৈয়দ মেহেদী

অমর একুশে গ্রন্থমেলার শেষ দিনে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ/ ছবি: সৈয়দ মেহেদী

দুই দিন আগে যেখানে বিদায়ের সুর উঠেছিল, সেই সুর টেনে নিয়ে আজ শেষ হলো বাঙালির প্রাণের আসর ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০১৯’। তবে মেলার বিদায় লগ্নে ভিড় ছিলো না তেমন। উপস্থিত লেখক, পাঠক, প্রকাশক- সবার মাঝে ছিল বিদায়ের সুর,  ছিল এক বছর অপেক্ষার ক্ষণগণনা।  

মাসব্যাপী লেখক-পাঠক-ক্রেতা-প্রকাশকের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছিল বাংলা একাডেমির মেলা প্রাঙ্গণ। বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে জমে উঠেছিলো আড্ডা, আলোচনা জমজমাট আসর।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Mar/02/1551542326430.jpg

বর্তমানের এই সাইবার যুগে সোশ্যাল মিডিয়ায় বুদ হয়ে থাকা মানুষের মাঝে প্রাণের সঞ্চার এনেছিলো এই বইমেলা। পুরো মাস জুড়ে ছিলো নতুন বইয়ের পাতা উল্টে ঘ্রাণ নেওয়ার উন্মাদনা।

স্বাধীনতার পর থেকে ভাষা আন্দোলনের অমর স্মৃতিকে স্মরণ করতে ও বাংলা ভাষার সৃজনশীল ধারাকে ছড়িয়ে দিতে বাংলা একাডেমি নিয়মিতভাবে আয়োজন করে আসছে এ মেলার।

পুরো ভাষার মাস জুড়ে সারাদেশে অনুষ্ঠিত হয় বাঙালির প্রাণের এ উৎসব। তবে এবারের মেলা বৃষ্টির কবলে পড়ায় লেখক-প্রশাসকদের দাবির প্রেক্ষিতে দুই দিন সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয় আয়োজক কর্তৃপক্ষ।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Mar/02/1551542397645.jpg

মাসব্যাপী এই বইমেলায় শুরু থেকে তরুণদের উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো। যেখানে সবার বদ্ধমূল ধারণা, তরুণদের মধ্য থেকে বই পড়ার অভ্যাস উঠে গেছে।  তরুণরা রাত-দিন মোবাইল ফোন বা কম্পিউটারে গেমস নিয়ে পড়ে থাকে। সেই তরুণদের পদচারণায় মুখরিত ছিলো মেলা প্রাঙ্গণ। বন্ধুদের নিয়ে হই-হুল্লোড় করে ঘুরে বেরিয়েছেন বইমেলায়, হাতে করে ফিরেছেন পছন্দের লেখকের বইটি নিয়ে।

মেলা শেষ হওয়ায় আজ সেই তরুণ পাঠকটির মনেও প্রস্থানের সুর। শেষ দিনে মেলায় এসেছেন সিটি কলেজের শিক্ষার্থী জাকিয়া সিথি। বললেন, তার বই মেলার অনুভূতি।

‘বন্ধুদের সঙ্গে তিনবার মেলায় এসেছি। বেশ কয়েকটি বই সংগ্রহ করেছি। বইমেলায় আসলে কেন জানি প্রাণ খুলে ঘুরে বেড়াতে পারি। সারাবছর পাঠ্যবই ছাড়া বই তেমন পড়া হয় না। কিন্তু বইমেলা আসলে আমি অনেক বই পড়ে ফেলি।’

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Mar/02/1551542416001.jpg

বিদায় বেলায় লেখক-প্রকাশকদের দাবি, আগামী বছর আবারও এ মেলা নতুন নতুন প্রকাশনা নিয়ে ফিরে আসবে। বাড়বে পরিসর। মেলাকে কেন্দ্র করে সৃষ্টি হবে নতুন নতুন পাঠক। প্রযুক্তি দুনিয়া থেকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও বই হাতে নেবে মানুষ।

মেলার শেষদিনে ভিড় তেমন না হলেও যারা এসেছিলেন তাদের মধ্যে ছিল শেষ মুহূর্তের কেনাকাটার তাড়াহুড়া। স্টলে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিক্রয়কর্মীদের মাঝেও ছিল ব্যস্ততার ছাপ। আর তরুণ লেখকরাও ব্যস্ত সময় পার করেছেন নিজের বইটি পাঠকদের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে।

গ্রন্থমেলার শেষদিন শনিবার (২ মার্চ) সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় সকাল ১১টায় খুলে যায় মেলার দ্বার। এরপর থেকেই বইপ্রেমীরা ভিড় জমাতে শুরু করেন মেলার দুই প্রাঙ্গণেই। শিশু প্রহর হওয়ায় বাবা-মা ও বড়দের সাথে মেলায় এসেছিলো ছোট্ট শিশুরা। তাদের কলতানে মুখরিত ছিলো শেষ শিশু প্রহরটি।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Mar/02/1551542549319.jpg

প্রযুক্তির যুগে এসেও কাগজের মলাটের বইয়ে মানুষের রয়েছে প্রাণের টান। বই এখন আর কেউ পড়ে না- এমন আক্ষেপ থাকলেও প্রতিবছর কিন্তু বইমেলাকে কেন্দ্র করে যেমন নতুন ছাপা বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি তৈরি হচ্ছে নতুন লেখকও। এ বছর নতুন বই এসেছে চার হাজার ৮৩৪টি। সবচেয়ে বেশি এসেছ কবিতার বই। প্রবীণ-নবীন কবি মিলিয়ে কবিতা এসেছে ১৬০৮টি, উপন্যাস ৬৯৮টি, গল্প ৭৫৭টি।

এছাড়া প্রবন্ধ ২৭২, ছড়া ১৪৮, গবেষণা ৮০, শিশুতোষ ১৫০, জীবনী ১৬২, ভ্রমণ ৮৫, বিজ্ঞান ৭৭, ইতিহাস ৭৭, মুক্তিযুদ্ধ ১১০, বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ৪৫, রম্য/ধাঁধা ২৮, ধর্মীয় ২৫, নাটক ৪৩, কম্পিউটার ৫, অনুবাদ ৩৮, রচনাবলী  ১৫,  অভিধান ৬, রাজনীতি ৩৩টি এবং অন্যান্য বিষয়ের উপর এসেছে ৩৩০টি নতুন বই।