বসন্তের সন্ধ্যায় বইমেলায় উপচে পড়া ভিড়
অমর একুশে গ্রন্থমেলা থেকে: কথায় আছে উৎসবপ্রিয় বাঙালির বারো মাসে তের পার্বণ। জাঁকজমকভাবে উৎসব পালন আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। উৎসবপ্রিয় বাঙালির একটি প্রাণের উৎসব অমর একুশে গ্রন্থমেলা। মাসব্যাপী চলা গ্রন্থমেলায় নতুন রং ছড়িয়েছে বসন্ত। বসন্তের সন্ধ্যায় দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়ে টইটুম্বুর গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণ।
প্রকৃতির নিয়মতান্ত্রিকতায় এসেছে বসন্ত। কয়েকদিন থেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ভেসে এসেছিল কোকিলের ডাক। গভীরভাবে কান পাতলেই তবে সে ডাক শোনা যায়। কেননা অমর একুশে গ্রন্থমেলার তথ্য জানানোর শব্দযন্ত্রের কাছে সে ডাক অনেকেই শুনতে পান না। তবে আজ বুধবার সকালে ইট-পাথরের নগরিতে শহুরে মানুষের বাসন্তী সাজ জানান দিচ্ছে- 'বসন্ত এসে গেছে...।'
রুক্ষ-শুস্ক ঋতু শীতকে বিদায় করে হাজির হচ্ছে ঋতুরাজ বসন্ত। বসন্তের 'মাতাল সমীরণ'-এ নিজেদের রাঙিয়ে নিতে সকাল থেকেই ছেলেরা লাল হলুদ পাঞ্জাবি, মেয়েরা হলুদ বাসন্তী রং শাড়ি পড়ে, মাথায় ফু্লের টয়রা দিয়ে বেরিয়েছে প্রিয়জনের হাতধরে।
বিকালের দিকে সকল বয়সী মানুষের স্রোত নামে বাংলা একাডেমির গ্রন্থমেলা অভিমুখে। ৩টার দিকে মেলার গেট খুলে দেওয়া হলে সন্ধ্যার আগেই গ্রন্থমেলা জন-অরণ্য। পাঠক দর্শকদের ব্যাপক আগমনে প্রকাশক, বিক্রেতারাও দারুণ ব্যস্ত হয়ে উঠে।
প্রকাশকদের প্রত্যাশা আজ পহেলা ফাল্গুন তো বটেই, আগামীকাল বৃহস্পতিবার ভালোবাসা দিবসেও নামবে পাঠকের ঢল।
জানতে চাইলে অন্যপ্রকাশের বিক্রেতা অনিক চক্রবর্তী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘স্বাভাবিক দিনের চেয়ে কিছুটা বেচাকেনা বেশি। যাদের বেশিরভাগই মেয়ে। আমাদের আশা ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে মেলা কাল আরও জমে উঠবে।’
মেলায় এতোদিন ঘুরতে এলেও আজকেই বই কিনেছেন বাসন্তী রঙের শাড়ি পরে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অবিন্তা রহমান। বার্তা২৪.কমকে তিনি বলেন, ‘আজকের দিনটাই অন্যরকম। বিশেষ কিছু। আজকের দিনে বই কিনবো বলে অনেক আগে ঠিক করে রেখেছিলাম।‘
আরেক দশনার্থী রকিবুল আলম বললেন, 'বিকাল থেকে মেলা ঘুরে দেখছি। পছন্দ হলে বই কিনবো। কেননা ভালোবাসা দিবসের দিনও আসার ইচ্ছা আছে মেলায়।'
গ্রন্থমেলার ১৩তম দিনে মেলায় আজ নতুন বই এসেছে ১৭২টি। বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় কবি রফিক আজাদ: শ্রদ্ধাঞ্জলি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন কবি অসীম সাহা, কবি ফারুক মাহমুদ ও কবি জাফর আহমদ রাশেদ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কথাসাহিত্যিক রশীদ হায়দার।
এছাড়া লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন প্রকাশিত গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন শহীদ ইকবাল, মণিকা চক্রবর্তী, সঞ্জীব পুরোহিত, ফারুক সুমন এবং আহম্মেদ শরীফ।
কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠ করেন কবি মুহাম্মদ সামাদ এবং টোকন ঠাকুর।
আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী রফিকুল ইসলাম এবং নাসিমা খান বকুল। সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফেরদৌস আরা, কাজী মুয়ীদ শাহরিয়ার সিরাজ জয়, মিজান মাহমুদ রাজীব, ফারহানা শিরিন এবং তানজিনা করিম স্বরলিপি। নৃত্য পরিবেশন করেন সৌন্দর্য প্রিয়দর্শিনী ঝুম্পার পরিচালনায় নৃত্য সংগঠন ‘জলতরঙ্গ ডান্স কোম্পানি’-এর নৃত্যশিল্পীবৃন্দ।