স্বপ্নপর্বের তিন কাহন
স্বপ্নপর্ব ১
নুরনাহার বানু ঘরে ঢুকেই চমকে উঠলেন!
দেখেন, তার স্বামী আবদুর রশীদ পাটোয়ারী বারান্দায় মুরগি কোলে নিয়ে বসে আছেন।
এমত দৃশ্যে যে কোনো মানুষেরই চমকে ওঠার কথা।
স্থবির নুরনাহার বানু ঘরের মাঝখানে দাঁড়িয়ে ভাবার চেষ্টা করলেন, বাড়িতে কী হচ্ছে এসব!
প্রথমে তিনি ভেবেছিলেন, তার স্বামীর কোলে কাপড়ের পোঁটলা। মাঝেমধ্যে রশীদ পাটোয়ারী গরম লাগলে গায়ের চাদর, শাল কিংবা সোয়েটার খুলে পোঁটলা করে কোলের ওপর রাখেন। দূর থেকে মনে হতে পারে, একটুকরো অন্ধকার কোলে নিয়ে বসে আছেন তিনি। আজও তাই ভেবেছিলেন, কিন্তু দৃশ্যের ভেতরে তৃতীয় প্রাণীর উপস্থিতি টের পেয়ে মুরগি কক্ কক্ করে ডেকে উঠলে এমত ভ্রম ভেঙে যায় নুরনাহার বানুর।
মুরগী জানান দেয়, ‘কাপড়ের পোঁটলা নয়, অন্ধকারও নয়। আমি, আমি বসে আছি তোমার স্বামীর কোলে। অসুবিধা আছে?’
নুরনাহার বানুর বিস্ময়ের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। বাসায় তো মুরগি পালা হয় না। তাছাড়া এপার্টমেন্ট বাড়িতে সে সুযোগও নেই। তাহলে এ-ধরনের কথা বলা মুরগি এলো কোত্থেকে? বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান নুরনাহার বানু।
তখন সন্ধ্যাবেলা।
বারান্দায় আলো আঁধারির দ্বিধাদ্বন্দ্বের ভেতর আবদুর রশীদ পাটোয়ারী দোল-চেয়ারে মুরগি কোলে নিয়ে দোল খাচ্ছেন। তাঁর চোখ বন্ধ। ছায়ার মতো নিঃশব্দে পেছনে এসে দাঁড়ান নুরনাহার বানু। দেখেন, তাঁর স্বামীর কোলের ভেতর মুরগিটিও পরম নিশ্চিন্তে চোখ বুজে আছে। এমতাবস্থায় তার কী করা উচিত সহসা বুঝে উঠতে পারলেন না তিনি। তবে এরকম দৃশ্য অমরত্বের দাবি রাখে। একথা মনে হতে না হতেই তিনি নিঃশব্দে স্বামীর পেছন থেকে সরে আসেন।
‘বৌমা, ও বৌমা দরজা খোলো।’
একটু আগে বাইরে থেকে ফিরে নিজের ঘরে কাপড় পাল্টাচ্ছিল পুত্রবধু ঋতু। দরজা খুলে দিতেই নুরনাহার বানু ফিসফিস করে বলেন, তাড়াতাড়ি ক্যামেরা নিয়ে আসো বৌমা। একটা ছবি তুলতে হবে, এমন দৃশ্য জীবনেও পাবে না।
বারান্দার দৃশ্যটির দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে ঋতু। তারপর অবাক বিস্ময়ে জানতে চায়, বাবার কী হয়েছে? ওরকম কোলের মধ্যে মুরগি নিয়ে বসে আছেন কেন?
এসব প্রশ্নের জবাব তাঁর কাছ থেকেই জেনে নিও। এখন বাহাস না করে ঝটপট কয়েকটি ছবি তুলে ফেলো। আজই ফেসবুকে দিতে হবে।
আমি এ ছবি তুলতে পারব না মা। বাবা জানতে পারলে মাইন্ড করবেন। আপনি তোলেন বরং। আপনাকে কিছু বলবেন না।
২.
ঋতুর কথায় কপট রাগ দেখালেন নুরনাহার বানু। বললেন, হয়েছে হয়েছে। তোমাকে বাহাস করতে হবে না। আমিই তুলছি। এই বলে তিনি কয়েকটি ছবি তুলে ফেললেন। আর তখন ক্যামেরার ফ্লাশ জ্বলে উঠতেই মুরগিটি কক্ কক্ শব্দ করে উঠল। আবদুর রশীদ পাটোয়ারী চোখ মেলে তাকালেন। তারপর গুরুগম্ভীর স্বরে বললেন, কী হচ্ছে এসব?
আপনাদের অমর করে রাখার ব্যবস্থা হচ্ছে।
মানে?
আপনাদের দুজনের ছবি তোলা হচ্ছে।
নুরনাহার বানু কিছু বলার আগেই ঋতু বলল, আপনাদের দুজন, মানে আপনার আর মুরগির ছবি তুলেছেন মা। ফেসবুকে দেবেন।
ননসেন্স। আবার চোখ বন্ধ করলেন আবদুর রশীদ পাটোয়ারী।
দৃশ্যটি থেকে ঋতু সরে গেলে স্বামীর পাশে এসে বসেন নুরনাহার বানু।
রাগের পরিবর্তে তার অবয়বে এখন কৌতূহল। ইতোমধ্যে বারান্দার আলো জ্বালানো হয়েছে।
তোমার কি শরীর খারাপ?
না।
মন? মন খারাপ?
না।
এই সন্ধ্যাবেলা বাইরে না গিয়ে বারান্দায় মুরগি কোলে নিয়ে বসে আছো কেন? মুরগি কোথায় পেলে?
মুরগি কোথায় পাওয়া যায়? বাজার থেকে কিনে এনেছি।
মুরগির মাংস খেতে ইচ্ছে করছে?
না।
তাহলে?
এই মুরগি কিছুদিনের মধ্যেই সোনার ডিম পাড়বে। তখন বুঝবে মুরগি কেন কেনা হয়েছে।
আবদুর রশীদ পাটোয়ারী ও নুরনাহার বানুর এই কথপোকথনের সময় মুরগী পুনরায় কক্ কক্ করে উঠলে তাঁদের কথাবার্তা বাধাগ্রস্ত হয়।
নুরনাহার বানু স্বামীর সঙ্গে অযথা তর্কে জড়াতে চান না।
বললেন, তুমি মুরগি মনে করে লাল ঝুঁটিঅলা যাকে কোলে নিয়ে বসে আছো, তাকিয়ে দেখো, তিনি আসলে একজন মোরগ। তার মাথায় সম্রাট আলেকজান্ডারের লালঝুঁটি। মোরগ ডিম পাড়ে না। সোনার ডিম পাড়া তো দূর কি বাৎ হায়।
এ কথায় কিছুটা উদাসীন হয়ে ওঠেন আবদুর রশীদ পাটোয়ারী।
বললেন, মোরগ হোক আর মুরগি হোক কথা একই।
একই মানে, মোরগ আর মুরগি এক কথা হলো?
৩.
একই কথা। কারণ, মুরগি এখানে একটি প্রতীকমাত্র। এখন আমাকে বিরক্ত না করে আমার সামনে থেকে দূর হও।
নুরনাহার বানু কোনো কিছুর সঙ্গে কোনো কিছুই মেলাতে পারছেন না আর। তিনি স্বপ্ন দেখছেন না তো? কোনো কোনো সন্ধ্যায় ইদানীং এমন হচ্ছে। বাস্তব ব্যাপারগুলোকে স্বপ্ন মনে হয়। স্বপ্নগুলোকে বাস্তব! কেমন একটা ঘোর ঘোর লাগে। এই যেমন এখন লাগছে। তাঁর স্বামী আবদুর রশীদ পাটোয়ারী কি দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছেন?
ঋতু বলল, বাবা পাগল হবেন কেন? তিনি ভালো আছেন। নাথিং রং উইথ হিম।
কী বলছো বৌমা! দেখলে না, সন্ধ্যাবেলা তোমার শ্বশুরবাবাজি কোলের মধ্যে লাল ঝুঁটিওয়ালা একটি মোরগ নিয়ে বসে আছেন।
কী যে বলেন মা!
তাহলে আমি কি ভুল কিছু দেখলাম? কী জানি, হবে হয়তো।
স্বপ্নপর্ব ২
তখন অন্ধকার।
অমাবশ্যার রাত্রির কালো থাবা চারদিকে।
আমি ছুটছি। গন্তব্য বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। নদী নালা খাল বিল বন-বাদাড় পেরিয়ে অবশেষে দৌলতদিয়া ফেরিঘাট। এসে শুনি, কারা যেন বলাবলি করছে, পাটুরিয়া ঘাট থেকে ছেড়ে মাঝনদীতে আটকা পড়েছে ফেরি। আজ রাতে তো হবেই না, কাল সকালে ফেরির দেখা মিললেও মিলতে পারে। তখন তোমার শাশুড়িআম্মা, তিনি হঠাৎ দৃশ্যের ভেতর উদয় হলেন, বললেন, চলেন হেঁটে নদী পার হই।
আমরা পাটুরিয়া ঘাটে এসে উঠলাম। তারপর আবার ঢাকার পথে দৌড়।
রাস্তায় চেকপোস্টে আমাদের থামানো হলো বার-কয়েক। পকেটে যা ছিল দিয়ে দিতে হলো। এরপর যেন দোজখের পুলসিরাত, এটা পার হতে পারলেই আপাতত ঝামেলা শেষ। আমরা তখন শেরেবাংলা নগরের কাছাকাছি। হঠাৎ দেখি, আমার পাশ থেকে নুরনাহার বানু উধাও। অথচ সাতচল্লিশ বছর আগে যখন কোর্টে বিয়ে করি, তখন আমাদের মধ্যে ডিল হয়েছিল, আমরা বিপদে-আপদে কেউ কাউকে ছেড়ে যাব না।
আম্মার এই কাজটি করা ঠিক হয়নি। ঋতু বলল, আই মিন, আপনাকে ওইভাবে একা ফেলে রেখে...
কথার মধ্যে বা’হাত দিও না বৌমা।
কোথায় যাচ্ছেন? রাতের ঘুটঘুটে অন্ধকারেও কালো চশমা পরা লোকটা জানতে চাইল। চেকপোস্টে তার পাশে আরো চারজন। বললাম, ঢাকা যাচ্ছি।
আপনি ঢাকায়ই আছেন।
ও।
৪.
আপনার চাদরের নিচে নড়াচড়া করছে ওটা কী?
মনে হলো, লোকটা অন্ধকারেও আমার নাড়িভুঁড়ি দেখতে পাচ্ছে। এখন কোনো ধরনের রাখঢাক করা ঠিক হবে না।
বললাম, মুরগি।
অন্ধকারের ভেতর সাদা দাঁত দেখে মনে হলো, লোকটা হাসল।
মুরগি? মুরগি মানে? আপনি এত রাতে মুরগি নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?
যাচ্ছি নির্বাচন কমিশন অফিসে। মুরগি প্রতীক বরাদ্দ নিতে। অফিসটা তো কাছাকাছি কোথাও?
লোকটা প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বরং আমার কথায় বেকুবের মতো হাসল আবার।
পাশ থেকে ওই চারজনের একজন বলল, স্যার, মুরগিটা রেখে দেব?
এই, মুরগি রাখবে মানে? আমাকে চেনো? আমি একজন রিটায়ার্ড সচিব, আমার সঙ্গে ফাজলামো হচ্ছে?
না স্যার। আপনার মুরগি আপনার কাছেই রাখুন। তবে ওই যে অফিসটার কথা বললেন, ওটা এখন আর ওখানে নেই। কোথায় গেছে কেউ বলতে পারে না।
আপনারা জানেন না? তাহলে চাকুরি করছেন কেন?
সবার পক্ষে তো আর সবকিছু জানা সম্ভব নয় স্যার। এই যেমন ধরুন, আপনিও জানেন না স্যার ওই অফিসটা কোথায় গেছে! কিংবা আপনার বাড়িটি এখান থেকে ঠিক কত কিলোমিটার দূরে।
তা ঠিক। মনে মনে ভাবলাম, এই অসময়ে এদের সঙ্গে তর্কে জড়ানো মোটেই সঙ্গত নয়। বললাম, আমি এখন যেতে পারি।
জ্বি মুরুব্বি, আপনি এখন যেতে পারেন। কালো চশমাওয়ালার পাশে দাঁড়ানো লোকটা বলে উঠল। একটু আগে এই লোকটাই তো মুরগিটা রেখে দেবার কথা বলছিল।
আবার দৌড়। রাস্তাঘাট শূন্য বলা চলে। মনুষ্যপ্রাণীর টিকিটিও দেখা যাচ্ছে না কোথাও। একসময় মনে হলো, আমি রাস্তাঘাট সব হারিয়ে ফেলেছি। ক্রমশ অচেনা হয়ে উঠছে সবকিছু। তবে অন্ধকার আর নেই, এখন আমার চারপাশ ঘিরে আছে ঘন কুয়াশা। আর সহসাই সেই জমাটবাঁধা কুয়াশায়, যেন স্বপ্নের ভেতরে আরেক স্বপ্নের মতো ভেসে উঠল বাড়িটি। আমি আনন্দে প্রায় চিৎকার করে উঠলাম, নির্বাচন কমিশন!
তবে আমি অবাক হলাম। বাড়িটিকে মনে হলো একটি ভূতুড়ে বাড়ি। কোথাও কোনো লোকজন নেই। পুরো সাইনবোর্ড ধুলোর আস্তরণে ঢাকা। দু একটি বর্ণ উঁকি দিচ্ছে মাত্র। পরিত্যক্ত পোড়োবাড়ি যেন। ফিল্মে ভূতের বাড়ি যেমন হয়। চারদিক মাকড়শার জালে ঘেরা। যেন দীর্ঘকাল সংস্কারের অভাবে এখন একটি কংকালের মতো। বাড়ির কাঠামো আছে ঠিকই, তবে ভেতরে বাড়িটি নেই।
বাবা আপনি ভয় পেলেন না? ঋতু বলল, আমার তো শুনেই হাত পা হিম হয়ে আসছে!
বৌমা, তোমাকে কতবার বলব, কথার মধ্যে বা’হাত দিও না।
মাকড়শার জাল সরিয়ে ভেতরে ঢুকতেই নির্বাচন কমিশনার অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার শা’দত আলী খানের অফিস।
৫.
তিনি অফিসে নেই। এই মুহূর্তে ‘বাংলা ভাষা উন্নয়নে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা’ শীর্ষক টক শো-তে ব্যস্ত আছেন । তবে তাঁর চেয়ারে একখানা পাথরের মূর্তি বসিয়ে রেখে গেছেন। আমি বসলাম মূর্তির বিপরীতে। আমাদের মাঝখানে ধাতব টেবিল, শূন্য। ধুলোয় ধুলোময়।
হোয়াট ড্যু ইউ ওয়ান্ট? কথা বলে উঠলেন পাথুরে শা’দত আলী খান।
প্রতীক বরাদ্দের জন্যে এসেছি।
হোয়াট ড্যু ইউ মিন? দিস ইজ নট অ্যান ইলেকশন টাইম। ইউ হ্যাভ টু ওয়েট এনাদার টু টু থ্রি ইয়ারর্স।
তা হোক। আমি এখন থেকেই প্রচারাভিযান চালাতে চাই। অসুবিধা আছে?
নো। ফ্রম মাই সাইড, নো প্রব্লেম অ্যাট অল। হোয়াট সিম্বল ড্যু ইউ ওয়ান্ট? এন্ড ফ্রম হুইজ পার্টি?
মুরগি। মুরগি মার্কা নিয়ে দাঁড়াতে চাই। কোনো দল থেকে না। আমি জানি, বড় দল আমাকে নমিনেশন দেবে না।
এই সময় আমি চাদরের ভেতর থেকে বের করে মুরগিটিকে ধাতব টেবিলের ওপর বসতে দিলাম। বেচারা এতদূর জার্নি করে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে।
টেল মি ওয়ান থিং, হোয়াই ইউ ওয়ান্ট টু চুজ চিকেন এ্যাজ ইওর সিম্বল?
কারণ একবার এমপি হতে পারলে অই মুরগি প্রতিদিন একটা করে সোনার ডিম পাড়বে। বছরে ৩৬৫টি সোনার ডিম। পাঁচ বছরে ৩৬৫ * ৫ = ১৮২৫টি। ভাবা যায়! তার ওপর কাবিখা, টেন্ডার বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য, নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য, তদবির বাণিজ্য এসব উপরি তো আছেই।
আই সি।
মুরগি প্রতীক বরাদ্দে আপনার কোনো সমস্যা আছে?
নো।
যদি না থাকে তাহলে আমাকে প্রতীক বরাদ্দ করুন, আমি চলে যাই।
ওকে।
ঠিক এ-সময় মুরগিটি ধাতব টেবিলের ওপর হাগু করে দেয়, যা শা’দত আলী খানকে সহসা উত্তেজিত করে তোলে।
নাউ ক্লিন দ্য টেবল এন্ড গেট লস্ট।
আমি পকেট থেকে রুমাল বের করে মুরগির হাগু পরিষ্কার করে পকেটে রাখলাম।
মুরগির হাগু পকেটে রাখার কথা শুনে ঋতু বলল, ইয়াক্!
ইয়াক্ ইয়াক্ করছো কেন? বিদেশে দেখেছি, মানুষ কফের দলা, কুকুরের হাগু পকেটে নিয়ে ঘোরে, যেখানে সেখানে ফেলে না।
শা’দত আলী খানের রাগত চোখ তখনও আমার দিকে।
বললাম, ভাষার মাসে আপনি আমার সঙ্গে ইংরেজি না বললেও পারতেন।
৬.
ভাষার মাস, সো হোয়াট! আই হ্যাভ টু সে বাংলা উইথ ইউ? হোয়াট ক্যান ইউ ড্যু ইফ আই স্পিক ইংলিশ? মাই ফ্রেন্ড বিগ্রেডিয়ার হরিদাশ পাল, নাউ রিটায়ার্ড, ওয়েন্ট টু চিটাগং শহীদ মিনার উইথ হিজ স্যুজ অন। নাথিং হ্যাপেন্ড টু হিম আফটারওয়ার্ড। আই এম ডান উইথ ইউ, নাউ গেট লস্ট।
স্বপ্নপর্ব ৩
অতি প্রত্যুষে দূর থেকে আবদুর রশীদ পাটোয়ারী দেখেন, তাঁর এপার্টমেন্ট ভবনের সামনের রাস্তা লোকে লোকারণ্য। এম্বুলেন্স, র্যাব-পুলিশের গাড়ি, টিভি চ্যানেল, সাংবাদিক, দোকানদার, ঝাড়ুদার, গোয়েন্দা, উৎসুক মানুষের ভিড় সব মিলিয়ে যেন একাকার পুরো এলাকা। কী হচ্ছে কিছুই বোঝার উপায় নেই। তবে একটা কিছু যে হয়েছে তা নিশ্চিত। এই ভিড় ঠেলে ওদিকে না যাওয়াই সাব্যস্ত করেন আবদুর রশীদ পাটোয়ারী।
একজন পথচারীকে এগিয়ে আসতে দেখে তাঁর উদ্বেগ কিছুটা কমে যায়।
কী হয়েছে ওখানে? জানতে চাইলেন রশীদ পাটোয়ারী।
এমন কিছু না। ও বাড়ির এক সাহেব গুম হয়েছেন।
বলেন কী! কী নাম তার জানেন?
আমি ভাই অতো-শত জানি না। তবে শুনলাম, সাহেব কাল সন্ধ্যায় মুরগি নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আর ঘরে ফেরেননি। গুম হয়ে গেছেন।
কারা তাকে গুম করল শুনেছেন কিছু?
কাল সন্ধ্যার একটু পরে কালো মাইক্রোবাসে সাদা পোশাকে ছয়জন লোক তাঁকে ওই বাড়ির সামনের থেকে তুলে নিয়ে গেছে। পাশের এপার্টমেন্টের বারান্দা থেকে মিজান নামে একজন সব দেখেছে। সবার হাতে তাক করা ছিল আগ্নেয়াস্ত্র।
কী ভয়ঙ্কর!
আবদুর রশীদ পাটোয়ারী এখন বারান্দার দোল-চেয়ারে বসে স্মরণে আনার চেষ্টা করছেন, কারা তাঁকে গুম করল! কিংবা গতকাল সন্ধ্যার পর আদৌ তিনি গুম হয়েছিলেন কিনা!