প্রাদেশিক সরকার, পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা প্রবর্তন ও নির্বাচন পদ্ধতির সংস্কারকে গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় পার্টির নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন করা হচ্ছে। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং এরশাদের প্রেস ও পলিটিক্যাল সেক্রেটারি সুনীল শুভরায়।
বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করতে চাই। এখন ছোট একটি কাজের জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ঢাকায় আসতে হয়। এই দুর্ভোগ বন্ধ করার জন্য প্রাদেশিক ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হবে। এই ব্যবস্থার প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে তৃণমূল পর্যায় থেকে প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবিদ গড়ে তোলা, প্রশাসনকে জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যাওয়া এবং বিচার ব্যবস্থাকে সহজ করা।
দেশকে আটটি প্রদেশে বিভক্ত করা হবে। উত্তরের ৮ জেলা নিয়ে রঙ্গপুর প্রদেশ, রাজধানী রংপুর। রাজশাহী বিভাগের জেলাগুলোকে নিয়ে গঠিত হবে বরেন্দ্র প্রদেশ। রাজধানী শহর হবে রাজশাহী। ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, জামালপুর ও শেরপুর নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর প্রদেশ। এ প্রদেশের রাজধানী থাকবে ময়মনসিংহ।
সিলেট বিভাগের ৪ জেলা নিয়ে হবে জালালাবাদ প্রদেশ। সিলেটে থাকবে রাজধানী। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলা নিয়ে গঠিত হবে চট্টলা প্রদেশ। ময়নামতি প্রদেশে থাকবে ফেনী, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, চাঁদপুর, কুমিল্লা ও ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা। রাজধানী থাকবে কুমিল্লায়।
জাহানাবাদ প্রদেশ গঠিত হবে খুলনা, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, মাগুরা, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, যশোর, নড়াইল, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট নিয়ে। প্রাদেশিক রাজধানী স্থাপিত হবে খুলনায়। বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ভোলা ও বরগুনা জেলা নিয়ে গঠিত হবে চন্দ্রদ্বীপ প্রদেশ। এর রাজধানী হবে বরিশাল।
সুনীল শুভরায় বলেন, এ কথা প্রমাণিত হয়েছে উপজেলা ব্যবস্থা খুবই প্রয়োজনীয় ছিলো। বিএনপি এসে বাতিল করলেও আওয়ামী লীগ আবার চালু করেছে। কিন্তু জাতীয় পার্টির যে পূর্ণাঙ্গ উপজেলা ব্যবস্থা সেটি আর ফিরিয়ে আনা হয়নি। এখন নামে আছে কারযকর উপজেলা নেই।
আগে উপজেলা পর্যায়ে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট ছিলো তখন মানুষের বিচার পাওয়া সহজ ছিলো। এখন জেলা শহরে যেতে হয় সেই বিচারের জন্য। এতে বিচারপ্রার্থীদের বিড়ম্বনা বেড়ে গেছে। আবার মামলার জটও তৈরি হয়েছে। বছরের পর বছর ধরনা দিতে হচ্ছে বিচারপ্রার্থীদের। জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় গেলে উপজেলায় আবার কোর্ট ফিরিয়ে আনা হবে। এ ছাড়া জনপ্রতিনিধিদের হাতে পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা প্রদান করা হবে।
দারিদ্র নিরসন ও কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হলে শিল্পায়ন জরুরি। জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় এলে উত্তবঙ্গে গ্যাসের পাইপলাইন স্থাপন করা হবে। এতে শিল্পায়ন হলে মানুষের কর্মসংস্থান হবে। তাদের জীবনমান উন্নয়ন।
জাতীয় পার্টির নির্বাচনী ইশতেহারা সংখ্যালুঘুদের জন্য ৩০ টি আসন সংরক্ষিত করার কথা থাকছে বলে জানান সুনীল শুভরায়।
যোগাযোগ ব্যবস্থার বিষয়ে বলা হয়েছে, আন্তজেলা মহাসড়ক থেকে এক কিলোমিটার কিংবা তার কম দূরত্বে সামান্তরালে পাকা রাস্তা নির্মাণ করা হবে। এসব সড়কে রিকশা ভ্যান, বাস ও অন্যান্য যানবাহন চলবে। এই সড়কের আশপাশে হাটবাজার বসতে পারবে। মহাসড়কে হাটবাজার বসতে দেওয়া হবে না। নারায়নগঞ্জের পাগলায় আধুনিক লঞ্চ টার্মিনাল স্থাপন করা হবে।
ক্ষমতায় গেলে অনুন্নত এলাকায় শিল্প স্থাপনে বিশেষ হ্রাসকৃত সুদে ব্যাংক ঋণ ও ১০ বছর পর্যন্ত ট্যাক্স হলিডে দেবে জাতীয় পার্টি। ঢাকা থেকে ৫০ শতাংশ সরকারি প্রতিষ্ঠানের হেড অফিস সরিয়ে ঢাকার বাইরে নেওয়া হবে।
খেলাধুলার বিকাশে প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খেলার মাঠ থাকা বাধ্যতামুলক করা হবে। খেলার মাঠ বিহীন প্রতিষ্ঠানকে বিশেষত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়কে চলতে দেওয়া হবে না।
সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও মাদক সমুলে নির্মূল করার ঘোষণা থাকছে জাতীয় পার্টির নির্বাচনী ইশতেহারে।