বরিশালের মিয়াবাড়ি মসজিদ

  • সিদ্দিকুর রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বরিশালের কড়াপুরের ঐতিহ্যবাহী মিয়াবাড়ি মসজিদ/ ছবি: বার্তা২৪.কম

বরিশালের কড়াপুরের ঐতিহ্যবাহী মিয়াবাড়ি মসজিদ/ ছবি: বার্তা২৪.কম

প্রাচীন কারুকাজ খচিত ব্রিটিশ আমলের সূচনালগ্নে নির্মিত কড়াপুর মিয়াবাড়ি মসজিদটি বরিশালের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। শহরের পশ্চিমদিকে বরিশাল-কড়াপুর সড়ক সংলগ্ন মিয়াবাড়িতে দেশের এই প্রাচীন মসজিদটি অবস্থিত।

তাছাড়া বর্তমানে ভ্রমণপিপাসু মানুষগুলো প্রাচীন মুঘল আমলে নির্মিত এই মসজিদ দেখতে প্রায়ই ছুটে আসছেন। তবে মসজিদটি দেখতে যাওয়ার যে সড়কটি রয়েছে, তার অবস্থা খুবই নাজুক।

বিজ্ঞাপন

বরিশাল-কড়াপুর সড়কের বাইপাস এই সড়কটি এতই করুন দশা যে, প্রাচীন ঐতিহ্যে বহনকারী এই মসজিদটি দেখতে আসা দর্শনার্থীদের প্রায়শই বিড়ম্বনা এবং ছোটখাট দুর্ঘটনায় পড়তে হচ্ছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/11/1547209465640.gif

সরেজমিনে দেখা যায়, কড়াপুর মিয়াবাড়ী মসজিদ দেখতে যাওয়ার একমাত্র সড়কটি এখনো ইটের সলিং দেওয়া। প্রতিদিন ঐ রাস্তা দিয়ে গ্রামের প্রায় কয়েক শতাধিক মানুষ যাতায়াত করেন।

প্রতিদিনই কোনো না কোনো দুর্ঘটনায় পড়তে হচ্ছে তাদেরকে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আশ্বাসের পরও এই রাস্তাটি এখনো কার্পেটিং হচ্ছে না বলে জানান এলাকাবাসী।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল আজিজ বলেন, ‘মুঘল আমলে নির্মিত মসজিদটি এই অঞ্চলের প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি দেখতে দূরদূরান্ত থেকে প্রতিনিয়ত মানুষ জন ছুটে আসছেন।’

‘কিন্তু যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই সড়কটি সংস্কারের অভাবে দিন দিন যাতায়াতের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে।’ এ সময় তিনি মসজিদটি দেখতে আসা সড়কটির পুনসংস্কারের দাবি জানান।

বরিশাল সদরের উত্তর কড়াপুর গ্রামে আঠারো শতকে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয় বলে ধারণা করা হয়। সম্প্রতি কড়াপুর মিয়াবাড়ি মসজিদটি রঙ করা হয়েছে এবং বর্তমানে এটির মেরামত কার্যক্রম অব্যাহত আছে।

আয়তক্ষেত্রকার এই মসজিদটির উপরিভাগে তিনটি গম্বুজ রয়েছে, যেগুলোর মধ্যে মাঝখানের গম্বুজটি অন্য দুটি গম্বুজের চেয়ে আকারে কিছুটা বড়। শুধু বাহিরের অংশেই নয়, মসজিদের ভেতরে প্রতিটি গম্বুজেই রয়েছে সুনিপুণ কারুকাজ।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/11/1547209494619.gif

কড়াপুর মিয়াবাড়ি মসজিদের সামনে ও পেছনের দেয়ালে মোট আটটি মিনার রয়েছে। এছাড়া দেয়ালের ওপর আরো ২০টি ছোট মিনারও রয়েছে।

মসজিদের উপরিভাগ ও মিনারে কারুকাজ করা হয়েছে। উঁচু বেসম্যান্টের ওপর এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদে প্রবেশ করার জন্য দোতলায় একটি প্রশস্ত সিঁড়িও রয়েছে।

সিড়ির নিচে দুটি বাঁধানো কবর রয়েছে। কিন্তু এই কবর দুটি কাদের সেটা আজও জানেন না ঐ এলাকার মানুষ। মসজিদের সামনে ও পেছনে দুটি বড় দিঘিও রয়েছে।

এছাড়া নীচতলায় কয়েকটি কক্ষে সংস্কারের কাজ চলমান। সেগুলো মসজিদের নিকটে অবস্থিত মাদ্রাসার ছাত্রদের থাকার কাজে ব্যবহার করা হবে বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা হায়াত মাহমুদ ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার কারণে প্রিন্স অফ ওয়েলস দ্বীপে নির্বাসিত হন এবং তাঁর বুর্জুগ উমেদপুরের জমিদারিও কেড়ে নেওয়া হয়। দীর্ঘ ষোল বছর পর দেশে ফিরে তিনি দুইটি দিঘি ও দোতলা এই মসজিদটি নির্মাণ করেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jan/11/1547209600546.gif

কিভাবে যাবেন:

বরিশাল লঞ্চঘাট থেকে আলফা-মাহিন্দ্রা বা অটোতে করে সরকারী সৈয়দ হাতেম আলী কলেজ চৌমাথায় যাবেন। ভাড়া জন প্রতি ১০ টাকা। এদিকে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল কিংবা রুপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে একই বাহনে করে চৌমাথা যেতে পারবেন। এরপর সেখান থেকে পশ্চিমের নবগ্রাম রোডে আলফা-মাহিন্দ্রা বা ম্যাজিক গাড়িতে করে পপুলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটু আগে নামতে হবে। এখানে জন প্রতি ভাড়া ২০ টাকা।

এরপর রাস্তার ডান পাশের ছোট বাইপাস সড়ক ধরে দশ মিনিট হাটলেই কড়াপুর মিয়া বাড়ি মসজিদে পৌঁছে যাবেন। এছাড়াও আলফা-মাহিন্দ্রা কিংবা অটো রিজার্ভ করে আপনি সেখানে যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা।