‘এক পাক আর্মি, এক গুলি’

  • ড. কাজী নাজিব হাসান
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কমান্ডার শহীদ কাজী সালাউদ্দিন, ছবি: সংগৃহীত

কমান্ডার শহীদ কাজী সালাউদ্দিন, ছবি: সংগৃহীত

১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর ফরিদপুরের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এদিন ‘সালাউদ্দিন গ্রুপের’ কমান্ডার শহীদ কাজী সালাউদ্দিনসহ ৬ যোদ্ধা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন।

জানা গেছে, ৯ ডিসেম্বর দুপুর ১২টার দিকে যশোর-ফরিদপুর সড়কের করিমপুর এলাকায় এক পাকিস্তানি ক্যাপ্টেন সেনাবাহিনীর একটি জিপ নিয়ে ঢুকে পরেন। এই খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী সালাউদ্দিন ও তার সহযোদ্ধা শহীদ মেজবাহ উদ্দিন নউফেল, কাজী ফরিদসহ আরও অনেকে পাকিস্তানি ওই ক্যাপ্টেনের ওপর ঝাঁপিয়ে পরেন এবং রক্তে ভেসে যায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর জিপটি। এ অভিযানের নেতৃত্ব দেন কাজী সালাউদ্দিন।

বিজ্ঞাপন

এ ঘটনার আধাঘণ্টা পর বিষয়টি জানতে পেরে যশোর থেকে আগত সেনা সাঁজোয়া বহর তিন দিক থেকে সালাউদ্দিন বাহিনীর ৩৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে ঘিরে ফেলে। শুরু হয় তুমুল সম্মুখযুদ্ধ। এক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলি ফুরিয়ে আসতে থাকে। তখন কমান্ডার কাজী সালাউদ্দিনের কাছ থেকে নির্দেশ আসে ‘এক পাক আর্মি, এক গুলি’।

এই সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন সালাউদ্দিন বাহিনীর ৬ যোদ্ধা। তারা হলেন- শহীদ নউফেল, শহীদ ওহাব, শহীদ মুজিবর, শহীদ দেলয়ার, শহীদ আদেল ও শহীদ সোহরাব। বাকি সহযোদ্ধাদের বাঁচানোর জন্য নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও সাহসী এই বীর যোদ্ধা এলএমজি দিয়ে ব্রাশফায়ার করতে করতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সামনাসামনি অবস্থান নেন। তার ব্রাশফায়ারের গুলিতে অসংখ্য পাক সেনা রক্তাক্ত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে। সালাউদ্দিনের এই সাহসিকতায় পাকিস্তানি সেনারা এদিক সেদিক ছুটে জীবন বাঁচায়। এরপর পাক সেনারা একত্রিত হয়ে আবার সালাউদ্দিন বাহিনীর ওপর হামলা চালায়।

ততক্ষণে সালাউদ্দিন বাহিনীর কাছে থাকা অস্ত্র-গুলির মজুদ প্রায় শেষ হয়ে যায়। তখন কমান্ডার কাজী সালাউদ্দিনের কাছ থেকে ফের নির্দেশ আসে ‘এক পাক আর্মি, এক গুলি’।

এর কিছুক্ষণ পরে সালাউদ্দিনের নির্দেশে সহযোদ্ধারা জীবন বাঁচাতে নিরাপদ দূরত্বে সরে যান। একা সালাউদ্দিন জীবন বাজি রেখে এলএমজিয়ের ট্রিগার চাপতে থাকেন। এবারো অসংখ্য পাকসেনা হতাহত হয়। পাকিস্তানি সেনারা চারপাশ থেকে হামলা চালাতে থাকে। এমন সময় পাকিস্তানি সেনাদের একটি বুলেটে তার এলএমজিয়ের ম্যাগজিন উড়ে যায়। আর একটি বুলেট তার পিঠে বিদ্ধ হয়। রক্তাক্ত সালাউদ্দিন ৭০০ গজ দূরে একটি বাড়িতে এ আশ্রয় নেন।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সেই বাড়িতে ঢুকে সব মানুষদের গুলি করে হত্যা করে এবং আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। শহীদ হন ২২ বছর বয়সী তরুণ বীরযোদ্ধা কাজী সালাউদ্দিন। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বিজয়ের পর, ১৭ ডিসেম্বর ফরিদপুর হানাদার মুক্ত হলে সেই বাড়িতে শহীদ সালাউদ্দিনের কঙ্কাল শনাক্ত করা হয়। পরে সেদিনই তাকে ফরিদপুরের আলিপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

লেখক: সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, যশোর।