কুমিল্লা নগরীতে পানিবন্দি হাজারো মানুষ

  • জাহিদ পাটোয়ারী, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, কুমিল্লা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বৃষ্টিতে জমে যাওয়া পানি দোকানে প্রবেশ করেছে, ছবি: বার্তা২৪

বৃষ্টিতে জমে যাওয়া পানি দোকানে প্রবেশ করেছে, ছবি: বার্তা২৪

গত দু’দিনের বৃষ্টিতে কুমিল্লা নগরীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজারো মানুষ। পানি নিষ্কাশনের কোনো পরিকল্পনাই কাজে আসছে না। ফলে চলাচলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে নগরবাসীদের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বাজেট বেড়েছে। বাড়েনি নাগরিকদের সুবিধা। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে দীর্ঘদিন ধরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে।

শনিবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যা ও রোববার (১৪ জুলাই) দুপুরের বৃষ্টিতে নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় পানিতে তলিয়ে যায়। একই সঙ্গে নগরীর স্টেডিয়াম রোড, নজরুল অ্যাভিনিউসহ প্রধান সড়ক হাঁটু পানিতে ডুবে যায়। রেইসকোর্স, দ্বিতীয় মুরাদপুর এলাকার বাসা বাড়িতে পানি প্রবেশ করে গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে শত শত পরিবার। বিগত দু'দশক ধরে কুমিল্লা শহরের বিভিন্ন স্থানে এমন জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে আসছে।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/14/1563115896200.jpg

রোববার বিকেলে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় লাকসাম রোড, নজরুল অ্যাভিনিউ, জিলা স্কুল-স্টেডিয়াম রোড, বাদুরতলা, ডাক্তারপাড়া, তালপুকুর রোড, ফয়জুন্নেছা স্কুল রোড, শিক্ষাবোর্ড এলাকা, টমসম ব্রিজ এলাকা, উত্তর চর্থা, দক্ষিণ চর্থা, ঢুলিপাড়া, থিরাপুকুর পাড়, নুরপুর হাউজিং, নতুন চৌধুরীপাড়া, ডিসি রোড, মুরাদপুর, পার্ক রোড, রেসকোর্স ও সিটি করপোরেশনের পেছনের সড়কসহ নগরীর বিভিন্ন স্থান পানিতে তলিয়ে গেছে।

ড্রেন থাকা স্বত্ত্বেও পানি নামছে না। অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে নগরীর বাসা-বাড়ি, দোকান-পাট বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে করে চরম দুর্ভোগে রয়েছে অসংখ্য মানুষ।

আনোয়ার হোসেন নামে কুমিল্লা স্টেডিয়াম মার্কেটের এক ব্যবসায়ী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, কুমিল্লা সিটি কপোরেশনের বাজেট বেড়েছে। বাড়েনি নাগরিকদের সুবিধা। সামান্য বৃষ্টি হলেই স্টেডিয়াম মার্কেটসহ জেলা স্কুল সড়টি কোমর পানিতে তলিয়ে যায়। এ সমস্যা দীর্ঘ দিনের। এর স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।

নগরীর রেইসকোর্স এলাকার বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন রাব্বি বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, সিটি করপোরেশনের মেয়র সাক্কু শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে দু'বার নির্বাচিত হয়েছেন। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আগেও সামান্য বৃষ্টি হলে যেমন রেইসকোর্স এলাকাসহ নগরবাসী পানিবন্দি হয়ে থাকতো, এখন আগের চেয়ে আরও বেশি অবনতি হয়েছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/14/1563115913736.jpg

হাউজিং এলাকার বাসিন্দা নূর উদ্দিন মজুমদার বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে জানান, গত দু’দিনের বৃষ্টিতে কুচাইতলী মেডিকেল কলেজ থেকে হাউজিংয়ের ৪ নম্বর সেকশন পর্যন্ত হাঁটু পানিতে সড়কসহ বাড়ির আঙ্গিনা তলিয়ে গেছে। এর একমাত্র কারণ পরিকল্পিতভাবে ড্রেনেজ ব্যবস্থা না করা এবং নিয়মিত তা পরিষ্কার না করা।

সূত্র জানায়, বিগত দু’বছর ধরে জাপানি উন্নয়ন সংস্থার (জাইকা) অর্থায়নে নগরীর রেসকোর্স, শাসনগাছা, বাগিচাগাঁও, ফায়ার সার্ভিস রোড, কান্দিরপাড় নজরুল অ্যাভিনিউ, রানীরবাজার, অশোকতলা, স্টেশন রোড, পুলিশ লাইন, জেল রোড, ধর্মসাগরের পশ্চিমপাড়, ঝাউতলা, বাদুরতলা, মনোহরপুর, তালপুকুর রোড, ফয়জুন্নেসা স্কুল রোড, ডাক্তার পাড়া, সদর হাসপাতাল রোড, ছাতিপট্টি, রাজগঞ্জ, মোগলটুলীসহ প্রায় একশ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি করপোরেশন বক্স ড্রেন নির্মাণ করলেও এসব ড্রেন পানি নিষ্কাশনে কোনো কাজে আসছে না।

অভিযোগ রয়েছে, সিটি করপোরেশনের সুষ্ঠু তদারকির অভাবে এ সকল ড্রেনের কাজ অনেক স্থানেই অসমাপ্ত পড়ে রয়েছে। আবার বিভিন্ন স্থানে ড্রেনের মাঝখানে বৈদ্যুতিক খুঁটি রেখেই ঠিকাদার ড্রেন নির্মাণ কাজ শেষ করে ফেলেছে। ফলে আবর্জনা জমে পানি চলাচল ব্যহত হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা অজ্ঞাত কারণে সেগুলো দেখেও না দেখার ভান করায় এখন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে।

এ বিষয়ে সিটি মেয়র মো.মনিরুল হক সাক্কু বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে মহা পরিকল্পনা করে ড্রেনের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। কিছু এলাকায় কাজ এখনো বাকি আছে। সম্পূর্ণ কাজ শেষ হলে আর জলাবদ্ধতা থাকবে না।’