ইউনাইটেড ইন্সটিটিউটের প্রতারণায় বিপাকে ৩০ শিক্ষার্থী

  • স্টাফ করেসপন্ডেট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি. বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

ছবি. বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ ইউনাইটেড টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটে বিএসসি (ইঞ্জিনিয়ারিং) কোর্সে ভর্তি হয়েও পরীক্ষা দিতে পারছেন না ৩০ জন শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থীরা ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন। গত ২৭ জুন থেকে রাবির অধীনস্থ অন্য ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোর একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরু হলেও তাদের পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা করেনি ইন্সটিটিউট কর্তৃপক্ষ।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, বিষয়টি নিয়ে তারা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে, তারা কিছু জানেন না উল্লেখ করে ইন্সটিটিউটের ব্যবস্থাপক মেহেদী হাসানের সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন। শিক্ষার্থীরা ব্যবস্থাপকের সঙ্গে দেখা করতে না পেরে একপর্যায়ে মোবাইলে যোগাযোগ করলেও তিনি তাদের কল রিসিভ করেননি।

বিজ্ঞাপন

ফলে বাধ্য হয়ে গত ২ জুলাই ভুক্তভোগীরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শকের দফতরে যান। সেখানে গিয়ে জানতে পারেন, ইন্সটিটিউট থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের রেজিস্ট্রেশন করা হয়নি। ফলে তারা ইন্সটিটিউটে নির্ধারিত ফিস জমা দিয়ে ভর্তি হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নয়। তাদের পরীক্ষা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

ইউনাইটেড ইন্সটিটিউট সূত্র জানায়, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগে ৮ জন, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই)  বিভাগে ৭ জন ও সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ১৫ জন ভর্তি হয়েছিল। তাদের প্রত্যেকের কাছ থেকে ভর্তি বাবদ ১০ হাজার, সেমিস্টার ফিস বাবদ ২০ হাজার টাকা এবং পরীক্ষার ফিস বাবদ ৫ হাজারসহ প্রায় ৪০ হাজার টাকা করে আদায় করা হয়। নিয়মিত ক্লাসও নেওয়া হয়। অথচ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক দফতরে কোনো টাকা জমা দেওয়া হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় তাদের নামে কোনো প্রবেশপত্রও ইস্যু করেনি রাবি কর্তৃপক্ষ।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/13/1563014713603.jpg

ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মো. শামিউল ইসলাম বলেন, আমরা ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন এবং পরীক্ষা ফিস বাবদ প্রায় ৪০ হাজার করে টাকা দিয়েছি। নিয়মিত ক্লাসও করেছি। এখন শুনছি আমাদের রেজিস্ট্রেশন হয়নি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের কোনো নামও নেই। ফলে পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগও নেই।

তিনি আরো বলেন, বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর আমরা ইন্সটিটিউটে গিয়ে টাকা ফেরত চেয়েছি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ভর্তির সময়ে নেওয়া আমদের এইচএসসি’র সার্টিফিকেট ও মার্কসশিট ফেরত দিয়েছে। কোনো টাকা ফেরত দেয়নি। ইন্সটিটিউটের এমডি দেশেও নেই বলে জানিয়েছে।

কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের মো. তায়েব ফারাজি ও সিভিল ইঞ্জিনিয়রিং বিভাগের মারুফ হাসানও একই অভিযোগ করেন। তারা জানান, ভর্তি, রেজিস্ট্রেশন ও পরীক্ষার ফিস বাবদ জমা দেওয়া টাকা ফেরত চাইলে কর্তৃপক্ষ শুধু আশ্বাস দিচ্ছে। তবে আদৌ টাকা ফেরত পাবেন কিনা তা বুঝতে পারছেন না তারা।

এ বিষয়ে জানতে গত ১০ জুলাই পবা উপজেলা পরিষদের দক্ষিণে অবস্থিত ওই ইন্সটিটিউটে গিয়েও মহাব্যবস্থাপক মেহেদী হাসানের দেখা মেলেনি। পরে তার মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও কল রিসিভ করেননি। শনিবার (১৩ জুলাই) দুপুরে ওই ইন্সটিটিউটের রিসিপশনিস্ট নিপা নামে একজন মোবাইলে জানান, ইন্সটিটিউটের এমডি মেহেদী হাসান দেশে নেই। কবে আসবেন তাও তিনি বলতে পারেন না।

শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন না হওয়া এবং টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আসলে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ হওয়া প্রতি বছর নবায়ন করতে হয়। টাকার অভাবে নবায়ন করা সম্ভব হয়নি। শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন না হওয়ায় ভর্তি হতে পারছে না।’ তবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের টাকা এমডি ফেরত দিতে চেয়েছেন বলে জানান তিনি।

জানতে চাইলে রাবির কলেজ পরিদর্শক অধ্যাপক এম. মজিবুর রহমান বলেন, ‘ওই ইন্সটিটিউট গত তিন বছর বিএসসি শাখার কোনো নবায়ন ফিস জমা দেয়নি। তারা শিক্ষার্থী ভর্তি করালেও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রেশন হয়নি। ফলে তাদের পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ নেই। আমরা ইউনাইটেড ইন্সটিটিউটের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। শীঘ্রই তাদের অনুমোদন বাতিল করা হবে।