দারিদ্র্য জয় করে পুলিশ কনস্টেবলে চাকরি

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, রাজশাহী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নিয়োগপ্রাপ্ত নারী ও পুরুষ কনস্টেবল, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

নিয়োগপ্রাপ্ত নারী ও পুরুষ কনস্টেবল, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

রাজশাহী নগীরর রাজপাড়া থানার চন্ডিপুরে খাস জমিতে কুঁড়েঘর তুলে মায়ের সঙ্গে থাকেন ইভা খাতুন। শৈশবে তাদের ছেড়ে আরেক বিয়ে করে ঘর বেঁধেছেন বাবা। তারপর থেকে মানুষের বাসায় কাজ করে সংসার ও লেখাপড়ার খরচ যুগিয়েছেন তার মা।

মানুষের বাড়িতে কাজ করে পাওয়া অর্থে ১০০ টাকার ব্যাংক ড্রাফট আর ৩ টাকার ফরম কিনে পুলিশ কনস্টেবল পদে আবেদন করেন ইভা। সব ধাপ পেরিয়ে রোববার (০৭) সন্ধ্যায় চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

নাম ঘোষণার পর ঢুকরে কেঁদে ওঠেন ইভা। তিনি বলেন, ‘আমার মায়ের কষ্ট সার্থক হয়েছে। আমি কোনো লবিং-ঘুষ বাদেই পুলিশে চাকরি পেয়েছি। আমার জীবনে আর কোনো চাওয়া নেই। শুধু আজীবন সততার সাথে দেশের সেবা করে যেতে চাই।’

রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রাজশাহী পুলিশ লাইনস মাঠে রিক্রুট পুলিশ কনস্টেবল পদের ফলাফল ঘোষণা করেন রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. শহিদুল্লাহ। ৪৪ জন পুরুষ ও ৪৪ জন নারীকে চূড়ান্ত নিয়োগ করা হয়। ফলাফল ঘোষণার সময় সেখানে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অনেকেই ঢুকরে কেঁদে ওঠেন।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Jul/08/1562550638280.jpg

বাগমারা উপজেলার ঝিকরা গ্রামের এতিম হাবিবুর রহমান তাদের একজন। চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হবার পর কাঁদছিলেন তিনি। বলছিলেন, ‘অনেক আাগেই আমার বাবা মারা গেছেন। ছোট ভাইটা প্রতিবন্ধী। সংসার চালানোর জন্য কৃষিকাজের পাশাপাশি লেখাপড়াটা কষ্ট করে চালিয়ে আসছিলাম। আজ তার ফল পেলাম। আমার কষ্ট ও পরিশ্রম সার্থক হয়েছে।’

মোহনপুর উপজেলার বেড়াবাড়ি গ্রামের ভ্যান চালকের ছেলে মো. সাজীবও পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পেয়েছেন। অনুভূতি জানতে চাইলে বলেন, ‘অনেকেই বলছিল এবার কোনো ঘুষ লাগবে না। সেই ভরসা নিয়ে আবেদন করেছিলাম। ১০৩ টাকা ছাড়া এক পয়সাও লাগেনি। আমার নাম ঘোষণার পর আমি আব্বাকে ফোন করে নিয়োগ পাওয়ার কথা বলছি কিন্তু তিনি কিছুতেই বিশ্বাসই করছেন না, যে তার ছেলে পুলিশে চাকরি পেয়েছে।’

ফলাফল ঘোষণাকালে পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ‘সার্কুলারের পর থেকে চূড়ান্ত ফলাফল পর্যন্ত প্রতিটা ধাপ শতভাগ স্বচ্ছতার সাথে সম্পন্ন হয়েছে। শুধুমাত্র মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে প্রত্যেককে নির্বাচিত করা হয়েছে। আগে থেকে দালাল ও প্রতারক চক্র যাতে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে না পারে, সেজন্য ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছিল।’

তিনি বলেন, ‘আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি- যে ৮৮ জন প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছে, তাদের কারও ১০৩ টাকার এক পয়সাও বেশি লাগে নি। তাই আমরা ঘুষ ও প্রতারকদের দৌরাত্ম্যমুক্ত পুলিশ কনস্টেবল রিক্রুটমেন্টের যে ঘোষণা দিয়েছিলাম, তা সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। আশা করি- যারা স্বচ্ছতার সঙ্গে নির্বাচিত হলো, তারা প্রত্যেকে শতভাগ সততার সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে।’