বরখাস্ত হওয়া পুলিশের ডিআইজি মিজানুর রহমান মিজান ও দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের ফোনালাপের ঘটনা তদন্তে সাক্ষ্যগ্রহণে দুই সাংবাদিককে সাক্ষী ও দু'ধরনের নোটিশ দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যা বার্তা২৪.কমকে বলেছেন, আমরা দুজন সাংবাদিককে দুধরনের চিঠি দিয়েছি। টাইপিং মিসটেকের কারণে চিঠি দু রকম হয়েছে। দিপু সারোয়ারকে পাঠানো নোটিশটিই সঠিক। এটিএন নিউজের সুমনকে পাঠানো চিঠিটি ভুল ছিলো। সুমনের চিঠিতে একটা লাইন ওঠেনি।’
বুধবার (২৬ জুন) ফোনে বার্তা২৪.কমকে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘তিনিতো (সাংবাদিকরা) অভিযোগকারী না, সাক্ষী। তাকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ডাকা হয়েছে। তিনি শুধু বলবেন, হ্যাঁ আমি রিপোর্টটা করেছি। তাছাড়া আমাদের আর কোনো তথ্য জানার থাকলে তার কাছে জানতে চাইব। তিনি যদি না আসেন তাহলে তার কিছুই হবে না। কতজন সাক্ষীকে আমরা ডেকে থাকি। তারা তো সবাই আসেন না। তাদের বিরুদ্ধে কী কখনও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ? না আসলে সর্বোচ্চ আমরা তার অথরিটিকে জানাতে পারি, তাকে ডেকেছিলাম তিনি আসেন নাই। এ ছাড়া আর কিছু না। আইনানুক ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টা শুধুই ফরমালিটি।’
আরও পড়ুন: সাংবাদিককে নোটিশ পাঠানো দুদক কর্মকর্তাকে শোকজ
চিঠি দুটো থেকে জানা যায়, সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো চিঠিতে দুদক বানানটিও ভুল লিখেছেন তারা। চিঠিতে দুদককে 'দদক' বানিয়ে 'দর্নীতি দমন কমিশন' হিসেবে লেখা হয়েছে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, দুদক পরিচালক শেখ ফানাফিল্যার নেতৃত্বে গঠিত ডিআইজি মিজান ও দুদক পরিচালক এনামুল বাছিরের ঘুষ লেনদেনের ঘটনায় গঠিত তিন সদস্যের টিমটিতে অনুসন্ধানের দায়িত্ব পালনকারী অপর সদস্যরা হলেন, দুদকের সহকারী পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান ও সালাহউদ্দিন আহমেদ।
জানা যায়, দুদক পরিচালক ফানাফিল্যার স্বাক্ষরিত চিঠিতে এটিএন নিউজের প্রতিবেদক আরিফ সুমন এবং বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ প্রতিনিধি দিপু সারোয়ারকে দুদকে হাজির হয়ে সাক্ষী দিতে বলা হয়েছে। দিপু সারোয়ারের কাছে দুদকের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দুদকে হাজির না হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ যা অপর সাংবাদিকের কাছে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ নেই।
আরও পড়ুন: দুদক কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের বিক্ষোভ
এ বিষয়ে সাংবাদিক দিপু সারোয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে কোনো ধরণের মিথ্যা বা উদ্দেশ্যমূলক কিছু নেই। যদি এ ধরনের কোনো তথ্য থাকে তাহলে যার বিরুদ্ধে অভিযোগ বা যাকে নিয়ে অভিযোগ সে প্রথমে আমার পত্রিকায় প্রতিবাদ পাঠাতে পারেন। কিন্তু তারা এটা না করে আমার বিরুদ্ধে সরাসরি আইনি ব্যবস্থা নেবে এমন কথা বলেছে। যে তথ্য প্রমাণ পেয়ে পুলিশ ও দুদকের দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হলো সে তথ্য দেওয়ার কারণে একজন রিপোর্টারকে আইনের আওতায় আনার অধিকার তারা রাখে না। তাদের চিঠি দেখে মনে হচ্ছে তারা আমার প্রতি সমন জারি করেছে। আমি কী তাহলে দুর্নীতি তুলে ধরে ভুল করেছি?’
এটিএন নিউজ এর সাংবাদিক ইমরান হোসেন সুমন বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আমি তাদেরকে কী সাক্ষী দেবো? আমার সাক্ষ্য আমার প্রতিবেদনে দেওয়া আছে। তারা আমার কাছে সহযোগিতা চাইতে পারে। আমি তাদের কাছে যেতে বাধ্য নই।’
এদিকে, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এমন বিতর্কিত বক্তব্যে ক্ষেপে উঠেছে সাংবাদিক সমাজ। প্রতিবাদে দুদকের সামনে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীরা।