পুঠিয়ায় কার্ডধারী কৃষক সেজে গুদামে ধান দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা!

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ধান বিক্রি করা কার্ডধারীদের অধিকাংশই আড়তদার, ছবি: বার্তা২৪

ধান বিক্রি করা কার্ডধারীদের অধিকাংশই আড়তদার, ছবি: বার্তা২৪

রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় আড়তদারদের কার্ডধারী কৃষক সাজিয়ে তাদের থেকে ধান ক্রয় করে গুদামে দিচ্ছে প্রশাসন। এ নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন উপজেলার কৃষকরা। তবে প্রশাসন বলছে- অনেক ব্যবসায়ীও পেশায় কৃষক হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হচ্ছে।

জানা যায়, শনিবার (২৫ মে) বেলা ১১টার দিকে পুঠিয়া পৌরসভার ঝলমলিয়া বাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে ধান ক্রয় কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। ধান ক্রয় অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ওলিউজ্জামান ও উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিলিটি) জালাল উদ্দীন সরর্দার উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

সেখানে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের নামে ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের কাছ থেকে ধান কেনে প্রশাসন। কৃষকরা ধান দিতে গেলে কার্ডধারী ছাড়া কারও কাছ থেকে ধান নেওয়া হবে না বলে জানানো হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/May/25/1558787244100.jpg
সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ শুরু, ছবি: বার্তা২৪

শফিকুল আলম নামের এক কৃষক বার্তা২৪.কম-কে অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রশাসনের ধান কেনার বিষয়টি জেনে তিনি সেখানে ধান নিয়ে যান। কিন্তু তার ধান নেননি তারা। কৃষক শফিকুল কারণ জিজ্ঞেস করলে প্রশাসনের লোকজন তাকে জানায়- ‘কার্ডধারী কৃষকদের কাছ থেকে শুধু ধান নেওয়া হচ্ছে।’

শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ওখানে যারা ধান দিচ্ছে, তাদের অধিকাংশই আমাদের চেনা-জানা। তাদের মাঠে কোনো চাষাবাদ নেই। ঝলমলিয়া বাজারে তাদের আড়ত আছে। ধান কিনে আড়তে রাখেন। তারাই কার্ডধারী কৃষক সেজে ধান বিক্রি করছে। আর আমরা বাধ্য হয়ে আড়তদারদের কাছেই ধান বিক্রি করছি।’

আব্দুল ওয়াহাব নামে আরেক কৃষক বলেন, ‘ধান ক্রয় কর্মসূচি প্রশাসনের ফটোসেশন ছাড়া কিছুই না। সাংবাদিকদের সামনে আজ যারা ধান বিক্রি করল, তারা ব্যবসায়ী এটা সবাই জানে। অথচ ক্যামেরার সামনে তারা হঠাৎ কার্ড বের করে কার্ডধারী কৃষক হয়ে গেল।’

কৃষক রঞ্জু বলেন, ‘ধান নিচ্ছে আড়তদারদের। আমরা ধান নিয়ে এসে ওখানে (গুদামে) দিতে না পেরে বাধ্য হয়ে আড়তে দিলাম। মণপ্রতি দেড়শো টাকা কমে বিক্রি করতে হল। আমাদের কাছ থেকে প্রশাসন গুদামে দেওয়ার জন্য ধান কিনল আমরা মনপ্রতি দেড়শো টাকা লাভবান হতে পারতাম।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করেন উপজেলা খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জালাল উদ্দীন সরর্দার বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমরা নিয়ম মেনেই ধান কিনেছি। অনেক সময় দেখা যায়- কৃষকরাই ব্যবসায়ী হতে পারে। সেক্ষেত্রে তার কাছ থেকে আমি যখন ধান কিনছি, অন্যরা তখন ভাবতে পারে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কিনছি। বিষয়টি আসলে তেমন নয়, এ নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করা হচ্ছে।’

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য ক্রয় কমিটির সভাপতি মো. ওলিউজ্জামান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘খাদ্য গুদামে ধান সরবরাহে স্থানীয় কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে আজ ঝলমলিয়া হাটে ধান কেনা হয়। কৃষি বিভাগের তালিকা অনুসারে ধান কেনা হয়েছে।’ তবে এতে যদি কোনো অভিযোগ থাকে তাহলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ইউএনও।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর সূত্র জানায়, চলতি বছর পুঠিয়া উপজেলার স্থানীয় কৃষকদের নিকট থেকে ১ হাজার ৪০ টাকা মণ দরে ৮৮ মেট্রিকটন ধান ক্রয় করা হবে।