রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বাসিন্দা আমিরুল ইসলামের ছেলে আলিফ হোসেন। উপজেলার আড়ানী পৌর এলাকায় থাকে তারা। দেড় কাঠা জমির উপর নির্মিত বাড়িটুকুই তাদের শেষ সম্বল। এক ঘরে আলিফ ও অন্য ঘরে বাব-মা ও ছোট বোন থাকে।
দীর্ঘদিন ধরে আলিফের বাবা অসুস্থ। তার মা প্রতিদিন আড়ানী স্টেশনে চা বিক্রি করেন। তা থেকে যা আয় হয়, সেই অর্থে চারজনের সংসার চলে না। তাই বাধ্য হয়েই ভ্যান চালাতে শুরু করে আলিফ। তাও প্রায় ৪ বছর হয়ে গেল। কিন্তু প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকায় ভ্যান চালানোর পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে যায় সে।
আলিফ নিয়মিত ক্লাস করতে পারবে না এমন চিন্তা থেকে বাঘা উপজেলার পার্শ্ববর্তী নাটোরের বাগাতিপাড়ায় অবস্থিত তকিনগর আইডিয়াল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি হয়। এই প্রতিষ্ঠানটি কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে। সেখান থেকে ফুড প্রসেসিং অ্যান্ড প্রিজার্ভেশন বিষয় নিয়ে চলতি বছর এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়।
পরীক্ষার মধ্যেও ভ্যান চালিয়েছে আলিফ। সোমবার (০৬ মে) এসএসসির ফল প্রকাশ করা হয়। সে জিপিএ-৪.১১ পেয়ে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।
আলিফের বাবা আমিরুল ইসলাম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘আলিফ যেটুকু পড়েছে, তা নিজের চেষ্টায়। আমরা কিছুই করতে পারিনি। ছেলেটা আমার না খেয়েও পরীক্ষা দিতে গেছে। পরীক্ষা দিয়ে এসে আবার বিকেলে ভ্যান চালিয়েছে। ওকে পড়াতে মন চায়। তবে আমি অসুস্থ হয়ে পড়ে আছি বিছানায়।’
আলিফ বলে, ‘ঠিকমতো ক্লাস করতে পারিনি। বাড়িতে পড়ালেখার তেমন পরিবেশও নেই। সারাদিন কাজ করে রাতে পড়া খুব কষ্ট। তবে আল্লাহর রহমতে যে রেজাল্ট হয়েছে, তাতে আমি খুশি। আগামীতে আরও ভালো করতে চাই। দোয়া করবেন আপনারা।’
আলিফ আরও বলে, ‘এখন একটাই চিন্তা কীভাবে কলেজে ভর্তি হব। আমি পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চাই। বাবা-মায়ের এতো কষ্ট, নিজের কষ্ট, সব দূর করতে চাই। কেউ যদি আর্থিকভাবে একটু সহযোগিতা করত, তবে ভ্যান চালানোর কাজ বাদ দিয়ে স্টেশনে দোকান দিতাম। মায়ের চা বিক্রির কাজটি সবাই মিলে করতে পারতাম।’
আড়ানী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক রাজ বলেন, ‘আমরা আলিফের পরিবারকে পৌরসভা থেকে সহযোগিতা করার সাধ্যমতো চেষ্টা করব।’