খুলনার ৯০ শতাংশ ভবন অগ্নি ঝুঁকিতে

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

খুলনা মহানগরীতে অধিকাংশ আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনেই নেই অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা, নেই ফায়ার সার্ভিসের ছাড়পত্রও। ফলে এসব ভবনে বাড়ছে অগ্নি ঝুঁকি। অগ্নি ঝুঁকি মাথায় নিয়েই বসবাস করছেন নগরবাসী।

অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিশ্চিত না করেই খুলনা নগরীতে গড়ে উঠছে একের পর এক বহুতল বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন। অপরদিকে অগ্নিনির্বাপণের জন্য আধুনিক গাড়ি ও সরঞ্জাম নেই ফায়ার সার্ভিস বিভাগেরও। ফলে এসব ভবনে অগ্নিকাণ্ড ঘটলে ব্যাপক হতাহতের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।

ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, খুলনা মহানগরীর ৯০ শতাংশ  ভবনে অগ্নি নিরাপত্তার কোন ব্যবস্থা নেই। এ বিষয়ে কেডিএ, কেসিসি, জেলা প্রশাসনের দপ্তরে দফায় দফায় পত্র চালাচালি করেও কোন সুরাহা হয়নি। 

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Apr/04/1554330327059.jpg

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স খুলনার উপ-পরিচালক আবুল হোসেন বার্তা২৪.কম কে বলেন, ‘খুলনা মহানগরীর বহুতল ভবনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ভবনের সংখ্যা বাড়লেও আমাদের সরঞ্জাম পাল্লা দিয়ে বাড়েনি। এখনও পুরনো সেই সরঞ্জাম নিয়ে আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। ফলে বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড হলে আমাদের তা নিয়ন্ত্রনে আনতে বেগ পেতে হয়। রাজধানীর মতো অগ্নিকাণ্ড হলে তা সামাল দেয়া আমাদের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পরবে। এ বিষয়ে বার বার কেন্দ্রে নতুন সরঞ্জামের চাহিদা পাঠালেও কাজ হয়নি’।  

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সুউচ্চ মই যুক্ত একটি গাড়ি রয়েছে। সেটিও অনেক পুরাতন, যা দিয়ে আমরা সর্বোচ্চ পাঁচতলা পর্যন্ত কভার করতে পারি। এছাড়া আমাদের বিভাগে রয়েছে জনবল সংকটও। খুলনা মহানগরীতে মোট ৫টি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে মাত্র ১০০ কর্মী আছে। এত কম জনবল দিয়ে কোনোভাবেই নগরী ঝুঁকিমুক্ত থাকা সম্ভব নয়।

ভবনে অগ্নি ঝুঁকি দেখার দায়িত্ব কার এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল হোসেন বলেন, ‘ভবন নির্মাণের সময় ফায়ার সার্ভিস থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারনে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) একের একের পর এক বহুতল ভবনের অনুমতি দিলেও তারা ফায়ার সার্ভিস এর ছাড়পত্র দেখেনা। ফায়ার সার্ভিস এর ছাড়পত্র ছাড়াই অনেক ভবন গড়ে উঠছে। আমরা সুউচ্চ ভবন তৈরীর সময় একটি পরামর্শ দেই। তা বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব কেডিএ’র। আর নির্মাণ শেষে আমাদের কাছে আবার ছাড়পত্র নেয়ার নিয়ম রয়েছে, কিন্তু কেউ তা নেয় না।

বিজ্ঞাপন

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Apr/04/1554330353261.jpg

এছাড়া সরকারি সংস্থাগুলোর তদারকি এবং ভবন নির্মাণের দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ের অভাবে ঝুঁকি বাড়ছে বলে ধারণা করছেন নগরায়ন বিশেষজ্ঞরা।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুল ইসলাম বার্তা২৪.কম কে বলেন, ‘খুলনায় ভবন নির্মাণের দায়িত্বে থাকা খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (কেডিএ) সাথে অন্য সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতার কারনে ঝুঁকি বাড়ছে অনেকাংশে। বড় ধরনের বিপদের ঝুঁকি বাড়ছে দিন দিন খুলনায়। ঝুঁকিমুক্ত নগরায়নের জন্য কেসিসি-কেডিএ-জেলা প্রশাসন-ফায়ার সার্ভিসসহ সংস্থাগুলোর সমন্বয় প্রয়োজন’।

খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শামীম জেহাদ বার্তা২৪.কম কে বলেন, ‘জনবল সংকটের কারণে নির্মাণাধীন ভবনে নিয়মিত তদারকি করা সম্ভব হচ্ছেনা খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। আর ফায়ার সার্ভিস এর পক্ষ থেকে যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সত্য নয়। বরং কেডিএ’র পক্ষ থেকে বার বার যোগাযোগ করা হলেও ফায়ার সার্ভিস সঠিক সময়ে তাদের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারে না। তবে মহানগরীর অগ্নি ঝুঁকিতে থাকা ভবন চিহ্নিত করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে’।

আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কমিটি একটি সুপারিশমালা পেশ করবে বলে জানান তিনি। তবে কেডিএ কর্তৃপক্ষের কাছে খুলনার বহুতল ভবনের সংখ্যা জানতে চাওয়া হলে কোনো সদুত্তর মেলেনি। কেডিএ কর্তৃপক্ষ নগরীর ভবনের নির্দিষ্ট সংখ্যা দিতে পারেনি।

অপরদিকে, বহুতল ভবনে অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) পক্ষ থেকে এখনও কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে কর্তৃপক্ষের পরিকল্পনায় নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি আছে। যদিও এ বিষয়ে দেশের বড় শহর গুলির সিটি কর্পোরেশন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি অভিযান শুরু করেছে।