গ্যাড়াকলে বরিশাল শিল্পনগরীর উদ্যোক্তারা

  • সিদ্দিকুর রহমান, ডিস্ট্রিক করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

গ্যাড়াকলে বরিশাল শিল্পনগরীর উদ্যোক্তারা। ছবি: বার্তা২৪.কম

গ্যাড়াকলে বরিশাল শিল্পনগরীর উদ্যোক্তারা। ছবি: বার্তা২৪.কম

শিল্প উন্নয়নের পাশাপাশি বেকারত্ব দূরীকরণের লক্ষ্যে ষাটের দশকে গড়ে উঠেছিল বরিশাল বিসিক শিল্পনগরী। তবে প্রথমদিকে এর যাত্রা ভালোভাবে শুরু হলেও দীর্ঘ ৫৮ বছরেও পূর্ণাঙ্গতা পায়নি এই নগরী।

বর্তমানে অবকাঠামোগত অপর্যাপ্ততা, সংস্কারের অভাব, রাস্তা, পানি-বিদ্যুৎসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত এই শিল্পনগরী। আর এ কারণেই শিল্পনগরীতে বিনিয়োগকারী উদ্যোক্তারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

বিজ্ঞাপন

তাছাড়া বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কার্যক্রম যে ভবনে বসে পরিচালিত হচ্ছে, সেই ভবনটিও অনেকটা জরাজীর্ণ।

মঙ্গলবার (২ অক্টোবর) সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শিল্প নগরীর প্রায় প্রতিটি সড়কের কার্পেটিং উঠে গিয়ে মাটি বের হয়ে গেছে। এর ফলে একটু বৃষ্টিতে প্রতিটি রাস্তায় পানি জমে সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা। পাশাপাশি অনেক জায়গায় ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় দুর্ভোগ পোহাচ্ছে শিল্প নগরীর উদ্যোক্তারা। আর আশপাশের পরিবেশ দেখলে মনে হবে, এটা নামমাত্র শিল্পনগরী। যেই নগরী থেকে আশপাশের পুরো এলাকার উন্নয়ন হবে, কিন্তু সেই শিল্পনগরীর আজ এই জীর্ণদশা!

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) কার্যালয়ের তথ্য মতে, ১৯৬০-৬১ সালে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে নগরীর লাকুটিয়া সড়কের পাশে ১৩০.৬১ একর জমিতে বরিশাল বিসিক শিল্পনগরী গড়ে তোলা হয়। পরে ১৯৮৯ সালে প্রকল্পটি রাজস্ব খাতে স্থানান্তর করা হয়। বিপুল অর্থ ব্যয়ে সেখানে ৪৪৬টি প্লট নির্মাণ করা হয়। আর বর্তমানে শিল্প নগরীতে প্লটের সংখ্যা ৪৭০টি।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Oct/02/1538461670469.jpg

এদিকে শিল্পনগরীতে শিল্প-কলকারখানা স্থাপনের জন্য নির্দিষ্ট ৪৭০টি বিভিন্ন গ্রেডের প্লটের মধ্যে এখনো ৭৫টি ফাঁকা পড়ে আছে। কাগজে-কলমে ৩৭৮টি প্লটের বিপরীতে ১৭৩ টি বিভিন্ন ধরনের শিল্প ইউনিট রয়েছে। কিন্তু এগুলোর মধ্যে বাস্তবিক অর্থেই চালু রয়েছে মাত্র ৮৮টি। আর ১৭টি শিল্প ইউনিট পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এছাড়াও বাস্তবায়নাধীন রয়েছে ৬৮টি শিল্প ইউনিট। কিন্তু বর্তমানে এই নানামুখী সমস্যার কারণে ওই সকল শিল্প ইউনিট আদৌ বাস্তবায়ন হবে কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়।

এদিকে বিসিক কার্যালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, জমির পরিমাণ, অবস্থান ও ধরনভেদে শিল্পনগরীর প্লটগুলোকে ৪টি ভাগে ভাগ করা হয়। যার মধ্যে ৩৭.৮৮ শতাংশ আয়তনের এ গ্রেডের প্লটের এককালীন দাম ধরা হয় ১১ লাখ টাকা, ২০.৬৬ শতাংশ আয়তনের বি গ্রেডের প্লটের দাম ৬ লাখ টাকা, ১৩.৭৭ শতাংশের সি গ্রেডের প্লটের দাম ধরা হয় ৪ লাখ টাকা এবং ডি গ্রেডের প্লটের দাম ধরা হয় ২ লাখ টাকা। প্লটের দাম একবারে দিতে না পারলেও ১০% বেশি দিয়ে কিস্তিতে পরিশোধ করার সুযোগ রয়েছে। সবকটি গ্রেডের প্রতি শতাংশের দাম ধরা হয়েছে ২৯ হাজার ৪০ টাকা।

বর্তমানে শিল্পনগরীতে এ গ্রেডের প্লটের সংখ্যা ১৩৪টি, বি গ্রেডের প্লটের সংখ্যা ৮১টি, সি গ্রেডের প্লটের সংখ্যা ৬৪টি, ডি গ্রেডের প্লটের সংখ্যা ১৭৮টি এবং এস (স্পেশাল) গ্রেডে ১৩টি প্লট রয়েছে।

তাছাড়া সুযোগ-সুবিধার ভিওিতে প্লটগুলোতে উন্নত ও অনুন্নত দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে উন্নত ৩৩৭টি ও অনুন্নত ১৩৩টি প্লট রয়েছে। এদিকে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকা প্লটগুলোতে মাদক সেবনকারীদের আড্ডাস্থল এবং গো-চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে।

তবে উদ্যোক্তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে মহাসড়ক কিংবা নদীবন্দর থেকে শিল্পনগরীর দূরত্বের বিষয়টি। মহাসড়ক এবং নদীবন্দর দূরে থাকায় এখানে উৎপাদিত শিল্পপণ্য সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে মালিকদের বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হয়।

তাছাড়া বর্তমানে এখানে চালু থাকা শিল্প কলকারখানাগুলোর মধ্যে খান সন্স টেক্সটাইল মিলস, ফরচুন সু কোম্পানি, বেঙ্গল বিস্কুট লি., মোহাম্মদী ইলেকট্রিক প্রজেক্ট, সুগন্ধা ফ্লাওয়ার মিলস, আজমিরী খাজা বিস্কুট, বরিশাল আয়রন মিলসহ অন্যান্য শিল্প ইউনিটগুলোও চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। তাই বহুমুখী সমস্যার কারণে ইতোমধ্যে অনেকেই তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2018/Oct/02/1538461699108.jpg

বিসিকের একাধিক উদ্যোক্তারা বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘শিল্পনগরীর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার জন্য কখনো কোনো উদ্যোগ নেয়নি। আমরা সকল ধরনের ভ্যাট ও খাজনা দেই , কিন্তু বিপরীতে কিছুই পাইনা। কর্মকর্তাদের অবহেলায় ও সরকারের দৃষ্টিহীনতার কারণে আজ এই শিল্পনগরী ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।’

এ সময় তারা আরও জানান, বিসিক শিল্পনগরীর রাস্তা ঘাটের উন্নয়নের পাশাপাশি যাবতীয় সমস্যাগুলোর সমাধান করা অতি জরুরি। স্থানীয় উৎপাদিত সম্ভাবনাময় পণ্যগুলো যদি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবহার বৃদ্ধি করা যায়, তাহলে এই শিল্পনগরীতে কয়েক লাখ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।

আর এই সকল সমস্যার কথা অকপটে স্বীকার করেন বিসিক শিল্প নগরী কর্মকর্তা মো. খায়রুল বাশার। তিনি বার্তা২৪.কমকে জানান, এতোদিন বরাদ্দের অভাবে উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা দিতে পারেননি। তবে এর বিপরীতে উদ্যোক্তাদের কিছু খামখেয়ালীপনাও রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

তিনি আরও জানান, উদ্যোক্তারা ঠিকমতো রাজস্ব খাতের টাকা পরিশোধ করে না। এর ফলে শিল্পনগরী কর্তৃপক্ষ উদ্যোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী সেবা দিতে পারছে না। তবে চলতি বছরেই শিল্পনগরীর উন্নয়নের জন্য ৫২ কোটি ২০ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। আর ইতোমধ্যে প্রকল্পটি ই-টেন্ডারের পর্যায়ে রয়েছে। তাই টেন্ডার হয়ে গেলে আগামী মাসের মধ্যেই বিসিক শিল্পনগরীর সকল রাস্তার উন্নয়নসহ যাবতীয় সমস্যা সমাধানে কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।