হালিমে মেতে নগর কলকাতা
মূলত শীত মৌসুমের খাবার হলেও রমজান মাসে সারাদিনের রোজার শেষে, ইফতারে হালিমের কোনো বিকল্প নেই কলকাতায়। শুধু মুসলিম সম্প্রদায় কেন, এই মাংস-ডালের টানে মুসলিমদের সঙ্গে রেস্তোরাঁগুলোর সামনে রোজার মাসে লাইন পড়ে অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজনেরও।
শুধু লাইন নয়, অনলাইনেও বিক্রি হচ্ছে হালিম। রোস্তরাঁগুলো দেদারসে অর্ডার পাচ্ছে ফুড ভিত্তিক অ্যাপগুলোয়। কলকাতার নামি রেস্তোরাঁর হালিম পৌঁছে যাচ্ছে দূর-দূরান্তের হালিমপ্রেমীদের হাতে। কলকাতার মল্লিকবাজার, পার্ক সার্কাস থেকে বেকবাগান, খিদিরপুর থেকে মেটিয়াবুরুজ, রাজাবাজার, চাঁদনীচক বিকেল হলেই রমজানে শহরের সর্বত্র একই ছবি, হালিমের জন্য লম্বা লাইন।
পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্ট মোড়ের কাছে আরসালান, মল্লিক বাজারের জিশান, রহমানিয়া, হাজি সাহেব, থেকে চাঁদনীচকের আলিয়া, সাবিরস থেকে চিৎপুরের রয়্যাল। সকলেই তাদের রেস্তোরাঁর সামনে দুপুরের পর থেকে মেলে ধরছে বাহারি হালিম।
বাহারি শামিয়ানার নিচে টেবিলে রাখা বিশাল বিশাল হাঁড়িতে মিলছে মাটন, চিকেনের শাহি, আরবি, ইরানি, হায়দরাবাদি, আফগানি নানা স্বাদের, নানা ধরনের হালিম। দাম গড়ে ১৮০ থেকে ২০০ রুপির মধ্যে।
সুস্বাদু ডালের ভেতর ডুবে থাকা চার থেকে ছয় টুকরোর খাসি বা চিকেন হালিম, ১৫ থেকে ২৫ রুপির রুমালি বা তন্দুরি রুটি, লাচ্ছা পরোটা সহযোগে জমে উঠছে শেষ সময়ের ইফতার। তবে পাড়ার ছোট ছোট দোকানে দাম কম। সেখানে ২৫ থেকে ৩০ রুপি মিলছে হালিম।
অতুলনীয় স্বাদের প্রতিযোগিতায় নানা রেস্তোরাঁয় বাড়ছে নানা ঘরানার হালিম। এসপ্ল্যান্ডে লাগোয়া বেন্টিক স্ট্রিটের আলিয়া রেস্তোরাঁর ম্যানেজার ৮৯ বছরের মহম্মদ জামাল আহমেদ জামাল ৫৭ বছর ধরে সামলাচ্ছেন রেস্তোরাঁ। তার কথায়, ‘হালিম শব্দ আসলে আরবি শব্দ। এসেছে আরব দেশ থেকে। আমরা সেই আরবি মাটন হালিম বানাই।’
নাখোদা মসজিদ লাগোয়া রয়্যাল রেস্তোরাঁর মহম্মদ ইরফানের কথায়, ‘আমাদের স্পেশ্যালিটি লখনউ ঘরানার মাটন হালিম।’
ধর্মতলার সাবির রেস্তোরাঁর ম্যানেজার মুহম্মদ আহমেদের কথায়, ‘আমরা শুধু মাটন শাহী হালিমই বানাই।’ রেস্তোরাঁ সিরাজে মিলছে শাহী হালিমের পাশাপাশি ইরানি, হায়দরাবাদি, আফগানি হালিম।
আরসালানের শেফ মহম্মদ সালাহউদ্দিনের কথায়, ‘এই হালিম তৈরি করতে বহুত মেহনতি লাগে। সারারাত ধরে বানাতে হয়। মুগ, মুসুর, অরহর, বুটের ডাল সহ আট-দশ রকমের ডাল, ডালিয়া, সুগন্ধি চাল, ধনে, জিরে, আদা, পিঁয়াজ, রসুন, জায়ফল, জয়িত্রী, গরম মশালা ও বাজারের আরও কিছু মশলা, পাঁঠার গোশত সব মিশিয়ে তৈরি হয় হালিম।’
তবে সালাহউদ্দিনের কথায়, ‘এটা ভারতীর খাবার নয়। এর আসল নাম ডালিম। রোজার শেষে ইফতারিতে এর চল সবচেয়ে বেশি। শক্তিবৃদ্ধি ও এনার্জী ফেরাতে খেজুর, শরবতের সাথে ইফতারে পরিবেশন হতো ডালিম। পরে এর মধ্যে গোশত মিশিয়ে নাম পরিবর্তন হয়। ডালিম বা হালিম যাই হোক না কেন খুবই পুষ্টিকর খাদ্য এটি।’
অতএব, বোঝাই যাচ্ছে রোজার বাকি কটা দিন কলকাতাবাসী বিরিয়ানি, চাপ, রেজালা, কাবাবকে দুরে রেখে মজে থাকবে হালিমেই।