‘মানুষকে ভাগ করতেই তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ’

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কলকাতা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কলকাতায় সিপিআইএম -এর বিক্ষোভ মিছিল, ছবি: বার্তা২৪

কলকাতায় সিপিআইএম -এর বিক্ষোভ মিছিল, ছবি: বার্তা২৪

কলকাতায় ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সভাপতি অমিত শাহের রোড শো ঘিরে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বামফন্ট্রের চেয়ারম্যান বিমান বসু। তিনি বলেছেন, তীব্র মেরুকরণের মাধ্যমে মানুষকে ভাগ করার লক্ষ্যেই তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি ন্যাক্কারজনক এই ঘটনাটি ঘটিয়েছে।

ওই ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার (১৫ মে) সকালে কলকাতার কলেজস্ট্রিটে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিআইএম) বিক্ষোভ মিছিল বের করে। বামফ্রন্টের উদ্যোগে কলকাতা বইপাড়া এলাকা থেকে মিছিলটি শুরু হয়।

বিজ্ঞাপন

মিছিলে হাঁটেন বামফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সীতারাম ইয়েচুরি, প্রকাশ করাত, বিমান বসু, নীলোৎপল বসু প্রমুখ। সাথে পা মেলান বামপন্থী বিভিন্ন শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

ওই ঘটনায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙাসহ হিংসাত্মক হামলা ও সংঘর্ষের তীব্র নিন্দা জানান কবি শঙ্খ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘কথা বলার কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। অধঃপতনের আর কোন স্তর পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে, তা জানি না।’

বিজ্ঞাপন
‘মানুষকে ভাগ করতেই তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ’
কবি শঙ্খ ঘোষ

 

সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘পশ্চিমবাংলার রাজধানীতে এই কুৎসিত ঘটনা ঘটিয়ে বিজেপি ও তৃণমূল কি ভাবছে, তারা মানুষের সমর্থন আদায় করতে পারবে? যখন তারা বুঝতে পারছে তাদের বাংলার মানুষের কাছে ধ্বংসাত্মক ও গ্রহণযোগ্য নয়, তখন হতাশা থেকে মরিয়া হয়ে এ ধরনের কাজে লিপ্ত হয়েছে। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙল। এটাই কি তাদের ভারতীয় সভ্যতার ঐতিহ্যের পক্ষে সওয়ালের নমুনা? জ্ঞানচর্চাকে আক্রমণ করা, পশ্চিমবাংলার মানুষ ধ্বংসাত্মক এই নীতিকে কখনোই গ্রহণ করবেন না।’

রাজ্য সিপিআইএম সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র বলেন, ‘এ ধরনের বর্বরোচিত ঘটনার মধ্য দিয়ে মানুষের সামনে আরো স্পষ্ট হলো বিজেপি-তৃণমূলের চরিত্র। বহিরাগত দুই দলের মধ্যেই ছিল। উসকানিমূলক ও প্ররোচনামূলক স্লোগান দেওয়া হচ্ছিল। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই দিক থেকেই ইট পাথর ছোড়া ও আগুন লাগানো হয়েছে। হিংসাত্মক ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এমনকি দুষ্কৃতীরা ভাঙচুর করেছে বাংলার নবজাগরণের কান্ডারি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মূর্তি। তৃণমূল ও বিজেপি এ ধরনের ঘটনার মাধ্যমে রাজনীতি করে মানুষকে ভাগ করতে চাইছে। বাংলায় শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ এটা কখনোই ক্ষমা করবে না।’

ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিএম) পলিটব্যুরো সদস্য ওই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেন, ‘এটা নিছক তৃণমূল-বিজেপি ঝগড়া নয়। এরা আমাদের গণতন্ত্র ধ্বংস করছে, সংস্কৃতি ধ্বংস করছে। এবার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংস করছে। ওরা সুকান্ত ও লেলিনের মূর্তি ভেঙেছে, এবার বিদ্যাসাগরের মূর্তিও ভাঙল।’

‘মানুষকে ভাগ করতেই তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষ’

মিছিলে অংশ নেওয়া রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলেন, মঙ্গলবার কলেজ স্ট্রিট চত্বরে যে গুন্ডামির খণ্ডচিত্র দেশের মানুষ দেখল, সেটা পশ্চিমবাংলার মানুষের লজ্জা। গণতন্ত্রের লেশমাত্র থাকলে কোনো রাজনৈতিক দল এই ঘটনা ঘটাতে পারে না। যারা বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙল তারা আর যাই হোক, রাজনৈতিক কর্মী বলা যায় না। আজ আবার প্রমাণ হলো- রাজ্যের রাজনৈতিক সংস্কৃতি পুরোটাই ধ্বংস হয়ে গেছে। রাজ্য প্রশাসন আগেই পঙ্গু হয়ে গেছে।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার (১৪ মে) কলকাতায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের রোড শো ছিল। রোড শো যখন বইপাড়া অঞ্চলে প্রবেশ করে তখন কলকাতা ইউনিভার্সিটি ও বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে তৃনমূলের ছাত্র সংগঠন কালো পতাকা ও গোব্যাক মোদি স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় বিজেপির মিছিলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সংঘর্ষ বাধে উভয় পক্ষের, তৈরি হয় রণক্ষেত্র। ভাঙচুর করা হয় কলেজ, জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বাইক, ভেঙে দেওয়া হয় প্রাচীণ বিদ্যাসাগরের মূর্তি।

আরও পড়ুন: কলকাতায় অমিত শাহের রোড শো ঘিরে রণক্ষেত্র