আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে তার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। ইবাদত অপবিত্র অবস্থায় আদায় করা যায় না। পাক-পবিত্র অবস্থায় ইবাদত-বন্দেগি করতে হয়। আর পবিত্রতা অর্জনের জন্য অজু ও গোসলের কোনো বিকল্প নেই। অজু-গোসলের প্রধান মাধ্যম হলো- পানি। আল্লাহতায়ালা তার বিশেষ মেহেরবানীতে বান্দাদের জন্যে প্রচুর পরিমাণে পানির সরবরাহ করে রেখেছেন। তারপরও প্রতিকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। হতে পারে কোনো স্থানে পানি পাওয়া যাচ্ছে না অথবা গেলেও তা সংগ্রহ করা দুষ্কর বা পেলেও তা ব্যবহার করা দুঃসাধ্য অথবা জীবনের ওপর আঘাত আসতে পারে। এরূপ পরিস্থিতে আল্লাহতায়ালা মেহেরবানী করে মাটি বা মাটি জাতীয় পদার্থ দিয়ে পবিত্রতা অর্জনের অনুমতি প্রদান করেছেন।
সাময়িক পানির অপ্রতুলতার পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন স্বয়ং হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তার প্রিয় সাহাবারা। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, আমরা কোনো এক সফরে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে বের হলাম। আমরা বাইদা কিংবা যাতুল জাইশ নামক স্থানে পৌঁছলে আমার গলার হারটি হারিয়ে যায়। তাই হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তা অনুসন্ধান করার জন্য সেখানে অবস্থান করলেন। আর লোকেরাও তার সঙ্গে রয়ে গেলো। কিন্তু সেখানে পানি ছিলো না এবং তাদের সাথে আনা পানিও অবশিষ্ট ছিলো না। হজরত আবু বকর (রা.) আমার কাছে এসে বললেন, তুমি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং অন্যসব লোককে এমন এক জায়গায় আটকে ফেলেছো যেখানে পানি নেই এবং তাদের সঙ্গেও পানি নেই। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, হজরত আবু বকর (রা.) আমাকে তিরস্কার করার পর আমার পার্শ্বদেশে হাত দ্বারা সজোরে আঘাত করলেন। কিন্তু হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ঘুমের ব্যঘাত ঘটার ভয়ে আমি ধৈর্য ধরে স্থির থাকলাম। এ অবস্থায় হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ভোর পর্যন্ত পানি ছাড়াই ঘুমালেন। ঠিক এই সময় মহামহিম আল্লাহ তায়াম্মুমের আয়াত নাজিল করলেন। লোকেরা সবাই তায়াম্মুম করলো। আক্বাবা রাতের প্রতিনিধিদের একজন উসাঈদ ইবনে হুদাঈর বলে উঠলেন, হে আবু বকরের পরিবার তোমাদের কারণে কেবলমাত্র এটিই প্রথম বরকত নয়। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, অতঃপর আমি যে উটের ওপর ছিলাম সেটিকে উঠালে তার নিচে আমার হারটি পাওয়া গেলো। -সহিহ মুসলিম শরিফ
তায়াম্মুম প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনগণ! যখন তোমরা নামাজের জন্য ওঠো, তখন স্বীয় মুখমণ্ডল ও হস্তসমূহ কনুই পর্যন্ত এবং পদযুগল গিটসহ ধৌত করো। যদি তোমরা অপবিত্র হও, তবে সারাদেহ পবিত্র করে নাও এবং যদি তোমরা রুগ্ন হও, অথবা প্রবাসে থাকো অথবা তোমাদের কেউ প্রস্রাব-পায়খানা সেরে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সঙ্গে সহবাস করো, অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও অর্থাৎ স্বীয় মুখমণ্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেলো। আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নিয়ামত পূর্ণ করতে চান- যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।’ -সূরা মায়িদা: ৬
তায়াম্মুমের ফরজ
তায়াম্মুমের ফরজ তিনটি যথা- ১. তায়াম্মুমের নিয়ত করা, ২. তায়াম্মুমের বস্তুর ওপর উভয় হাত ঘর্ষণ শেষে সমস্ত মুখমণ্ডল একবার মাসেহ করা এবং ৩. কনুইসহ উভয় হাত মাসেহ করা।
তায়াম্মুমের সুন্নত
তায়াম্মুমের সুন্নত ৬টি যথা- ১. বিসমিল্লাহ বলে তায়াম্মুম আরম্ভ করা, ২. মাটি বা মাটি জাতীয় বস্তুর ওপর দু’হাত চাপড় মারা, ৩. হাত ঝেড়ে নেওয়া, ৪. প্রথমে মুখমণ্ডল মাসেহ করা, ৫. তারপর ডান হাত, পরে বাম হাত তারতিবের সঙ্গে মাসেহ করা এবং ৬. পরপর ধারাবাহিকভাবে মাসেহ করা।
তায়াম্মুম করার পদ্ধতি
পাক মাটি, চুন, সুরকি, পাথর, ঘরের দেয়াল জাতীয় পদার্থে ওপর আঙ্গুলগুলো ফাঁক রেখে দুই হাতের তালু এমনভাবে মারতে হবে যেন ধুলা উড়ে আঙ্গুলগুলোর ফাঁকেও প্রবেশ করে। এ সময়ে পবিত্র হওয়ার নিয়ত করতে হবে। এরপর দু’হাত সমস্ত মুখমণ্ডলের ওপর মাসেহ করতে হবে। চুল ও লোমকূপের মধ্যে ধুলি পৌঁছার জন্য অতিরিক্ত চেষ্টা করার প্রয়োজন নেই। আঙ্গুলে আংটি থাকলে খুলে নিতে হবে।
এরপর আঙ্গুল ফাঁক রেখে পুনরায় পূর্বের মতো মাটির ওপর হাতের তালু আঘাত করতে হবে। এবার হাত তুলে বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলী ব্যতীত অন্যান্য আঙ্গুলগুলোর ওপর ডান হাতের আঙ্গুলগুলোর পৃষ্ঠে স্থাপনপূর্বক বাম হাতের আঙ্গুলগুলোর পেট দ্বারা ডান হাতের আঙ্গুলগুলোর পৃষ্ঠদেশে অগ্রভাগ হতে আরম্ভ করে ধীরে ধীরে মাসেহ করতে করতে কনুইর ওপর পর্যন্ত আনতে হবে। পরে সেখান থেকে বাম হাতের তালু ডান হাতের ভেতরের দিকে কনুইর ওপর হতে আঙ্গুলের দিকে আস্তে আস্তে মাসেহ করে শেষভাগে বাম হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলোর পেট দ্বারা ডান হাতের আঙ্গুলগুলোর পিঠ মুছে ফেলতে হবে। এভাবে ডান হাত দ্বারা বাম হাত মুছতে হবে।
এরপর উভয় হাতের তালু পরস্পর ঘর্ষণ করতে হবে এবং এক হাতের আঙ্গুলগুলো অপর হাতের আঙ্গুলগুলোর ফাঁকে ফাঁকে প্রবেশ করে ঘর্ষণ করতে হবে। এ পদ্ধতিতে তায়াম্মুম সম্পন্ন করে তা দ্বারা এক ওয়াক্তের ফরজ নামাজ এবং সুন্নত ও নফল নামাজ যতো ইচ্ছা পড়া যাবে। তবে অন্য ওয়াক্তের ফরজ নামাজের জন্য পুনরায় তায়াম্মুম করতে হবে।
তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণসমূহ
যে সব কারণে অজু ভঙ্গ হয়, সে সমস্ত কারণে তায়াম্মুমও ভঙ্গ হয়ে যায়। যে সমস্ত কারণে গোসল ফরজ হয়, সেসব কারণে তায়াম্মুম নষ্ট হয়। এ ছাড়া পানি পাওয়া গেলে, তায়াম্মুম করার পর নামাজ শুরু করার পরে পানি পাওয়া গেলে কিংবা কূপ হতে পানি ওঠানোর পাত্র পাওয়া গেলে তখন তায়াম্মুম ও নামাজ উভয়ই ভঙ্গ হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় অজু করে পুনরায় নামাজ পড়তে হবে। তবে নামাজ শেষ হওয়ার পরে পানি পাওয়া গেলে নামাজ পুনরায় আদায় করতে হবে না।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা যাচ্ছে, কিছু ধর্মীয় লাইব্রেরি, সুগন্ধি বিক্রেতাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন দিচ্ছে- যারা নির্দিষ্ট পণ্য কিনবে, তাদের মধ্য থেকে লটারির মাধ্যমে একজনকে অথবা একাধিকজনকে উমরা করানো হবে।
ঘোষণায় উমরা করানোর খরচ কোন প্রক্রিয়ায় বহন করা হবে, তা স্পষ্ট নয়। ক্রেতাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হচ্ছে, নাকি বিক্রয়ের লভ্যাংশ থেকে খরচ নির্বাহ করে লটারি বিজয়ীকে উমরা করানো হবে, তাও বোধগম্য নয়।
এ বিষয়ে অনেকে বলছেন, ইসলাম লটারি সমর্থন করে না। তাহলে এ ধরনের লটারির বিষয়ে ইসলামের বিধান কী?
এমন প্রশ্নের আলোকে ইসলামি স্কলার ও মুফতিদের অভিমত হলো- অনেক সময় পণ্যের বিক্রি বাড়ানোর জন্য বিক্রেতারা বিভিন্ন অফার দিয়ে থাকেন। বর্তমান সময়ে প্রচলিত একটা অফার হচ্ছে, নির্দিষ্ট পরিমাণ কিংবা নির্ধারিত মূল্যের সমপরিমাণ পণ্য ক্রয় করলে তাদের একটি কুপন দেওয়া হয় অথবা অন্যকোনো উপায়ে তাদের নাম সংরক্ষণ করা হয়।
তারপর লটারির মাধ্যমে তাদের মধ্য থেকে নির্দিষ্ট কয়েকজনকে উমরা করানোসহ বিভিন্ন পুরস্কার দেওয়া হয়। শরিয়তের দৃষ্টিতে এটা দুই শর্তে জায়েজ।
এক. অফারের কারণে পণ্যের দাম স্বাভাবিক মূল্য থেকে বাড়ানো যাবে না এবং গুণগত মান কমানো যাবে না।
দুই. পণ্য ক্রয় মূল উদ্দেশ্য হতে হবে। শুধু লটারি বা পুরস্কার পাওয়ার উদ্দেশ্যে প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও পণ্য কেনা যাবে না।
মোটকথা, লটারির মাধ্যমে যে পুরস্কার দেওয়া হবে, তা সম্পূর্ণ বিক্রেতার স্বাভাবিক লভ্যাংশ থেকে দিতে হবে। পুরস্কারের জন্য ক্রেতাদের থেকে আলাদা টাকা নেওয়া যাবে না।
শর্ত পাওয়া গেলে এ ধরনের বেচাকেনা ও অফার গ্রহণ করতে কোনো অসুবিধা নেই। উমরাও করা যাবে। বিখ্যাত ফতোয়া গ্রন্থ ‘ফতোয়ায়ে শামি’তে বলা হয়েছে, ‘লটারির মাধ্যমে হাদিয়া ও পুরস্কার বিতরণ ও গ্রহণ করা বৈধ।’
- হজ প্যাকেজ ঘোষণা এ মাসেই
- হজের প্রস্তুতিতে এজেন্সি ও প্যাকেজ নির্বাচন কেন জরুরি
- জাহাজপথে হজযাত্রা: কমবে খরচ, আছে চ্যালেঞ্জও
ইসলামে সাধারণভাবে সব লটারি হারাম নয়। যে লটারিতে শুধু জুয়া থাকে, তা হারাম। অর্থাৎ লটারির কারণে যখন কারও লাভ হয় আর কারও ক্ষতি হয়, তখন তা হারাম। কিন্তু যে লটারিতে কারও লাভ হয়, কিন্তু কারও ক্ষতি হয় না, তা জায়েজ। -আল মুহিতুল বুরহানি : ৭/৩৫৬
উল্লেখ্য, পণ্য মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে শরিয়তের পছন্দনীয় নীতি হলো, পণ্যের গুণগত মান বাড়ানোর মাধ্যমে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করা কিংবা সরাসরি মূল্য ছাড় দেওয়া। তা না করে মূল্যের কিছু অংশ অনিশ্চিত পুরস্কারের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা এবং লাখ টাকার প্রলোভন দেখিয়ে ক্রেতাকে আকৃষ্ট করা, এরপর অল্প কয়েকজনকে সামান্য পুরস্কার দেওয়া সম্পূর্ণ ধোঁকা। এতে একপ্রকার প্রতীকী প্রতারণা পাওয়া যায়।
এভাবে বাজারকে প্রভাবিত করা ইসলামের বাণিজ্যনীতির পরিপন্থী। পুঁজিবাদীদের আবিষ্কৃত এসব কার্যকলাপ অনেক সময় বাজারকে অসৎ উপায়ে পরিচালিত করে এবং বাজারের ভারসাম্য নষ্ট করে। মুসলমানদের এমন কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত।
জেনারেল ও ইসলামি শিক্ষার সমন্বিত প্রয়াস ইকরা বাংলাদেশ স্কুল হবিগঞ্জের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয়েছে চড়ুইভাতি- ২০২৪।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) দুপুরে হবিগঞ্জ শায়েস্তাগঞ্জ খেলার মাঠে এ চড়ুইভাতি অনুষ্ঠিত হয়।
চড়ুইভাতি উপলক্ষে আয়োজিত খেলাধুলার পুরস্কার বিতরণের প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল হাফেজ মাওলানা মাসউদুল কাদির বলেন, শারীরিক কসরতও পড়ালেখার অংশ। নিজে সুস্থ থাকবো, পরিবেশ ভালো রাখবো। সুস্থ জীবন আল্লাহতায়ালার বড় নেয়ামত। আমরা এ নেয়ামতের শোকরিয়া আদায় করবো- আলহামদুল্লিাহ।
শারীরিকভাবে সক্ষম শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি ক্লাসে উপস্থিত থাকতে পারে জানিয়ে মাওলানা হাফেজ মাওলানা মাসউদুল কাদির বলেন, আমরা সময়মতো খাবো, সময়মতো ঘুম থেকে জেগে উঠবো, মা-বাবার কথা শুনবো। গুরুজনের কথা মানবো। তাহলে একজন উন্নত শিক্ষার্থী হিসেবে আমি অবশ্যই সময়কে ছাড়িয়ে যেতে পারবো- ইনশাআল্লাহ।
হাফেজ মাওলানা মাসউদুল কাদির পড়ালেখার প্রতি মনোযোগ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, মাঠের আনন্দ যেন পড়ার স্বাদ আরও বাড়িয়ে দেয়। আমাদের মনোযোগ, অধ্যাবসায় ও সুস্থ সংস্কৃতিচর্চা মানবিকভাবে সবাইকে আরও উন্নত করবে।
পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- ইকরা শায়েস্তাগঞ্জের ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা সাজিদুল ইসলাম, কোরআন উস্তাজ মাওলানা বদরুল আলম কাশেম, ইকরা হবিগঞ্জের সহকারী শিক্ষক হুমায়ুন আশরাফ, হুমায়ুন কবির, মাওলানা মানসুর হাল্লায ও হাফেজ সাদেকুল ইসলাম প্রমুখ।
স্কুলে ধর্মীয় পোশাক পরিধানে বিধিনিষেধ তুলে নিলো সেনেগাল। সেনেগালের জাতীয় শিক্ষা কমিশন এক ডিক্রিতে জানিয়েছে, এখন থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ধর্মীয় পোশাক পরিধানের পাশাপাশি ধর্মীয় প্রতীকও ব্যবহার করতে পারবে।
নতুন ডিক্রিতে বলা হয়েছে, সেনেগালের সরকারি-বেসরকারি স্কুলগুলোতে দেশের জাতীয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন অনুসারে, এখন থেকে বিভিন্ন ধর্মের পবিত্র জিনিস যেমন- হিজাব ও ক্যাথলিক ক্রসের মতো চিহ্নগুলো ব্যবহার করতে পারবে। এই বিধান জারির উদ্দেশ্য হলো, বিভিন্ন ধর্মের সহাবস্থানের মূল্যবোধকে শক্তিশালী করা এবং ধর্মীয় পার্থক্যকে সম্মান করা।
আটলান্টিকের পূর্ব কিনারা ঘেঁষে আফ্রিকার পশ্চিম প্রান্তের দেশ সেনেগাল। এক লাখ ছিয়ানব্বই হাজার সাতশ বাইশ বর্গ কিলোমিটারের দেশ সেনেগালের রাজধানীর নাম ডাকার। সেনেগাল শতকরা ৯৪ ভাগ মুসলমানের দেশ।
সেনেগালে আগে হিজাব বা অন্যকোনো ধর্মীয় চিহ্ন পরার বিষয়ে কোনো আইন ছিল না। এমনকি কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিকভাবে হিজাব বা পর্দা নিষিদ্ধ করেনি, বিতর্কের সূত্রপাত হয় যখন ডাকারে একটি ক্যাথলিক স্কুলে মেয়েদের বোরকা পরার কারণে প্রবেশে নিষেধ করা হয়।
এ প্রেক্ষিতে গত জুলাইয়ের শেষে দেশের সেরা শিক্ষার্থীদের পাবলিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী উসমান সোনকো বলেন, সেনেগালের কোনো স্কুল আর হিজাব নিষিদ্ধ করতে পারবে না। সোনকোর বক্তব্যে ক্যাথলিক চার্চের নেতারা ক্ষুব্ধ হন, শুরু হয় নানা বিতর্ক। কিন্তু নতুন এই ডিক্রির ফলে গত জুলাইয়ে সৃষ্ট বিতর্কের অবসান হলো।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ডাকারের একটি ক্যাথলিক স্কুল সেন্ট জিন ডিআর্ক ইনস্টিটিউটে ২২ জন মুসলিম ছাত্রীকে নিষিদ্ধ করা হয় হিজাবের কারণে। পরে ইনস্টিটিউট এবং সেনেগাল সরকারের মধ্যে করা এক চুক্তির আওতায় তাদের পুনরায় ভর্তি করা হয়।
২০২৫ সালের হজ প্যাকেজ চলতি মাসেই ঘোষণা করা হবে বলে ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি।
সোমবার (১৪ অক্টোবর) বিকেল পর্যন্ত পবিত্র হজপালনের জন্য প্রাথমিক নিবন্ধন করেছেন এক হাজার ৫১০ জন। তার মধ্যে ৮৮৯ জন সরকারি মাধ্যমে, ৬২১ জন বেসরকারি মাধ্যমে নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ করেছেন। আগের প্রাক নিবন্ধিত কিংবা নতুন প্রাক-নিবন্ধিত যেকোনো ব্যক্তি তিন লাখ টাকা জমা দিয়ে প্রাথমিক নিবন্ধন করতে পারেন। হজ প্যাকেজ মূল্যের অবশিষ্ট টাকা প্যাকেজে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। এ বছরের হজ প্যাকেজ মূল্য সৌদি পর্বের ব্যয় ও বিমান ভাড়া নির্ধারণ সাপেক্ষে ঘোষণা করা হবে চলতি মাসেই।
জানা যায়, আগামী ২৩ অক্টোবরের মধ্যে পবিত্র হজের নিবন্ধন না করলে মিনা ও আরাফাতের ময়দানে কাঙ্ক্ষিত জোনে তাঁবু বরাদ্দ পাওয়া যাবে না। এতে জামারা থেকে অনেক দূরে, পাহাড়ি এলাকায় ও নিউ মিনা এলাকায় অবস্থান করতে হবে। ফলে হজযাত্রীদের সৌদি আরবে প্রখর রোদ ও গরমের মধ্যে দীর্ঘপথ হাঁটার কারণে ভোগান্তিতে পড়তে হতে পারে, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এমন সতর্কতার পরও হজ নিবন্ধনে কাঙ্খিত সাড়া মিলছে না।
সরকারি-বেসরকারি দুই মাধ্যমেই হজের নিবন্ধন কার্যক্রম চলবে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, প্রাথমিক নিবন্ধনের সময় আর বাড়ানো হবে না। হজ পোর্টালের দেওয়া তথ্যমতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সরকারি মাধ্যমে প্রাক-নিবন্ধিত হজযাত্রী রয়েছে ২ হাজার ৮৪৮ জন, বেসরকারি যাত্রী রয়েছে ৫৪ হাজার ৮৯৮ জন। ২০২৫ সালে বাংলাদেশের জন্য হজযাত্রীর কোটা এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। এই কোটা পূর্ণ হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রাথমিক নিবন্ধন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে।
কমতে পারে প্যাকেজ মূল্য
গত ৭ অক্টোবর ধর্মবিষয়ক উপদেষ্টা, সচিব এবং হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব সৌদি আরব সফর শেষ করে দেশে ফিরেছেন। সৌদি সফরে তারা হজযাত্রীদের বাড়িভাড়া এবং হজের খরচে সৌদি পর্বের খরচ কমানো নিয়ে সৌদি আরবের হজ মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট দফতর ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেছেন।
২০২৫ সালের সাধারণ হজ প্যাকেজের মূল্য চলতি বছরের চেয়ে কমানোর চেষ্টা করা হবে বলে ইতোমধ্যে ধর্ম মন্ত্রণালয় থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে গত ২৯ আগস্ট অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের সভায় ধর্ম মন্ত্রণালয়কে যৌক্তিক পর্যায়ে হজ প্যাকেজ ঘোষণা করতে বলা হয়েছে।
কিন্তু প্যাকেজের ধরণ কি হবে, মোট কয়টি প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। তবে সৌদি আরবে গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে ধর্ম উপদেষ্টা জানান, কম খরচে হজপালনের লক্ষ্যে পরিকল্পনা করছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। দুই ক্যাটাগরির প্যাকেজে হাজি আসতে পারবেন বাংলাদেশ থেকে। এছাড়া সমুদ্রপথে হজযাত্রী পাঠানোর জন্য সৌদি সরকারকে অনুরোধ জানানো হবে। সৌদি আরবের হজ ও ওমরা বিষয়ক মন্ত্রী ড. তাওফিক ফাউযান আল রাবিয়া ‘বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ’ করা সাপেক্ষে সমুদ্রপথে বাংলাদেশ থেকে হাজি গ্রহণের কথা জানিয়েছেন।
২০২৪ সালে সরকারি ও বেসরকারি দুই খাতেই ২০২৩ সালের তুলনায় প্যাকেজ মূল্য কমিয়ে নির্ধারণ করা হয়েছিল। সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার সর্বনিম্ন প্যাকেজ পাঁচ লাখ ৭৯ হাজার টাকা ধার্য করা হয়। আর, বেসরকারিভাবে সর্বনিম্ন প্যাকেজ নির্ধারণ করা পাঁচ লাখ ৯০ হাজার টাকা।
বাংলাদেশ থেকে ২০২৩ সালে সরকারিভাবে হজ প্যাকেজের খরচ ধরা হয়েছিলো ছয় লাখ ৮৩ হাজার টাকা। বেসরকারি প্যাকেজে খরচের সর্বনিম্ন সীমা ছয় লাখ ৭২ হাজার টাকা স্থির করা হয়।
ধর্ম মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এবার হজের দুটি প্যাকেজ ঘোষণা করা হবে। একটি মসজিদে হারামের আশপাশের দেড় কিলোমিটারের মধ্যে বাড়িসহ একটি প্যাকেজ। এর মূল্য একটু বেশি হতে পারে। আর অপরটি হবে আজিজিয়া প্যাকেজ। এটি মক্কা থেকে দুই-তিন কিলোমিটার দূরে আজিজিয়ায় হাজিদের রাখা হবে। সেখান থেকে মসজিদে হারামে যাতায়াতের জন্য বাস বা যানবাহন থাকবে। এই প্যাকেজের বাড়ি ভাড়া কম হওয়ায় প্যাকেজমূল্যও কম হবে। সাধারণ প্যাকেজের বাড়ি কিংবা হোটেলে একরুমে সর্বোচ্চ ৬ জন থাকবেন। তবে বাড়তি অর্থ পরিশোধ সাপেক্ষে ২ সিটের রুম সুবিধা নেওয়া যাবে। মদিনায় মসজিদে নববির বহিঃপ্রান্ত থেকে এক/দেড় কিলোমিটার দূরে বাড়ি হবে।
কোন খাতে অর্থ খরচ হয়
হজ প্যাকেজে ৩০ থেকে ৪৮ দিনের মেয়াদ থাকে। এতে হজযাত্রীরা ৫ থেকে ৮ দিন মদিনায় অবস্থান করেন। আর হজের আনুষ্ঠানিকতার জন্য ৫ দিন থাকতে হয়, মিনা-আরাফাত ও মুজদালিফা হয়ে মিনার তাঁবুতে। বাকি দিনগুলো মক্কায় থাকেন।
হজের খরচের হিসাব বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বাড়িভাড়া ও উড়োজাহাজের টিকিটের হজের বড় খরচ হয়। গত বছর উড়োজাহাজ ভাড়া ছিল এক লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকা, যা ২০২৩ সালে ছিল এক লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা।
মক্কা ও মদিনায় বাড়ি ভাড়া এক লাখ ৬৯ হাজার ৪১০ টাকা। এই খাতে ২০২৩ সালে হাজিদের দুই লাখ ৪ হাজার ৪৪৫ টাকা ব্যয় করতে হয়েছিলো।
২০২৩ সালে মিনা-আরাফায় তাঁবু, ম্যাট্রেস, বিছানা, চাদর, বালিশ কম্বল, খাবার সরবরাহে মোয়াল্লেম সেবার সার্ভিস চার্জ এক লাখ ৬০ হাজার ৬৩০ টাকা। ২০২৪ সালে এই সার্ভিস চার্জ ও অন্যান্য চার্জের মোট অংক এক লাখ ২৬ হাজার ৩৮৪ টাকা। এর বাইরে পরিবহন ব্যয় (প্রায় ৩৭ হাজার টাকা) বা ভিসা ফি, স্বাস্থ্যবিমা, গ্রাউন্ড সার্ভিস ক্যাম্প ফির (৬৪ হাজার টাকা) মতো খরচগুলো প্রায় অপরিবর্তিত ছিল।
হজে আগ্রহ কমে উমরায় বাড়ছে
খরচ বৃদ্ধির জন্য হজের তুলনায় উমরাপালনে আগ্রহ বাড়ছে সাধারণ মানুষের। ২০২৩ ও ২০২৪ সালে হজে বাংলাদেশের কোটা ছিল এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন। কিন্তু ২০২৩ সালে কোটার চেয়ে ৩ হাজার ৯৮০ জন এবং ২০২৪ সালে ৪১ হাজার ৯৪১ জন কম মানুষ হজপালন করেন।
অতিরিক্ত খরচের কারণে হজ করা অনেকের সামর্থ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। আলাপচারিতায় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এবারের যে লক্ষ্যমাত্রা সেখানে পৌঁছানো সম্ভব হবে না। যেকোনো কারণেই হোক এ বছর হজযাত্রীদের আগ্রহ কিছুটা কম।
হজের খরচ কমানো কতটা সম্ভব, এমন প্রশ্নের জবাবে বেসরকারি এক হজ এজেন্সির মালিক নাম প্রকাশ না করে বার্তা২৪.কমকে বলেন, হজের অনেকগুলো খরচ আছে যেগুলো নির্ধারিত। যেমন- উড়োজাহাজ ভাড়া। সরকার যেটা নির্ধারণ করে দেন, সেটাই দিতে হয়। আর সৌদি আরবে কিছু চার্জ আছে; যেগুলো সৌদি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত। কিছুটা কমানো যায়, মক্কা-মদিনার হোটেল বা বাড়ি ভাড়ায়। আর, মিনা ও আরাফাতের ময়দানে যে তাঁবু আছে সেগুলোর ক্যাটাগরি আছে। এ, বি, সি বা ডি ক্যাটাগরি নেওয়া যায়।
তার মতে, হাজিদের কাছে হোটেলের মানের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কোন হোটেল মক্কা-মদিনায় মসজিদে হারাম ও নববির কাছাকাছি। আর খাবারের ক্ষেত্রে পরিচিত খাবার হওয়া। এই দুই ক্ষেত্রে কম্প্রোমাইজ করলে তো হাজিদের কষ্ট হবে।
যাদের হজের নিবন্ধন না করার অনুরোধ
ক্যান্সার, অ্যাডভান্সড কার্ডিয়াক, লিভার সিরোসিস, কিডনি রোগ, সংক্রামক যক্ষা, ডিমেনশিয়া প্রভৃতি দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত এবং গর্ভবতী নারী ও চলাচলে অক্ষম ব্যক্তিদেরকে হজের নিবন্ধন না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।