ভোট হোক দেশ, ধর্ম ও মানুষের কল্যাণে
নির্বাচনের অন্যতম অনুষঙ্গ হলো ভোট। ভোট একটি রায়, এটা নিয়ে ইসলামের কিছু বিধি-নিষেধ রয়েছে। ইসলাম মনে করে, কোনো পদপ্রার্থীকে ভোট দেওয়ার দেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
কারণ ইসলাম মতে ভোট হচ্ছে- একটি সাক্ষ্য। ভোটার যাকে তার ভোট দিচ্ছেন তার অর্থ হচ্ছে, ভোটদাতা সংশ্লিষ্ট ভোটপ্রার্থী সম্পর্কে সাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, ওই প্রার্থী সংশ্লিষ্ট কাজের (রাষ্ট্র পরিচালনা, আইন পাস করাসহ যাবতীয় কাজ ও দায়িত্ব পালন ইত্যাদি) যথাযথ যোগ্যতা রাখেন এবং প্রয়োজনীয় সততা ও আমানতদারী তার মধ্যে রয়েছে।
এখন ওই প্রার্থীর মধ্যে যদি উল্লেখিত যোগ্যতা ও গুণ না থাকে আর ভোটদাতা জেনেশুনে তাকে ভোট দেন, তা হলে সেটা হবে মিথ্যা সাক্ষ্য। আর ইসলামের দষ্টিতে মিথ্যা সাক্ষ্য কবিরা গোনাহ। সে অর্থে এমন মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার কারণে ওই ভোটার হবেন মিথ্যুক।
সহিহ বোখারি শরিফে হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিথ্যা সাক্ষ্যকে আল্লাহতায়ালার সঙ্গে শরিক পরবর্তী পর্যায়ের অপরাধ হিসেবে গণ্য করেছেন।
অন্য আরেক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মিথ্যা সাক্ষ্যকে অন্যতম কবিরা গোনাহ বলে ইরশাদ করেছেন। -সহিহ বোখারি ও মুসলিম
এখন যে অঞ্চলে যারা নিবাচনে প্রার্থী হয়েছেন ভোটদাতারা জানেন, তাদের সবার মধ্যে তুলনামূলক সবচেয়ে বেশি যোগ্যতাসম্পন্ন ও সৎ ব্যক্তি অমুক, তাহলে সে ক্ষেত্রে তাকে বাদ দিয়ে অন্যজনকে ভোট দেওয়ার মানে হলো- নিজেকে ওই কবিরা গোনাহে জড়ানো।
সুতরাং ভোটদাতাকে নিজের পরকালের পরিণতি বিবেচনা করে ভোট তথা সাক্ষ্য দিতে হবে। কেবল দলের সমর্থন, পছন্দ, স্বার্থ, সম্মান, লাজ-লজ্জা, লোভ-লালসা ও ভয়ভীতির কারণে ভোট দেওয়া যাবে না।
ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো- ভোট হচ্ছে একটি সুপারিশ বিশেষ। অর্থাৎ ভোটদাতা সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিচ্ছেন, তার মানে তিনি সুপারিশ করছেন। এ সুপারিশ সম্পর্কে কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো ভালো ও সৎকাজের সুপারিশ করবে, সে ওই ভালো কাজের ও নেকির মধ্যে অংশ পাবে; আর যে ব্যক্তি কোনো মন্দ কাজে বা খারাপ বিষয়ে সুপারিশ করবে, সেও সেই মন্দের অংশীদার হবে।’ -সূরা নিসা: ৮৫
আর এ কথা সবাই জানেন, যথোপযুক্ত ও সৎ আমানতদার ব্যক্তির পক্ষে সুপারিশ করা ঈমানের দাবি, নৈতিক চাহিদা। এ বিষয়ে ইসলামের শিক্ষা হলো- যে আল্লাহতায়ালার সৃষ্টির যাবতীয় অধিকার যথাযথভাবে আদায় করবেন তাকে সুপারিশ করা। আর মন্দ সুপারিশ হলো- অযোগ্য, অপদার্থ-পাপী-অপরাধী বা কোনো সন্ত্রাসীর পক্ষে সুপারিশ করে তাকে মানুষের ওপর নেতা হিসেবে জোড় করে চাপিয়ে দিতে সুযোগ করে দেওয়া, সাহায্য করা।
এ থেকে বোঝা যায়, ভোটের মাধ্যমে বিজয়ী হয়ে সংশ্লিষ্ট প্রার্থী তার মেয়াদকালে যত রকম ভালো ও মন্দ কাজ করবেন, তার সে সব কাজের সওয়াব এবং পাপের ভাগীদার হবেন ভোটাররাও। সুতরাং ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেতে সবাইকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
যেহেতু এখন সংসদ নির্বাচন। এখানে নির্বাচিতরা পুরো জাতির ভালো-মন্দ নির্ধারণে কাজ করবেন, এরসঙ্গে ভবিষ্যত অনেক কিছু জড়িত, তাই কোনো অযোগ্যকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করা হবে ভীষণ আত্মঘাতী কাজ। এর ফলে পুরো জাতির অধিকার নষ্ট হবে। তাই ভোট দেওয়ার আগে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই তো গেলো, ভোটারের দায়িত্ব।
নির্বাচনে ভোটারদের যেমন দায়িত্ব রয়েছে, তেমনি প্রার্থীদেরও বেশ কিছু দায়িত্ব রয়েছে। যে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছে, তাকে ভোটারদের সামনে দু’টো বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা দিতে হবে।
এক. তিনি ওই কাজ বা দায়িত্ব সম্পাদনে যোগ্যতা রাখেন, তাই তিনি প্রার্থী হয়েছেন।
দুই. তিনি আমানত ও সততার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব সম্পাদন করবেন। এর অন্যথা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
সুতরা যারা ভোট দেবেন, প্রার্থী হবেন এবং নির্বাচন পরিচালনা করবেন তাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে- দেশ, ধর্ম মানুষের কল্যাণের জন্যই ভোট ও নির্বাচন। একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো- ব্যক্তির চাইতে দল, দলের চাইতে দেশ বড়। তবে ঈমানের কথা হলো- ব্যক্তি, দল ও দেশের চেয়ে ঈমান ও ঈমানের দাবি বড়। তাই ঈমানের দাবী অনুযায়ী দেশ, ধর্ম ও মানুষের কল্যাণের জন্য ভোট ও নির্বাচন করতে হবে। যদি কেউ ভোট ও নির্বাচনকে ব্যক্তি ও দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে দেশ, ধর্ম ও মানুষের ক্ষতি করে এবং দেশে অযোগ্য ও দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি নির্বাচিত হওয়ার ব্যবস্থা করে, পুরো জাতির অভিশাপে তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম।