তাহাজ্জুদ: অতি মর্যাদাকর নামাজ
সুস্থ মুসলিম নর-নারীর জন্য প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ। ফরজ নামাজের বাইরে আরও অনেক ধরনের নামাজ রয়েছে। যেমন- সুন্নত, ওয়াজিব, মুস্তাহাব, সুন্নতে মোয়াক্কাদা, সুন্নতে জায়েদা, চাশতের নামাজ, ইশরাকের নামাজ, সালাতুত তাসবিহ, সালাতুত তওবা, তাহাজ্জুদের নামাজ ও ইসতিখারার নামাজ ইত্যাদি। এসব নামাজের বিভিন্ন মর্যাদা রয়েছে। তবে এর মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্বোৎকৃষ্ট নামাজ হচ্ছে- তাহাজ্জুদ।
তাহাজ্জুদের নামাজ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওপর ফরজ ছিল। উম্মতের ওপর এটি ফরজ না হলেও সব সুন্নত নামাজের মধ্যে এটিই উত্তম। তাহাজ্জুদ অর্থ ঘুম থেকে জাগা আর তাহাজ্জুদের সময় হলো- ইশার নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে তারপর অর্ধেক রাতের পর নামাজ আদায় করা। সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত থাকে। গভীর রাতে ঘুম থেকে জেগে নামাজ আদায়ে সওয়াব বেশি। পবিত্র মক্কা ও মদিনায় হারামাইন শরিফাইনে তাহাজ্জুদের নামাজের জন্য আজান দেওয়া হয় এবং অতি গুরুত্বের সঙ্গে আদায় করা হয়। পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ হয়েছে, যারা শেষ রাতে ইবাদত ও প্রার্থনা করেন তাদের প্রশংসাস্বরূপ কিয়ামত দিবসে বলবেন, ‘তারা রাতের সামান্য অংশই নিদ্রায় অতিবাহিত করে এবং রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করে। -সূরা আযযারিয়াত: ১৭-১৮
হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্বোধন করে পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘এবং রাতের কিছু অংশ তাহাজ্জুদ পড়তে থাকুন। এ আপনার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, আপনার প্রভু আপনাকে মাকামে মাহমুদে অধিষ্ঠিত করবেন। -সূরা আল ঈসরা: ৭৯
তানভিরুল মিশকাত গ্রন্থের প্রণেতা ঈমান মহিউস সুন্নাহ বাগবি রহমাতুল্লাহি আলিইহি তিরমিজি শরিফের বরাত দিয়ে উল্লেখ করেন হজরত আবু উমামাহকে নবী করিম (সা.)বলেছেন, ‘তোমরা রাত জেগে (তাহাজ্জুদ) নামাজ পড়াকে বাধ্যতামূলক করে লও।’ -হাদিস নং: ১১৫৭/২
কোরআনে কারিমের সূরা মুজাম্মিলে এর উল্লেখ করা হয়েছে, ‘অবশ্য রাতে ঘুম থেকে উঠা মনকে দমিত করার জন্য খুব বেশি কার্যকর এবং সে সময়ের কোরআন পাঠ বা জিকির একেবারে যথার্থ।’
সূরা আল ফুরকানের ৬৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের রবের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়।’
ইসলামের প্রাথমিক যুগে কুফর সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে মুসলমানদের বিজিত হওয়ার পেছনে মূল ভূমিকা ছিল যে, তারা রাতের শেষ ভাগে আল্লাহতায়ালার দরবারে চোখের পানি ফেলতেন এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতেন। ‘তারা ছিল কঠিন পরীক্ষায় পরম ধৈর্যশীল, অটল-অবিচল, সত্যের অনুসারী, পরম অনুগত। আল্লাহর পথে ধন-সম্পদ উৎসর্গকারী এবং রাতের শেষ প্রহরে আল্লাহর কাছে ভুলত্রুটির ক্ষমাপ্রার্থী। -সূরা আলে ইমরান: ১৭
হাদিস শরিফেও তাহাজ্জুদের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মিশকাতুল মাসাবিহ গ্রন্থকার সুনানে আহমদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘হজরত আবু হুরায়রা রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি হজরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি। ‘ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো- তাহাজ্জুদের নামাজ।’
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত অপর এক হাদিসে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ প্রতি রাতেই নিকটবর্তী আসমানে অবতীর্ণ হন যখন রাতের শেষ তৃতীয়ভাগ অবশিষ্ট থাকে। তিনি তখন বলতে থাকেন, কে আছো যে আমায় ডাকবে, আর আমি তার ডাকে সাড়া দেবো? কে আছো যে আমার কাছে কিছু চাইবে, আর আমি তাকে তা দান করব? কে আছো যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে আর আমি তাকে ক্ষমা করব? –সহিহ বোখারি ও মুসলিম
শহরে সুন্নাহর বরাত দিয়ে মিশকাতুল মাসাবিহ গ্রন্থকার আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বর্ণিত একটি হাদিসের উল্লেখ করেন। বলা হয়েছে, ‘হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, তিন ব্যক্তির প্রতি আল্লাহ খুশি হন (হাসেন) এক. যে ব্যক্তি তাহাজ্জুদের জন্য উঠেন এবং নামাজ পড়েন। দুই. জনতা, যারা নামাজের জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ায়। তিন. মুজাহিদ যারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করার জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়ায়। -হাদিস নম্বর: ১১৬০/২
উপরিউক্ত কোরআন ও হাদিসের বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় যে, নামাজগুলোর মধ্যে তাহাজ্জুদ অতি মর্যাদাকর নামাজ। এই নামাজ প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীরই পালন করা উচিত। এই নামাজের মাধ্যমে হয়তো আল্লাহর নৈকট্য লাভ সহজ হবে। সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে যখন দূরত্ব কমে যাবে তখন সৃষ্টিকর্তা বান্দার দাবি রক্ষা করতে পারেন।