মুগাবের দাফন নিয়ে মুখোমুখি সরকার-পরিবার

  • আন্তর্জাতিক ডেস্ক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

কফিনে মুগাবের মরদেহ

কফিনে মুগাবের মরদেহ

জিম্বাবুয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের দাফন নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে দেশটির সরকার ও তার পরিবার।

প্রয়াত এই রাষ্ট্রপতির পরিবারের দাবি, মুগাবের দাফনের স্থান নিয়ে পরিবারের সঙ্গে নূন্যতম আলোচনার প্রয়োজন মনে করেনি ক্ষমতাসীন সরকার।

বিজ্ঞাপন

৯৫ বছর বয়সী মুগাবে গত সপ্তাহে সিঙ্গপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। জিম্বাবুয়ের রাজধানী হারারের একটি ফুটবল স্টেডিয়ামে তার মরদেহ সমাহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু এই অন্তিম শয্যা নিয়েই পরিবার ও সরকারের মধ্যে মতভেদ দেখা দিয়েছে।

আরও পড়ুন: মুগাবের অবর্তমানে গুচির পরিণতি কি কারাভোগ!

মুগাবের পরিবারের দাবি, মুগাবের গ্রামের বাড়ি কুতামায় মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ব্যক্তিগত আচারের মধ্য দিয়ে ঘরোয়া পরিবেশে যেন তাকে সমাহিত করা হয়।

মুগাবের ভাগ্নে লিও মুগাবে এএফপি নিউজ এজেন্সিকে বলেন, রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে তার মরদেহ কুতামায় নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানেই সোমবার (১৬ সেপ্টম্বর) কিংবা মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টম্বর) ঘরোয়া পরিবেশে তাকে সমাহিত করা হবে। কোনো রাষ্ট্রীয় আচারের সেখানে দরকার নেই। এটাই গোটা পরিবারের সিদ্ধান্ত।

এদিকে, প্রয়াত প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের মৃত্যুর পরে তাকে জাতীয় বীর উপাধিতে ভূষিত করেছে দেশটির বর্তমান প্রেসিডেন্ট এমারসন মানগাগওয়া। তখনি জাতীয় স্মৃতিস্তম্ভে মুগাবেকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করারও ইঙ্গিত দেন তিনি।

আরও পড়ুন: রবার্ট মুগাবে: স্বাধীনতার নায়ক, হতাশার শাসক

দেশটির শিক্ষামন্ত্রী পল মাভিমা বলেন, জাতীয় বীর হিসেবেই রবার্ট মুগাবে সমাহিত হবেন এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।

বিবিসিকে তিনি বলেন, তিনি এমন একজন আইকন যার শেষকৃত্য সম্পাদন অনুষ্ঠানে প্রায় ৫০ জন সাবেক ও বর্তমান রাষ্ট্রপ্রধান অংশ নিতে যাচ্ছেন। জাতির পিতার জন্য এ বিষয়ে অন্যকোনো আলোচনার সুযোগ নাই। সিদ্ধান্ত স্পষ্ট, তার মরদেহ অবশ্যই জাতীয় মন্দিরে নিতে হবে।

অথচ সরকারের এই পরিকল্পনা নিয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মুগাবের পরিবার। এক বিবৃতিতে বল হয়, ‘শেষকৃত্য ও দাফন নিয়ে মুগাবের শেষ ইচ্ছের কথা না জেনেই, পরিবারের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই এসব পরিকল্পনা করা হয়েছে। এখন আমাদেরকে সে পরিকল্পনা মেনে নিতেও সরকারের পক্ষ থেকে চাপ দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সরকার যেটা করছে সেটা প্রয়াত রাবর্ট মুগাবের ইচ্ছে ছিল না।’

মুগাবের শেষ ইচ্ছেগুলোর মধ্যে অন্যতম একটা ইচ্ছে ছিল তার স্ত্রী গ্রেস মুগাবেকে নিয়ে। সেটা ছিল-দাফন হওয়ার আগ পর্যন্ত পুরো শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে গ্রেস যেন কফিন ছেড়ে না যান।

এমারসন মানগাগওয়া ও রবার্ট মুগাবে সহযোদ্ধা হলেও ২০১৭ সালে তাদের সম্পর্ক তিক্ত হয়ে উঠেছিল। মানগাগওয়াকে তখন সরকার থেকেও বের করে দিয়েছিল মুগাবে। পরে সেই মানগাগওয়া মুগাবেকে সরিয়ে ক্ষমতা দখল করে।

মুগাবের মরদেহ বুধবার (১২ সেপ্টেম্বর) সিঙ্গাপুর থেকে জিম্বাবুয়েতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তারপর হারারেতে অবস্থিত মুগাবের বাড়ি যা ব্লু রুফ নামে পরিচিত সেখানে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পরিবার ও সমর্থকরা তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানায়।

শনিবারের রাষ্ট্রীয় শেষকৃত্যের আগে মুগাবের মরদেহ রুফারো ফুটবল স্টেডিয়ামে দুই দিন রাখা হবে।

১৯৮০ সালে দেশটি স্বাধীন হওয়ার পরে রবার্ট মুগাবে জিম্বাবুয়ের প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তিনি ২০১৭ সালের অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আগে প্রায় চার দশক ধরে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ছিলেন।