ধর্ম পালনে চীনের উইঘুর মুসলিমরা নিবেদিত প্রাণ

  • খুররম জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

চীনের কাশগিরে মুসলিমদের প্রধান মসজিদ 'ইদগাহ'/ ছবি: বার্তা২৪.কম

চীনের কাশগিরে মুসলিমদের প্রধান মসজিদ 'ইদগাহ'/ ছবি: বার্তা২৪.কম

কাশগির, শিংজিয়ান প্রদেশ (চীন) থেকে: রাজনীতি করেন না ও সরকারি কাজে যুক্ত নন চীনের এমন উইঘুর মুসলিমরা ধর্ম পালনে ইসলামের সব রীতিই কঠোরভাবে পালন করেন। রমজান মাসে শিংজিয়ানে উইঘুর মসলিমদের সাড়ে সতের ঘণ্টা রোজা রাখতে হয়। কারণ এখানে স্থানীয় সময় ১০টার পরে সূর্য অস্ত যায়।

বুধবার (২৯ মে) চীনের শিংজিয়ান প্রদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের কাশগিরে মুসলিমদের প্রধান মসজিদ 'ইদগাহ' সরজমিনে গিয়ে বার্তা২৪.কম এমনটিই জানতে পারে।

বিজ্ঞাপন

শীতকালে মাইনাস ২০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রায় উইঘুর মুসলিমরা নামাজ পড়তে এসেও জুতা খুলে মসজিদে প্রবেশ করেন, যা এখানে খুবই কষ্টকর অবস্থা। যদিও চীন সরকার মসজিদে প্রবেশের সময় জুতায় প্লাস্টিকের আস্তরণ দিতে মেশিনের ব্যবস্থা করে দিয়েছে। যে অটোমেটিক মেশিনে পা রাখলেই জুতা প্লাস্টিকে আস্তরিত হয়ে যায়।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/May/29/1559149699237.jpg

ইদগাহ মসজিদের প্রধান ইমাম মকদুম হাজী বার্তা২৪.কম-কে এসব জানিয়ে বলেন, ‘চীন সরকার মসজিদে প্রবেশের পর জুতা মোড়ানোর জন্য পলিথিনের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু মসজিদে জুতা পড়ে মুসলিমদের যেহেতু প্রবেশের সংস্কৃতি নেই। তাই প্রচণ্ড শীতে উইঘুর মুসলিমরা চামড়ার বা উলের মোটা মোজা পড়ে মসজিদে প্রবেশ করেন।

তিনি জানান, এ মসজিদে ইদের নামাজ হয় বলে এটির নাম ইটগা (ইদগাহ) মসজিদ হয়েছে। ১৪৬৮ সালে এই মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি শুধু কাশগিরে নয়, শিংজিয়ান প্রদেশে মধ্যে সবচেয়ে বড় মসজিদ।

এ মসজিদে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামজে ৮০ থেকে ৯০ জনের মত মুসল্লি নামাজ পড়তে আসেন। জুম্মার সময় এ সংখ্যা ৮০০ থেকে ৯০০ জনে পৌঁছায়। আর ঈদ-উল ফিতর ও ঈদ-উল আজহার নামাজে এ সংখ্যা দাঁড়ায় আড়াই থেকে তিন হাজারের মতো।

ইমাম মকদুম হাজী জানান, তিনি ও তার জানা মতে আরও একজন হজ পালন করেছেন।

চীনে ধর্মকে রাজনীতি থেকে আলাদা করা হয়েছে। এ কারণে তিনি এ মসজিদে বেতনভুক্ত হলেও সরকার নয়, কাশগিরের মুসলিম কমিউনিটি তার বেতন দিয়ে দেয়। ৩৫ বছর ধরে তিনি ইমামতি করছেন। ইদুল আজহার সময় দুম্বা, ছাগল, গরু ছাড়া উট কোরবানি দেওয়া হয়ে থাকে। একটি উটের দাম ১৫ হাজার ইউয়ান হয়ে থাকে।

উইঘুর জাতির ইতিহাস প্রায় চার হাজার বছর আগের। মূলত, এরা স্বাধীন পূর্ব তুর্কিস্তানের অধিবাসী। পূর্ব তুর্কিস্তান প্রাচীন সিল্ক রোডের পাশে অবস্থিত মধ্য এশিয়ার একটি দেশ, যার চতুর্পার্শ্বে চীন, ভারত, পাকিস্তান, কাজাখস্তান, মঙ্গোলিয়া ও রাশিয়ার অবস্থান। এ অঞ্চলের বেশির ভাগ দেশেই উইঘুর সম্প্রদায়ের মুসলিমের বাস রয়েছে।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/May/29/1559149721145.jpg

বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকেও প্রাচীন এ সম্প্রদায়ের লোকদের উইঘুর না বলে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে ডাকা হতো। মূলত, ১৯২১ সালে উজবেকিস্তানে এক সম্মেলনের পর উইঘুররা তাদের পুরনো পরিচয় ফিরে পায়। ভাষাবিদ ও ইতিহাসবেত্তারা এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছেন যে ‘উইঘুর’ শব্দটি ‘উয়্যুঘুর’ শব্দ থেকে এসেছে। এর অর্থ সংঘবদ্ধ।

১৯১১ সালে মাঙ্কু সাম্রাজ্য উৎখাতের মাধ্যমে পূর্ব তুর্কিস্তানে চীনা শাসন চালু হয়। ১৯৩৩ ও ১৯৪৪ সালে উইঘুররা দুবার চীনাদের সঙ্গে লড়াই করে স্বাধীনতা অর্জন করে। কিন্তু ১৯৪৯ সালে আবারও তারা চীনা কমিউনিস্টদের পার্টির অধিনে চলে আসে। ১৯৫৫ সালে শিংজিয়ান চীনের অধীনে স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

তখন থেকে বেশ কিছু উইঘুর বিচ্ছিন্নতাবাদের কবলে পড়ে সন্ত্রাসবাদের আশ্রয়, যা এখন অব্যাহত রয়েছে। চীনা সরকার এ সন্ত্রাসবাদ রুখতে সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। বিশেষ করে বিপদগামী উইঘুর তরুণ সমাজ, যারা সন্ত্রাসবাদে প্রভাবিত হয়েছে, তাদের মুল ধারায় ফেরাতে বেশকিছু ভোকেশনাল সেন্টার গড়ে তুলেছে।

আরও পড়ুন: চীনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মাচার নিষিদ্ধ