ব্রেক্সিটে ইইউ-বাংলাদেশ বাণিজ্যে প্রভাব পড়বে না: ইইউ রাষ্ট্রদূত

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি ও বাংলাদেশে ইইউ রাষ্ট্রদূত এইচ ই রেন্সজি তিরিঙ্ক/ ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি ও বাংলাদেশে ইইউ রাষ্ট্রদূত এইচ ই রেন্সজি তিরিঙ্ক/ ছবি: সংগৃহীত

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বের হয়ে যাওয়ার (ব্রেক্সিট) পর ইইউ-এর সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছেন ইইউ-এর ডেলিগেশন টিমের প্রধান রাষ্ট্রদূত এইচ ই রেন্সজি তিরিঙ্ক।

তিনি বলেন, ‘ব্রেক্সিট ইস্যুতে ইইউ-বাংলাদেশ বাণিজ্যে কোনো প্রভাব পড়বে না। ইইউতে ব্রিটেন একটি মাত্র দেশ। যারা ব্রেক্সিট নিয়ে কাজ করছে। এর বাইরে ইইউর সদসভুক্ত আরও ২৭টি দেশ রয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

‘এসব দেশ ইইউ কমিশনের অধীনে আগের মতোই বাংলাদেশের পাশে থাকবে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উন্নয়ন নিয়ে নিজ নিজ কর্মপন্থা নির্ধারণ করবে। তাই ব্রেক্সিট ইস্যুতে বাংলাদেশের শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।’

এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উন্নয়নে আগের মতোই বাংলাদেশের পাশে থাকবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তবে দ্বিপক্ষীয় এই সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে উভয় পক্ষই আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে ও সমঝোতার ভিত্তিতে ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নির্ধারণ করবে।’

বৃহস্পতিবার (২৪ জানুয়ারি) সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রীর সঙ্গে ইইউ রাষ্ট্রদূতের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক শেষে তারা এভাবেই সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য সচিব মো. মফিজুল ইসলাম, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (এফটিএ) মো. শফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত সচিব (রফতানি) তপন কান্তি দাস ঘোষ, ইইউ ডেলিগেশন টিমের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

ব্রিফিংয়ে বাণিজ্য মন্ত্রী বলেন, ‘এটি ছিল ইইউ ডেলিগেশনের সঙ্গে আমার প্রথম মিটিং। এতে সৌজন্যমূলক কথাবার্তার পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা বাংলাদেশে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ উন্নয়নের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে এ লক্ষ্যে বিনিয়োগ উপযোগী পরিবেশ তৈরির বিষয়ে তাগিদ দিয়েছেন।’

মন্ত্রী বলেন, ‘কাস্টমসে কিছু সমস্যার কথা তারা (ইইউ ডেলিগেশনের সদস্যরা) বলেছেন। এ বিষয়ে ইইউ-বাংলাদেশ জয়েন্ট কমিশনের একটি সভা আগামী মার্চে অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে।’

অ্যাকর্ডের বাংলাদেশে অতিরিক্ত সময় অবস্থান বিষয়ে টিপু মুনশি বলেন, ‘অ্যাকর্ড-অ্যালায়েন্সের অনুপস্থিতিতে সংস্কারের ধারাবাহিকতা যাতে চলতে থাকে সে লক্ষে ইতোমধ্যে কর্তৃপক্ষ হিসেবে রেমিডিয়েশন কো-অর্ডিনেশন সেল (আরসিসি) গঠন ও তাকে কার্যক্ষম করতে শক্তিশালী করা হয়েছে। তাই অ্যাকর্ডের অনুপস্থিতিতে পোশাকখাতের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা থেমে থাকবে না।‘

অ্যাকর্ড চলে যাওয়ার পর বাংলাদেশে পোশাকখাতে কী ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া। ইতোমধ্যে অ্যাকর্ডের তৎপরতায় এ খাতটি উন্নতি করেছে। এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে আরসিসি গঠন করেছে। আমার মনে হয় না, ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে আর পেছনে পড়ে থাকতে হবে। তবে বাংলাদেশকে আগামীতে আইএলও’র কনভেনশন অনুযায়ী স্ট্যান্ডার্ড ধরে রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘ইইউর চাওয়া অনুযায়ী পোশাকখাতে সাসটেইনেবল কমপ্যাক্টের শর্তগুলো পূরণ করতে যা করা প্রয়োজন তা করতে হবে। এগুলোর ধারাবাহিকতা ধরে রাখাটাই হলো বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য চ্যালেঞ্জ।’

এই মুহূর্তে পোশাকের দাম বাড়ানোর কার্যকারিতা ও ইইউর ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘অবশ্যই পোশাকের দাম বাড়ানোর দাবিটি যৌক্তিক। এ বিষয়ে বায়ারদের মানসিকতার পরিবর্তন হওয়া দরকার। এই বিষয়টি ইইউ কমিশনের ২০২০ সালের মিটিংয়ে উপস্থাপন করা হবে।’

এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী বাংলাদেশের করণীয় উল্লেখ করে রেন্সজি তিরিঙ্ক আরও বলেন, ‘এ ইস্যুতে সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ বাংলাদেশকে মোকাবেলা করতে হবে। এক্ষেত্রে সব খাতকে গতিশীল ও দক্ষ করে তোলা জরুরি। মানসম্মত উৎপাদন বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে জিএসপি সুবিধা হারানোর আগে জিএসপি প্লাস সুবিধা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।’

এদিকে বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী সম্প্রতি পোশাকখাতের মজুরি ইস্যুতে সাভার-আশুলিয়া এলাকায় আন্দোলন চলাকালে নিহত হওয়া শ্রমিক সুমনের পরিবারকে মন্ত্রীর নিজন্ব ব্যক্তিগত অর্থ থেকে এক লাখ টাকা সহায়তা দেন।