১০ ডিসেম্বর লন্ডন রুটে প্রথম পাখা মেলবে হংসবলাকা

  • ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম 
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকা-লন্ডন ফ্লাইটের মধ্য দিয়ে আকাশে উড়তে যাচ্ছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে যুক্ত হওয়া দ্বিতীয় বোয়িং ড্রিমলাইনার ৭৮৭-৮ উড়োজাহাজ ‘হংসবলাকা’। এটি হবে হংসবলাকার প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট।

উড়োজাহাজ প্রস্তুতকারী কোম্পানি বোয়িং বিমানের কাছে দ্বিতীয় ড্রিমলাইনার হংসবলাকা হস্তান্তর করবে আগামী ৩০ নভেম্বর। এরপর এটি যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল শহরের পেনফিল্ড বিমানবন্দর থেকে টানা সাড়ে ১৫ ঘণ্টা উড়ে ঢাকায় পৌছবে আগামী ১ ডিসেম্বর। এরপর রেজিস্ট্রেশন ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সব প্রক্রিয়া শেষ হতে সপ্তাহখানেক সময় লাগবে। এরপরই এটি বাণিজ্যিক ফ্লাইট পরিচালনার জন্য উপযুক্ত হবে। এটি বিমানের বহরে যুক্ত হলে এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজের সংখ্যা দাঁড়াবে ১৫টিতে।

বিজ্ঞাপন

হংসবলাকা দিয়ে ঢাকা-লন্ডন রুটে সপ্তাহে ৬টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। এছাড়াও এটি উড়বে ঢাকা-দাম্মাম ও ঢাকা-ব্যাংকক রুটে। দাম্মাম রুটে সপ্তাহে ৪টি এবং ব্যাংকক রুটে এটি দিয়ে ৩টি ফ্লাইট পরিচালিত হবে। এর আগে ১৯ আগস্ট বিমানের প্রথম ড্রিমলাইনার আকাশবীণা ঢাকায় আসে।

বিমানের জেনারেল ম্যানেজার (পিআর) শাকিল মেরাজ বলেন, এটি বিমানের বহরে যুক্ত হলে ঢাকা-লন্ডন, ঢাকা-দাম্মাম ও ঢাকা-ব্যাংকক রুটে যাত্রী পরিবহন করবে। এর ফলে এসব রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা পাবেন আরামদায়ক ভ্রমণের নিশ্চয়তা। বিদ্যমান রুটগুলোতে ফ্লাইট সংখ্যাও বাড়বে।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এএম মোসাদ্দিক আহমেদ। তিনি বলেন, ড্রিমলাইনার যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিমান নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে। দ্বিতীয় ড্রিমলাইনার যুক্ত হওয়ার পর লন্ডন, দাম্মাম ও ব্যাংকক রুটে এ উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। যাত্রীদের নিরাপদ ও আরামদায়ক সেবা দিতে বিমান সচেষ্ট। অন্য এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নতুন উড়োজাহাজ বিমানকে সহায়তা করবে।

বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) ইনামুল বারী বলেন, যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণ ও বিমান পরিচালনায় দক্ষতা বৃদ্ধিতে ড্রিমলাইনার নতুন মাত্রা যোগ করবে। টানা ১৬ ঘণ্টা উড়তে সক্ষম ড্রিমলাইনার চালাতে অন্যান্য বিমানের তুলনায় ২০ শতাংশ কম জ্বালানি লাগে। সম্প্রসারিত বিমান বহর দিয়ে চলমান রুটে ফ্লাইটের সংখ্যা বৃদ্ধি করা সহজ হবে এবং নতুন রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করা যাবে। যাত্রীদের ভ্রমণ আরও আরামদায়ক, আরও আনন্দময়  হয়ে উঠবে।

ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ ঘণ্টায় ৬৫০ কিলোমিটার বেগে উড়তে সক্ষম। উড়োজাহাজটির ইঞ্জিন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান জেনারেল ইলেক্ট্রিক (জিই)। উড়োজাহাজের শব্দ কমাতে ইঞ্জিনের সঙ্গে শেভরন প্রযুক্তি যুক্ত রয়েছে। উড়োজাহাজের নিয়ন্ত্রণ হবে ইলেক্ট্রিক ফ্লাইট সিস্টেমে। কম্পোজিটম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি হওয়ায় এই উড়োজাহাজটি ওজনে হালকা। ভূমি থেকে উড়োজাহাজটির উচ্চতা ৫৬ ফুট। দুটি পাখার আয়তন ১৯৭ ফুট। এর মোট ওজন ১ লাখ ১৭ হাজার ৬১৭ কিলোগ্রাম, যা ২৯টিহাতির সমান! এর ককপিট থেকে টেল (লেজ) পর্যন্ত ২৩ লাখ যন্ত্রাংশ রয়েছে।

ড্রিমলাইনারে আসন সংখ্যা ২৭১টি। এর মধ্যে বিজনেস ক্লাস ২৪টি আর ২৪৭টি ইকোনমি ক্লাস। বিজনেস ক্লাসের আসনগুলো বানিয়েছে অ্যাসটেলা। আর ইকোনমি ক্লাসের আসনগুলো হেইকোর বানানো। বিজনেস ক্লাসের আসনগুলো ৬৫ ইঞ্চি পিচ, ইকোনমি ক্লাসেরগুলো ৩১ ইঞ্চি পিচ। বিজনেস ক্লাসে ২৪টি আসন ১৮০ডিগ্রি পর্যন্ত সম্পূর্ণ ফ্ল্যাটবেড হওয়ায় যাত্রীরা আরমদায়কভাবে বিশ্রাম নিতে পারবেন। দু’পাশের প্রত্যেক আসনের পাশে রয়েছে বড় আকারের জানালা। একইসঙ্গে জানালার শাটার বন্ধ করাও খোলা যাবে বোতাম টিপে। জানালা থেকে শুরু করে কেবিনেও রয়েছে মুড লাইট সিস্টেম। ফলে যাত্রীরা সহজেই পরিবর্তন করতে পারবেন লাইটিং মুড। দীর্ঘ সময় ভ্রমণেও যাত্রীরা যেন ক্লান্তি অনুভব না করেন সেজন্য এর ভেতরে এয়ার কম্প্রেসার সিস্টেম অন্যান্য উড়োজাহাজের তুলনায় উন্নত।

ডিমলাইনারের ইন-ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট (আইএফই) সেবা দিতে প্যানাসনিক এভিওনিকস করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করেছে বিমান। প্রতিটি আসনের সামনে প্যানাসনিকের এলইডিএস-মনিটর রয়েছে। মনিটিরে বিবিসি, সিএনএনসহ ৯টি টিভি চ্যানেল দেখা যাবে। একইসঙ্গে ড্রিমলাইনারের ইন-ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট সিস্টেমে (আইএফই) থাকবে ১০০টির বেশিক্ল্যাসিক থেকে ব্লকবাস্টার চলচ্চিত্র। এছাড়া রয়েছে বিমানের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত গেমস। অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৩ হাজার ফুট দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময়ও ওয়াইফাই সুবিধা পাবেন যাত্রীরা।  এছাড়া মোবাইল ফোনে রোমিং সুবিধা থাকলে আকাশে উড্ডয়নের সময় কল করতে পারবেন যাত্রীরা। এজন্য ২৫টি স্যাটেলাইটের সঙ্গে করা হয়েছে চুক্তি। উড়োজাহাজটি যে স্থানের ওপর দিয়ে যাবে, যাত্রীদের সামনে তখন স্ক্রিনে দেখা যাবে থ্রিডি ম্যাপ। একইসঙ্গে উঠে আসবে সেই স্থানের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি।

ড্রিমলাইনারের ককপিটে রয়েছে নতুনত্ব। সেখানে থাকছে হেডআপ ডিসপ্লে। এর মাধ্যমে চোখের সামনের প্রয়োজনীয় তথ্য দেখতে পারবেন পাইলটরা। সার্বক্ষণিক ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঢাকায় বিমানের ফ্লাইট অপারেশন রুমের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। এর মাধ্যমে উড়োজাহাজের ইঞ্জিন, ককপিট, ফুয়েল, নেভিগিয়েশনসহ সব তথ্য জানতে পারবেন ফ্লাইট অপারেশন বিভাগের কর্মকর্তারা। যেকোনও সমস্যা সৃষ্টি হলে তারা অপারেশন রুম থেকে পাইলটকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে পারবেন। এজন্য ঢাকায় বিমানের প্রধান কার্যালয়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে সার্ভার স্থাপন করা হয়েছে। ফ্লাইট শেষে দেশে ফেরার আগেই ড্রিমলাইনারের কোনও সমস্যা আছে কিনা তা জানতে পারবেন প্রকৌশলীরা। তাই ত্রুটি পেলে উড়োজাহাজটি দেশে পৌঁছানোর আগেই প্রস্তুুতি নিতে পারবেন তারা। ফলে যেকোনও সময় ককপিট থেকে ফ্লাইট অপারেশন রুমের সহায়তা নিতে পারবেন পাইলটরা। একইসঙ্গে আকাশে ওড়ার সময় আইপ্যাড ও ট্যাব ব্যবহার করে প্রয়োজনীয় তথ্য নিতে পারবেন তারা।