করোনায় পুরুষরা বেশি ঝুঁকিতে : বাঁচাতে পারে নারী লৈঙ্গিক হরমোন এস্ট্রোজেন

  • ক্যামেলিয়া আলম, বিভাগীয় সম্পাদক-নারীশক্তি
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নারী লৈঙ্গিক হরমোন এস্ট্রোজেন : যা পুরুষদেরও থাকে

নারী লৈঙ্গিক হরমোন এস্ট্রোজেন : যা পুরুষদেরও থাকে

এমন একটি গ্রাম আছে যেখানে শুধু নারীদেরই বসবাস—মিশরের সামাহা নামের এই গ্রামকে মিশর সরকার বরাদ্দ করেছে বয়োবৃদ্ধ, বিধবা ও তালাকপ্রাপ্ত নারীদের জন্য। করোনাপরবর্তীকালে এমন এক চিত্র কি দেখতে হতে পারে বিশ্বকেও? কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে বিশ্বে নারী-পুরুষের মধ্যে মৃত্যুহারের পার্থক্যই আচমকা এমন ভয়াবহ আশঙ্কাকে সামনে আনছে।

ইতালিতে সর্বপ্রথম ড. দেবরাহ বার্কস তথ্য দিলেন, করোনায় ইতালিতে নারীর তুলনায় পুরুষের আক্রান্তের ও মৃত্যুর হার বেশি। এর পরপরই চীন, দক্ষিণ কোরিয়াতেও পাওয়া গেল একই খবর। চীনে নারীর চেয়ে ৬৫% পুরুষ আক্রান্ত হচ্ছে। বাংলাদেশেও সরকারি হিসেবে প্রথম আক্রান্ত চারজনের মধ্যে তিনজনই ছিলেন পুরুষ।

বিজ্ঞাপন

কারণ হিসেবে পুরুষদের খাদ্যভ্যাস আর জীবনপ্রণালীকে দায়ী করা হচ্ছে। সিগারেট, এলকোহল, কোমল পানীয়, হোটেলের বা রাস্তার খোলা খাবারের অভ্যস্ততাসহ অনেকক্ষেত্রে নেশাদ্রব্য গ্রহণের কারণে নারীদের তুলনায় পুরুষের মৃত্যুর হার বেশি। শরীরের অসুস্থতা বা ফুসফুস, লাংসের ক্ষতিসাধনে খাদ্য এক বিশাল ভূমিকা রাখে সন্দেহ নেই। কিন্তু এটুকুই সম্পূর্ণ চিত্র না।

২০১৬ ও ’১৭ সালে লোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. স্টানলি পার্লম্যান একদল ইঁদুরের ওপর গবেষণা করে বিচিত্র এই তথ্যটি পেয়েছেন যে—গবেষণাগারে পুরুষ ইঁদুর ও নারী ইঁদুরের ওপর সার্স ও মার্স ভাইরাসের পরীক্ষার সময় নারী ইঁদুরের তুলনায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে পুরুষ ইঁদুর। আর মারাও পড়ছে তারাই বেশি। নারী ইঁদুরগুলোর ওপর গবেষণা করে দেখা গেল তাদের শরীরে থাকা এস্ট্রোজেন তাদের ইমিউনিটি বাড়াতে রীতিমতো মিরাক্যাল হিসেবে কাজ করছে।

বিজ্ঞাপন

আমরা জানি, এস্ট্রোজেন হলো প্রাথমিক নারী লৈঙ্গিক হরমোন। যদিও এস্ট্রোজেন পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যেই থাকে। তবে নারী দেহে এই হরমোনটি পুরুষের তুলনায় বেশি থাকে।

ইমিউনিটি রক্ষায় এটি কতটা কার্যকর তা এখনো গবেষণা সাপেক্ষ। তাই নিশ্চিত ফলাফলের আগে কোনো সিদ্ধান্তে আসা সম্ভব না। তবু করোনাকালীন সংকট বা মানব দেহের সুস্থতা রক্ষায় এস্ট্রোজেন হরমোন সঠিক মাত্রায় রাখতে কী কী করা উচিত তা জেনে রাখা ভালো।

১. উচ্চমাত্রায় চিনি, কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। যেমন চিনি, ভাত, আলু, চিপস ইত্যাদি।

২. উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার বেছে নিন। যেমন বাদাম, শিম, তাজা শাকসবজি, ফল।

৩. অধিক ব্যায়াম করবেন না। শরীরচর্চা উপকারী কিন্তু অধিক পরিশ্রম এস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে।

৪. ওমেগা-৩ ফ্যাট এসিড গ্রহণ করুন। এ কেবল এস্ট্রোজেন হরমোনই নিয়ন্ত্রণে রাখে না, ক্যান্সার, স্ট্রোক, ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। সামুদ্রিক মাছে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়।

৫. ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খান। যেমন আমলকী, পেয়ারা, কমলা, লেবু।

৬. ক্যারোটিন ও ভিটামিন বি যুক্ত খাবার বেছে নিন। যেমন গাজর, কুমড়া ইত্যাদি।

৭. ডাক্তারের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করতে পারেন।

তবে খেয়াল রাখতে হবে, এস্ট্রোজেন হরমোনের মাত্রা যেন স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকে। খুব কম বা বেশি মাত্রা—উভয়ই শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আর সেইসাথে বদভ্যাস থেকে যতটা সম্ভব নিজেকে মুক্ত রাখুন। নারী-পুরুষের সমতা দিয়েই মহামারি-পরবর্তী সুন্দর এক বিশ্ব গড়ে উঠুক।