অষ্টবর্গ গ্রামের 'গৃহলক্ষী জোস্না'র সন্তানতুল্য ষাড়
পশুপালন করে পুরুষের সাথে পরিবারের অর্থনীতির হাল ধরছেন গ্রামের মহিলারা। কিশোরগঞ্জের গ্রামীণ জনপদে দেখতে পাওয়া গেছে এমনই উজ্জ্বল আর অনুপ্রেরণার দৃষ্টান্ত।
বার্তা২৪.কম প্রতিনিধি কিশোরগঞ্জ শহরতলীর অষ্টবর্গ গ্রামে দেখা পেয়েছেন এমনই এক নারী জোস্না বেগমের। স্বামী রাশেদ মিয়া আর তিন কন্যা নিয়ে তাঁর সুখের সংসার। রাশেদ মিয়ার পূর্বপুরুষ নৈবক্স ফকিরের অঢেল জমি-জিরাত ছিলো। বংশ পরম্পরায় সম্পদ হারিয়ে অভাবের মুখোমুখি হয় রাশেদ মিয়ার পরিবার।
এক পর্যায়ে বিয়ে করে স্ত্রী জোস্না বেগমকে ঘরে আনলে ভাগ্য ফিরতে শুরু করে রাশেদ মিয়ার। স্ত্রীর অনুপ্রেরণায় কৃষিকাজে মনোযোগী হন রাশেদ মিয়া। পাশাপাশি ফসল তুলার মৌসুমে খড় থেকে ধান ছাড়ানো আধুনিক মেশিন ব্যবহারের মাধ্যমে অষ্টবর্গ গ্রামের চাষীদের ঘরে ফসল তুলে দিয়ে বাড়তি উপার্জন করেন তিনি।
কঠোর পরিশ্রমী স্বামীর যত্ন নেয়া, তিন কন্যার পড়াশুনা ও সংসার গোছানোর পাশাপাশি হাঁস-মুরগী এবং গবাদিপশু পালন করেন জোস্না বেগম। তাদের তিন মেয়েই এখন পড়াশুনা শেষে চাকুরীজীবি। সংসারে আয় বেড়েছে তবুও গৃহলক্ষী জোস্না বেগম ঘরে বসে নেই। করোনাকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কন্যারা বেকার হয়ে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরেছেন।
এমন পরিস্থিতিতে জোস্না বেগম বেছে নিয়েছেন বকরী ঈদকে সামনে রেখে গরু মোটা তাজা করার প্রকল্প। ৬ মাস পূর্বে তিনি কিনেছিলেন ভঙ্গুর স্বাস্থ্যের গরু। লাল ও কালো রঙের গরু কোরবানির হাটে বেশি দামে বিক্রি হয় বলে কেনার সময় গরুর রঙটা তিনি দেখে কিনেছিলেন বলে জানালেন। ৬ মাসেই পুষ্টিকর খাবার ও সন্তানের মতো পরম যত্নে লালন পালন করে গরুটিকে তিনি বিশালাকার এক ষাঁড়ে পরিণত করেছেন।
বার্তা২৪.কম প্রতিনিধি জোস্না বেগমের সাক্ষাৎকার নিতে সরেজমিনে কিশোরগঞ্জ সদরের অষ্টবর্গ গ্রামে তাঁর বাড়ি পৌঁছালে ষাঁড়টি দেখানোর জন্য রাশেদ মিয়া বের করতে যান। আর তখনই বিশালাকার ষাঁড়টি দড়ি ছিঁড়ে হুঙ্কার দিয়ে বাড়ি সংলগ্ন ফসলের মাঠে দৌঁড়াতে থাকে। কোন ভাবেই রাশেদ মিয়া ও অন্যান্যরা ষাঁড়টিকে সামলে বাড়ি ফেরাতে পারছিলেন না। ভয়ে এদিক ওদিক ছুটাছুটি করছিলো আশেপাশের লোকজন।
অবস্থা সংকটময় দেখে রাশেদ মিয়ার পর্দানশীল স্ত্রী জোস্না বেগম ফসলের মাঠে যান ও ষাঁড়টিকে ডাকতেই ষাঁড়টি শান্ত হয়ে তাঁর কাছে ছুটে আসে। জোস্না বেগম ষাঁড়টির গলায় দড়ি পরিয়ে এনে উঠোনে বেঁধে রাখেন।
জোস্না বেগম জানান, খইল ভূষি ছাড়াও ভাত কলা সহ নিজেরা যা খান তাই ষাঁড়টিকে খেতে দেন তিনি পরম যত্নে। সন্তান স্নেহে প্রতিপালন করায় ষাঁড়টি তাঁকে মায়ের মতোই ভালোবাসে। তাই অন্যের প্রতি শক্তি প্রদর্শন করলেও তিনি ডাকলে তাঁর ডাকে অবোধ পশুও সন্তানের মতো সাড়া দেয়।
আসন্ন কোরবানির হাটে দ্বিগুণ দামে বিক্রি হবে জোস্না বেগমের ষাঁড়টি। আশেপাশের বেপারিরা ইতিমধ্যেই দাম দর করছেন। ক্রেতা ষাঁড়টি কিনে নিয়ে চলে যাবার সময় জোস্না বেগমের কষ্ট হবে বলে জানালেন। জীবন ধারণের প্রয়োজনে তিনি টাকার বান্ডেল হাতে নিয়ে পিছন ফিরে চোখ মুছবেন। করোনাকালে পুরুষের পাশাপাশি ধরবেন পরিবারের অর্থনীতির হাল। কিন্তু কখনোও ভুলতে পারবেন না সন্তানতুল্য প্রিয় ষাড়টিকে।