স্বপ্নবাজ তিন তরুণীর 'ঈধা'

  • কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

স্বপ্নবাজ তিন তরুণীর 'ঈধা'

স্বপ্নবাজ তিন তরুণীর 'ঈধা'

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত স্বপ্নবাজ তিন তরুণী করোনাকালে থেমে না থেকে উদ্যোক্তার ভূমিকায় সাহসের সঙ্গে অবতীর্ণ হয়েছেন। মহিমা আখতার আদরিতা, ঐশ্বর্য আনোয়ার আরশি এবং নাইমা ইসলাম শখ আত্মশক্তি বিকাশের তাগিদে স্বপ্রণোদিত হয়ে গড়ে তুলেছেন তাদের অনলাইন পোষাক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘ঈধা’।

মেধা, শ্রম ও দক্ষতার সমন্বয়ে নিজস্ব অনলাইন প্রতিষ্ঠান 'ঈধা'র মাধ্যমে পোশাক সামগ্রী বিক্রয় ও বিপণনের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছেন তিনজন। অনলাইনে শাড়ি, কুর্তি, থ্রিপিচ, পাঞ্জাবি থেকে শুরু করে বাচ্চাদের পোশাকও হাজির করেছেন তারা।

বিজ্ঞাপন

কাজগুলো তারা করেন নিজের হাতে। কিছুটা সাহায্য নেন কারগিরের। তারপর কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সারাদেশে পছন্দের পণ্য পৌঁছে দেন গ্রাহকের কাছে।

কবি ও কথাশিল্পী পারভেজ আনোয়ার এবং ডালিয়া সুলতানা অশ্রু দম্পতির কন্যাও একজন উদ্যোক্তা। তবে, এই দম্পতি মনে করেন, তিনজনই তাদের কন্যা। বলেন, 'এদের প্রচেষ্টা, উদ্যোগ ও পরিশ্রম দেখে আমরা বিমোহিত। ভালো মানের পণ্য তুলনামূলক সুলভে দেশের সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে করোনাকালে মানুষের সমস্যা অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে এই উদ্যোগ। আমরা আশা করি, মানুষের আস্থা ও সমর্থনে এরা সফল হবে।'

বিজ্ঞাপন

উদ্যোক্তা তিন তরুণী নিকটতম বন্ধু, সহমর্মী এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী। আদরিতা এবং আরশি পড়ছেন ইংরেজি বিভাগে। নাইমা পড়ছেন নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগে।

২০২১ সালে মাঠে নামলেও মানসিকভাবে শুরুটা হয়েছিল আগেই। আদরিতা এবং আরশি তখন থেকেই চিন্তাভাবনা করছিলেন নতুন ও সৃজনশীল কিছু করার। এদের সঙ্গে যুক্ত হন নাইমা। তারপর করোনাকালে ঘরবন্দি থেকেও চিন্তাকে সচল রাখেন তিনজন। গড়ে তুলেন 'ঈধা'।

তিনজনই ফ্যাশন, ডিজাইন, কাপড়ের মান ও গুণ নিয়ে আগে থেকে আগ্রহী ছিলেন। নিজেদের মধ্যে এ নিয়ে কথা বলেছেন। অনলাইনে দেশ-বিদেশের ভালো ভালো ফ্যাশন হাউস ভিজিট করেছেন। কাঁচামালের সরবরাহ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছেন। একেবারে পুরোটা 'জুতা সেলাই থেকে চণ্ডিপাঠ' পর্যন্ত নিজেরা জেনে-বুঝে শুরু করেছেন তারা। ফলে প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে অগ্রসর স্টাইল ও ডিজাইনের পণ্য উপস্থাপন করতে তাদের মোটেও বেগ পেতে হয়নি।

অল্পদিনেই 'ঈধা'র কাজের প্রশংসা আসতে থাকে ভোক্তাদের কাছ থেকে। পণ্যের মান ও গুণ নিয়ে কোনও আপস না করায় ক্রেতারাই খুশি হয়ে আনন্দের সাথে প্রচারণার কাজ করছেন। নিজেদের জমানো মাত্র সাড়ে সাত হাজার টাকা দিয়ে যাত্রা শুরু করে 'ঈধা', যা এক বছরের অনেক বেড়েছে। বেড়েছে ব্যবসার পরিমাণ, গ্রাহকের সংখ্যা ও পরিচিতি। 'কিন্তু সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আত্মতৃপ্তি আর আত্মবিশ্বাস', মিলিত কণ্ঠে বললেন 'ঈধা'র তিন কর্ণধার।

এখনও সকল পণ্যের ডিজাইন থেকে শুরু করে ছোটখাটো হাতের কাজগুলো মূলত তিনজনই ভাগাভাগি করেন। যার যে বিষয়ে ঝোঁক ও দক্ষতা, তিনি সেদিকগুলো সামলান। নিজেদের মধ্যে চমৎকার সমন্বয় ও টিম স্পিরিটে তরতর করে সম্পন্ন হয় সব কাজ। টাঙ্গাইল বা ইসলামপুর থেকে কাঁচামাল কিনে সেগুলোতে আবার নিজেদের পছন্দসই ডিজাইন করে পোশাকগুলোকে নতুনরূপে সাজিয়ে তোলেন তারা।

তারপর কারিগরের কাছে ডিজাইন বুঝিয়ে দিলে তারাই ডিজাইন অনুযায়ী কাপড় প্রিন্ট করে দেন। পরে নিজেরা আবার ভিন্ন আঙিকে ডিজাইনের কাজ করেন। এ ছাড়া হাতের কিছু কাজ থাকে যেমন সেলাই, এ্যাম্ব্রয়ডারিসহ আরও ছোট ছোট কাজগুলোও তারা নিজেরাই করেন। বিপণন ও ম্যানেজমেন্ট দেখেন নিজেরা ভাগ করে।

তারা বলেন, 'নতুন পেজ হিসেবে আমাদের পেজের রিচ বেশ ভাল। আমরা আশা করিনি যে এত অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের পেজটাতে এত বেশি লাইক পড়বে। আর এতো মানুষ আমাদের কাজকে স্বাগত জানাবে। বিক্রিও এতো ভালো হবে।'

‘ঈধা'র বিশেষত্ব হলো আমরা কারিগরদের ওপর পুরোটা নির্ভরতার চেয়েও নিজেরাই বেশিটুকু কাজ করতে চেষ্টা করি। প্রত্যেকটা পণ্যের প্রতি আমাদের ইমোশনটা বেশি থাকে। আমরা এমনভাবে কাজ করার চেষ্টা করি, যেন আমাদের প্রতিটা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জিনিসই মানুষের পছন্দ হয়। নিজের হাতে কাজ করার কারণে পণ্যের প্রতি আলাদা ভালবাসা কাজ করে এবং পণ্য হয় বৈশিষ্ট্যময়,’ এমনটিই জানালেন তিন তরুণী উদ্যোক্তা।

‘ঈধাকে ঘিরে আমাদের তিন জনের পরিকল্পনার শেষ নেই। আমাদের স্বপ্নকে কেবল দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে নয়, আন্তর্জাতিক দরজায় পৌঁছে দেওয়ার স্বপ্ন দেখি আমরা। মানুষ যেন আমাদের পণ্যগুলো আরও আপন করে নেন বিশ্বাসের সঙ্গে এবং ঈধা একটি বিশ্বস্ত ও আস্থার ব্র্যান্ডে পরিণত হয়, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা', জানালেন স্বপ্নবাজ তিন তরুণী।