সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম আসক্তি কাটাতে `স্ক্রল ফ্রি সেপ্টেম্বর’ চ্যালেঞ্জ
বর্তমান যুগে মানুষের জীবনটা তথ্য প্রযুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে গেছে। ঘুম থেকে উঠে মানুষ এখন প্রথমে মোবাইল ফোন হাতে নেয়। একটানে ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, স্নাপচ্যাটের নিউজফিড ও টাইমলাইন স্ক্রল করে আপডেটগুলোতে নজর বুলিয়ে নেয়। তারপর সকালের অন্যান্য কাজ শুরু করে।
অনেকের কাছে এখন সামাজিক মাধ্যম নেশার মত আসক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে তরুণরা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে অন্যের খোঁজখবর নিচ্ছে, ঠিক ততটাই অসমাজিক হয়ে উঠছে ব্যক্তিগত জীবন-যাপন ও অভ্যাসে।
তরুণদের এই আসক্তি থেকে মুক্তি পেতে লন্ডনের রয়্যাল পাবলিক হেলথ সোসাইটি সম্প্রতি ‘স্ক্রল ফ্রি সেপ্টেম্বর’নামে একটি ক্যাম্পেইন শুরু করেছে। তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর সামাজিক মাধ্যমের অতি ব্যবহার কি প্রভাব ফেলছে সেটা হাইলাইট করাই ক্যম্পেইনের লক্ষ্য। পুরো সেপ্টেম্বর মাস ফেসবুক, টুইটারসহ সব ধরনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে লগ অফ করে রাখার আহ্বান জানানো হচ্ছে। যাতে করে সামাজিক যোগাযোগমাধম্য অতি ব্যহবারকারীরা যেন ‘নিজেদের নিয়ন্ত্রণ’ফিরে পেতে পারে।
সোসাইটির বিশ্বাস, সামাজিক মাধ্যমগুলো থেকে লগঅফ থাকলে আসক্ত ব্যক্তিদের পর্যাপ্ত ঘুম হবে, ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলো মজবুত হবে, ব্যবহারেও মার্জিত হয়ে উঠবে।
সোসাইটির এক গবেষণায় দেখা যায়, ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সী ছেলে-মেয়েদের ৪৭ শতাংশ মনে করছেন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম থেকে দূরে থাকতে পারলে মানসিক দিক দিয়ে তারা লাভবান হবেন।
আপনি কি মোবাইল ফোনের গোলাম?
সারাদিন যারা মোবাইল ফোনের স্ক্রিনে বুঁদ থাকেন তাদের বলা হচ্ছে ‘ফোন অ্যাডিক্ট’। যাকে মানসিক ব্যাধি বলছে বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের কারণে তরুণ প্রজন্মের মানসিক ব্যাধি ও ঘুমের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। বন্ধু ও পরিবারের সাথে সময় কাটানোর বদলে সারাক্ষণ ফেসবুক, টুইটার নিয়ে পড়ে থাকায় বাস্তব জীবনে সম্পর্কের ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করছেন চিকিত্সকেরা।
স্ক্রল ফ্রি সেপ্টেম্বর ক্যাম্পেইনে অংশগ্রহণ করবেন ইংল্যান্ডের উইগ্যান শহরের তিন কিশোরী ম্যারিঅ্যান ব্ল্যান্ডামার, এমা জ্যাকসন ও রিয়ানা প্যারি। তারা স্ন্যাপচ্যাট ও ইনস্টাগ্রামের আসক্ত। ১৫ বছর বয়সী রিয়ানা বলছেন, ‘ঘুম থেকে উঠে ওটাই আমার প্রথম কাজ। অনেকটা অটোমেটিক। কে কি বলছে তা না জানলে যেন পিছিয়ে যাবো। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি আমার ফোনের গোলামে পরিণত হয়েছি। কোন কারণ ছাড়াই স্ক্রল করেই যাচ্ছি।’
১৪ বছর বয়সী এমা বলছেন, ‘আমি এটা প্রচুর ব্যবহার করি। অনেকটা অভ্যাসের মত, যেটা নিশ্চিতভাবেই বিরক্তিকর।’
মোবাইল কী আপনার নিয়ন্ত্রণে আছে?
ইংলিশ কমেডিয়ান রাসেল কেইন (৪২) এতটাই নিজের জীবনের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন যে ইন্টারনেট অ্যাডিকশন ঠেকাতে তিনি রীতিমতো প্রফেশনাল কাউন্সেলিং নিচ্ছেন। তার মতে, ‘কাজ থেকে ফিরে পরিবারের সাথে না বসে কাপড় বদলাতে চলে যেতাম। আসলে আমি ফোন নিয়ে সময় কাটাচ্ছিলাম। এই যন্ত্রটা ব্যবহার থেকে কীভাবে নিজেকে বিরত রাখব বুঝতেই পারছিলাম না। তাই ইন্টারনেট আসক্তি থেকে মুক্ত হতে ইতোমধ্য ছয়টি কাউন্সেলিং সেশন শেষ করেছি কেননা এটা আমার জীবনে অনেক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।’
রয়্যাল পাবলিক হেলথ সোসাইটির শার্লি ক্রেমার বলছেন, ‘মানুষের মধ্যে যোগাযোগ তৈরি করে একে অপরের কাছে এনে মনোজগতে একটা ইতিবাচক প্রভাব ফেলার ভালো সুযোগ ছিল সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। কিন্তু অনেকের জন্যই তার উল্টোটা হয়েছে। মানুষের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে মোবাইল ফোন।’
স্ক্রল থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন যেভাবে?
ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, স্নাপচ্যাট থেকে পুরোপুরি দূরে থাকার কথা শুনলে অনেকেই হয়ত আঁতকে উঠবেন। হয়ত অনেকের জন্য অসম্ভব মনে হতে পারে। তাই ক্যাম্পেইন আয়োজদের পক্ষ থেকে তাদের জন্য কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিছু বিষয় চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
* প্রথমত সামাজিক যে কোন অনুষ্ঠান থেকে সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করা থেকে দূরে থাকুন।
* সন্ধ্যা ৬টা বাজলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন।
* স্কুল কিংবা ঘরে থাকার সময় ব্যক্তিগত নিউজফিড ও টাইমলাইনে ঢোকা যাবে না।
* বিছানায় ঘুমাতে যাওয়ার সময় স্ক্রল করা থেকে নিজেকে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করুন।
মোবাইলের স্ক্রিনে স্ক্রল বাদ দিয়ে সময়টুকু বন্ধু-বান্ধব, পরিবারের সাথে কাটান, পছন্দের বই পড়ুন, সিনেমা দেখুন, গান শুনুন, নিজেকে কোন কাজে ব্যস্ত করুন, বাইরে কোথাও ঘুরতে যান, বিশ্রাম নিন, বিছানায় অলস ঘুমিয়ে নিন। দেখবেন ‘মোবাইলে স্ক্রল’ করা ছাড়াও সময় দিব্যি পার হচ্ছে।