বন্ধ নকিয়া কারখানা: কবে চালু হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা 

  • ইশতিয়াক হুসাইন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম   
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বন্ধ নকিয়া কারখানা: কবে চালু হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা 

বন্ধ নকিয়া কারখানা: কবে চালু হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা 

মোবাইল হ্যান্ডসেটের জগতে এক সময় বিশ্বব্যাপী বিশাল বাজার তৈরি করেছিল নকিয়া। বিশ্ব খ্যাত মোবাইল ফোন কোম্পানি ২০১০ সালে স্ম্যার্টফোনের শীর্ষে ছিল। ওই সময় তারা বছরে ১০ কোটি মোবাইল হ্যান্ডসেট বিক্রি করে। একই সময়ে স্যামসাংয়ের দুই কোটি ৩০ লাখ হ্যান্ডসেট আর অ্যাপলের ৪ কোটি ৭৫ লাখ হ্যান্ডসেট বিক্রি হয়েছে। বাংলাদেশেও এই ধারা অব্যাহত ছিল। তবে সেই বাজার হারিয়ে ধুঁকতে থাকে নকিয়া। 

সময়ের সাথে এক সময় বাংলাদেশের বাজারেও শীর্ষে থাকা নকিয়া সেই অবস্থান হারিয়ে ফেলে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ২০২১ সালে এসে আবারো বাংলাদেশে নিজস্ব কারখানায় হ্যান্ডসেট তৈরির ঘোষণা দেয়। ওই বছরের সেপ্টেম্বরে গাজীপুরের কালিয়াকৈরের বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্কে ৫ একর জমিতে নির্মিত কারখানায় উৎপাদন শুরু করে তারা। নকিয়ার মূল প্রতিষ্ঠান এইচএমডি গ্লোবাল ও দেশীয় অংশীদার ইউনিয়ন টেক পার্কের যৌথ অংশীদারিত্বে নির্মিত কারখানায় প্রতিদিন ৫০০টি হ্যান্ডসেট উৎপাদিত হতো। ২০০ কর্মী এখানে কাজ করতেন। বাজারেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়তে থাকে। ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লেখা হ্যান্ডসেট লেখা রফতানির কথাও জানিয়েছিল নকিয়া।

বিজ্ঞাপন

তবে এদের এই যাত্রা সুখকর হয়নি। যাত্রা শুরুর দেড় বছরের মাথায় কারখানায় উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এইচএমডি গ্লোবাল ও দেশীয় অংশীদার ইউনিয়ন টেক পার্কের দ্বন্দ¦ বড় আকার ধারণ করে। ইউনিয়ন টেক পার্ক এ বছরের ৩ সেপ্টেম্বর নকিয়ার মূল প্রতিষ্ঠান এইচএমডি গ্লোবালের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগসহ বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) বরাবর চিঠি দেয়। চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, এইচএমডি দীর্ঘদিন ধরে কোনো ধরনের বকেয়া অর্থ পরিশোধ করছে না। সেই সাথে এইচএমডি গ্লোবাল অভ্যন্তরীণ পুনর্গঠন ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কারণ দেখিয়ে ইউনিয়ন টেককে হ্যান্ডসেট উৎপাদনের কাঁচামাল সরবরাহ বন্ধ রেখেছে। সেই সাথে ইউনিয়ন টেক বিনিয়োগের অর্থ ছাড়াও এইচএমডি গ্লোবালের কাছে অর্ধশত কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দাবি করে।

ইউনিয়ন টেক চিঠিতে আরো জানায়, এইচএমডি ঢাকা অফিসের বিরুদ্ধে বাজারে নকল নকিয়া হ্যান্ডসেট বাজারজাত এবং সাবেক একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে কেনা এক লাখ ২০ হাজার হ্যান্ডসেটে ত্রুটি ধরা পড়ায় ৫০ শতাংশ লোকসান হয়েছে। 

বিজ্ঞাপন

এদিকে ইউনিয়ন টেকের চিঠির আগেই এইচএমডি গ্লোবাল ৩১ আগস্ট বিটিআরসির সাথে এক মিটিংয়ে ইউনিয়ন টেককে বাদ দিয়ে অন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে অংশীদার হিসেবে চূড়ান্ত করার কথা জানায়। যদিও ইউনিয়ন টেকের সাথে এ বছরের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত চুক্তি ছিল। তারা বলছে, ইউনিয়ন টেক এইচএমডির বিরুদ্ধে অংশীদারিত্ব থেকে বাদ দিয়েছে তাদেরকে না জানিয়ে, যা চুক্তির বরখেলাপ।

ইউনিয়ন গ্রুপ তাদেরকে না জানিয়ে অংশীদারিত্ব থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ তুললেও এইচএমডি গ্লোবালের ঢাকার অফিস জানাচ্ছে, তিন মাসের নোটিশ দিয়েই তাদের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। 

দুই প্রতিষ্ঠানের এই এই দ্বন্দ্বে নকিয়া কারখানায় উৎপাদন বন্ধ থাকলেও জনসম্মূখে এই বিষয়ে কেউ এখনো কিছু জানায়নি। অন্যদিকে এই দ্বন্দ্ব নিরসনে এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। আর তাই নকিয়া কবে চালু হবে না নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে কৌতুহল থেকেই যাচ্ছে। 

এই শিল্পের সাথে জড়িতরা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে মোবাইল ফোনের বাজারে উৎপাদন ও বিক্রি দুটোই কমেছে। গত প্রায় এক বছরে ধরে এই ধারা অব্যাহত রয়েছে, যা এই শিল্পের জন্য অত্যন্ত নেতিবাচক। এরপরেও তারা আশা করছেন, শিগগিরই বাজার ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসবে।