জাতীয় দল ও তার আশেপাশে থাকা ক্রিকেটার, সঙ্গে পাইপলাইনে থাকাদের নিয়ে গড়া হয়েছে এবারের এইচপি দল। সেই দল প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায়। লাল ও সাদা বলের দুই অধিনায়ক মাহমুদুল হাসান জয় আর আকবর আলী একে দেখলেন বড় সুযোগ হিসেবে। জয় তো বলেই দিলেন, তার দল যাচ্ছে জয়ের লক্ষ্যে।
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সবশেষ টেস্টটা ২০০৩ সালে খেলেছিল বাংলাদেশ। সবশেষ দ্বিপাক্ষিক ওয়ানডে সিরিজটাও সেই ১৬ বছর আগের গল্প। গত ১৫ বছরে ১টা ওয়ানডে বিশ্বকাপ আর একটা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিলো বাংলাদেশ। যুবারা গিয়েছিলো ২০১২ তে, সেটাও আন্ডার নাইনটিন বিশ্বকাপ খেলতে। এখান থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে বাংলাদেশের খেলাটা মোটামুটি একটা বিরল দৃশ্যই বটে।
তবে দলের পাইপলাইনে থাকা কিংবা জাতীয় দলের আশেপাশে থাকা এইচপি ইউনিটের ক্রিকেটাররা পাচ্ছেন সুবর্ণ সুযোগ। ডারউইনে পাঁচ সপ্তাহের এই সফরে তারা খেলবেন তিনটি ফরম্যাটেই। দুটি চার দিনের ম্যাচ ও দুটি একদিনের ম্যাচ খেলার পাশাপাশি আছে একটি টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে। ৯ দলের টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে প্রথম পর্বে ৬টি ম্যাচ খেলতে পারবে বাংলাদেশের দলটি।
চার দিনের দুই ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ পাকিস্তান শাহিনস। একদিনের ম্যাচেও প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের দলটিই। তবে একটা ম্যাচে। আরেকটায় খেলবে নর্দার্ন টেরিটরির বিপক্ষে। ম্যাচ দুটি হবে ১ ও ৬ আগস্ট। এছাড়াও ৯ দলের ওই টুর্নামেন্টে এই তিন দলের পাশাপাশি আছে বিগ ব্যাশের চারটা দল। পার্থ স্কর্চার্স, মেলবোর্ন রেনেগেডস, মেলবোর্ন স্টার্স ও অ্যাডিলেইড স্ট্রাইকার্স। বাকী দুই দল সমানিয়ান টাইগার্স এবং এসিটি কমেটস।
সফরের আগে এইচপি দলের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক আকবর আলী বলেন, ‘ক্রিকেটারদের জন্য ভিন্ন ভিন্ন কন্ডিশনে খেলার একটা চ্যালেঞ্জ থাকে। অস্ট্রেলিয়ায় একটা সম্পূর্ণ নতুন কন্ডিশনে খেলতে যাচ্ছি। এই ট্যুরটা অনেক হেল্পফুল হবে কন্ডিশন জানা বুঝা, ওটার সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে খেলার জন্য।’
লাল বলের অধিনায়ক মাহমুদুল হাসান জয় অবশ্য এই সিরিজকে দেখছেন বড় সুযোগ হিসেবে। তার চোখ ২০২৭ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় টেস্ট সিরিজে। সেটা সামনে রেখেই এ কথা বললেন তিনি।
তার ভাষ্য, ‘এটা আমাদের জন্য খুব বড় একটা সুযোগ, আমরা অস্ট্রেলিয়াতে যাচ্ছি। আমি বলব এখানে যে গ্রুপটা আছি কারোরই অস্ট্রেলিয়া ট্যুর করা হয়নি। এটা আমাদের প্রথম ট্যুর, এটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৭ সালে ওখানে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ আছে ওটার জন্য খুব ভালো প্রস্তুতি হবে।'
সফরে বাংলাদেশের লক্ষ্য কী? যাওয়ার আগে লাল বলের ক্যাপ্টেন মাহমুদুল হাসান জয় জানালেন, দলের লক্ষ্য জেতাই। তিনি বলেন, 'অধিনায়ক হিসেবে আমাদের দলের যে সমন্বয় আছে সিরিজ জেতার লক্ষ্যই থাকবে।'
সাকিব আল হাসান দেশে ফিরবেন নাকি ফিরবেন না, বিষয়টা নিয়ে গত রাত থেকেই ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছিল। তারপর সাকিব আল হাসান স্পোর্টস বাংলাকে জানিয়েছিলেন, তিনি দেশে ফিরছেন না। এবার তিনি জানালেন, দুবাই থেকে যেখানেই হোক, দেশে আর ফিরছেন না।
দেশের মাটিতে নিজের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টটা খেলার ইচ্ছা তিনি গেল মাসে কানপুর টেস্টের ঠিক আগে জানিয়েছিলেন। তবে এরপর থেকেই তার দেশে ফেরা নিয়ে নানা জলঘোলা হয়েছে। সবকিছু শেষে গতকাল জানা গিয়েছিল যে সাকিব আজ দেশের মাটিতে পা রাখছেন।
তবে তার বিরুদ্ধে জনরোষের বহিঃপ্রকাশ গতকাল থেকে আবারও দেখা যায়। রাজু ভাস্কর্যে তার কুশপুতুল দাহ করা হয়। এমনকি আজ মিরপুরের শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের বাইরে তার বিরুদ্ধে মিরপুরের শিক্ষার্থীরা মিছিল করেছেন, বিসিবির কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে।
সবকিছু মিলিয়ে পরিস্থিতিটা সাকিবের দেশে আসার পক্ষে নেই। যার ফলে সাকিবকে সিদ্ধান্ত বদলাতে হয়। তিনি কিছুক্ষণ আগে ক্রিকইনফোকে জানিয়েছেন তিনি এখনও তার পরবর্তী গন্তব্য ঠিক করেননি। তবে সেটা যে বাংলাদেশ হচ্ছে না, তা একরকম নিশ্চিত।
তিনি বলেন, ‘আমি জানি না আমি এরপর কোথায় যাব। তবে এটা প্রায় নিশ্চিত যে আমি দেশে ফিরছি না।’ এর আগে তিনি জানিয়েছিলেন, তার নিরাপত্তার কথা ভেবে দেশে না আসার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তাকে।
সাকিবের এই পরিস্থিতির কারণ তার রাজনৈতিক পরিচয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মাগুরা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হয়েছিলেন তিনি। এরপর গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সাকিবের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়।
তার আগে থেকেই সাকিব ছিলেন দেশের বাইরে। সরকার পতন ও মামলা দায়েরের পর থেকে সাকিব আর দেশে ফেরেননি। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজকে সামনে রেখে যাও আসতে চেয়েছিলেন, পারিপার্শ্বিক অবস্থা বলছে, তা হওয়ার সম্ভাবনা এখন নেইয়ের কোঠায়।
সাকিব আল হাসান দেশে আসবেন কি না, এ নিয়ে ধোঁয়াশা এখনও কাটেনি। এরই মধ্যে মিরপুরে সাকিবের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে ‘মিরপুরের ছাত্র-জনতা’। এরপর কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) একটি স্মারকলিপি দিয়েছে আন্দোলনকারীরা।
মিরপুরে জড়ো হয়ে ‘আমার ভাই কবরে, সাকিব কেন বাহিরে’, ‘টরন্টো নাকি মিরপুর, মিরপুর মিরপুর’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। স্মারকলিপি প্রদান শেষে তাদেরই প্রতিনিধি আল মাসনূন জানান, সাকিবকে মিরপুর টেস্টের দল থেকে বাদ না দিলে আরও জোরদার আন্দোলন, ‘মিরপুর ব্লকেড’ করা হবে।
তাদের পক্ষ থেকে বিসিবিকে দেওয়া স্মারকলিপির শুরুতে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদকে লেখা হয়েছে, ‘গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী রাষ্ট্র বিনির্মাণের লক্ষ্যে সকল জায়গায় যে পরিবর্তন হয়েছে তার অংশ আপনি নিজে। যদি এই গণঅভ্যুত্থান না হতো, তাহলে আপনি বিসিবি প্রধান হতেন না। তাই আপনার প্রথম লক্ষ্য হওয়া উচিৎ ফ্যাসিবাদ নির্মূল করে নিজের প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করা। আপনি কোনোভাবেই তাই ফ্যাসিবাদের পুনর্বাসন করতে পারেন না। আপনি পারেন না বাংলাদেশের জার্সি একজন ভোটচোর এমপির গায়ে জড়িয়ে দিতে। এই কাজের মাধ্যমে আপনি কেবলমাত্র পতিত স্বৈরাচারের মন্ত্রী ও সাবেক বিসিবি প্রধান পাপনের প্রতিজ্ঞা পূরণ করতে যাচ্ছেন।’
এতে আরও বলা হয়, ‘পাপন (বিসিবির সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন) কথা দিয়েছিলো যে সে সাকিবকে মিরপুরের মাটিতে বিদায় দেবে। আপনিও ঠিক একই কাজটা করতে যাচ্ছেন । সাকিবকে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে খেলতে দেওয়ার মাধ্যমে আপনি একজন ভোটচোর, হাসিনার দালাল, দুর্নীতিবাজ, শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারির অপরাধী, জুয়ার দালালের শরীরে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির জার্সি তুলে দিচ্ছেন। আপনি পারেন না আমাদের এই মিরপুরে শহিদ হওয়া ভাইয়েদের লাশের উপর সাকিবকে ব্যাট বল চালাতে দিতে। অন্যথায় আপনি নিজেই আরেকজন পাপন হয়ে উঠবেন।’
এরপরই কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় স্মারকলিপিতে, ‘সাকিব আল হাসানকে বাংলাদেশ জাতীয় দল থেকে বাদ দেওয়া এবং সাকিবের অপকর্মের ব্যাপারে ব্যবস্থা না নিলে আমরা আমাদের এই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীকে আরও কঠোর করে তুলব। খেলার দিন মিরপুর এলাকায় কঠোর কর্মসূচী দিতে বাধ্য হব। এর ফলে যদি কোনো অরাজকতা সৃষ্টি হয়, বাংলাদেশের মাটিতে অন্য দেশগুলো খেলতে না আসে কিংবা বাংলাদেশ ক্রিকেট আইসিসির পক্ষ থেকে নিষেধাজ্ঞাসহ অন্য যেকোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তবে এর সকল দায়ভার বিসিবি প্রধান হিসেবে আপনাকে নিতে হবে।’
বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ভারত মাত্র ৪৬ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছে। এরপর সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক মাইকেল ভন ভারতকে খোঁচা দিতে একটুও দেরি করেননি।
ঘরের মাটিতে এই ৪৬ই ভারতের সর্বনিম্ন টেস্ট স্কোর। সব মিলিয়ে দলটার তৃতীয় সর্বনিম্ন রান এটা। ২০২০-২১ মৌসুমে অস্ট্রেলিয়া সফরে অ্যাডিলেডে ৩৬ রানে অলআউট হয় দলটা, আজ অল্পের জন্য সে কীর্তি ভেঙে দেওয়া থেকে রেহাই পায় দলটা।
বৃষ্টির কারণে এই টেস্টের প্রথম দিন ভেসে যায়। এরপর আজ ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মা টস জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়ায় এ সিদ্ধান্ত যে ভুল তা প্রমাণ হয় দ্রুতই। নিউজিল্যান্ডের পেসার ম্যাট হেনরি এবং উইলিয়াম ও'রোর্কে ধসিয়ে দেন ভারতকে। মাত্র ৩১.২ ওভারে ৪৬ রান তুলতে শেষ হয়ে যায় স্বাগতিকদের প্রথম ইনিংস। ম্যাট হেনরি ১৫ রানে ৫ উইকেট ও উইলিয়াম ও'রোর্কে ২২ রানে নেন ৪ উইকেট।
এরপরই কথার তির ছুঁড়লেন মাইকেল ভন। তিনি তার এক্স অ্যাকাউন্টে ভারতের অ্যাডিলেড দুঃস্মৃতির কথা মনে করিয়ে দেন। তিনি লিখেন, ‘স্বস্তির দিকটা দেখুন ভারতীয় ভক্তরা, অন্তত ৩৬ পার হয়ে গেছেন আপনারা।’
ঘরের মাঠে ৪৬ রানে অলআউট হয়ে ভারত ইতোমধ্যেই আছে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। তার ওপর ভনের এমন মন্তব্য কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিটা হয়েই এলো বৈকি!
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ শুরু ২১ অক্টোবর থেকে। তার আগে বাংলাদেশ দল প্রস্তুতি নিচ্ছে সে সিরিজের। ভারতের সফরের দুঃস্মৃতি সে সিরিজের আগেই ভুলতে চায় বাংলাদেশ, সঙ্গে পাকিস্তান সিরিজের সুখস্মৃতিটাকেও কাজে লাগাতে মরিয়া নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
বিষয়টা জানান নির্বাচক হান্নান সরকার। বিসিবির দেওয়া এক ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, ‘যদি আপনি আগের দুটি সিরিজের দিকে তাকান, আমরা পাকিস্তানের বিপক্ষে খুব ভালো করেছি। এরপর ভারতের বিপক্ষে আমরা প্রত্যাশা অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারিনি। উত্থান-পতন থাকবেই, তবে আমরা আমাদের খারাপ স্মৃতিগুলো ভুলে যেতে চাই এবং পাকিস্তান সিরিজের ভালো স্মৃতিগুলো কাজে লাগাতে চাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি খুবই আশাবাদী যে আমরা ভারতের সিরিজের খারাপ স্মৃতি পেছনে ফেলে এই সিরিজে ভালোভাবে ফিরব।’
শেষ তিন মাসে নাজমুল হোসেন শান্তর দল যেমন চড়াই দেখেছে, তেমন উতরাইও হয়েছে অনেক। আগস্টে পাকিস্তানের মাটিতে ঐতিহাসিক ২-০ টেস্ট সিরিজ জয়ের পর টাইগাররা দারুণ আত্মবিশ্বাসী ছিল। তবে এরপরের ভারত সফরে তাদের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়। সেখানে তারা ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ এবং ৩-০ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজে হেরে বসে।
তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজটা ঘরের মাটিতে। স্বস্তির বিষয়টা এখানেই। ঘরের মাঠে স্পিনবান্ধব কন্ডিশন কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে বাংলাদেশ। তার ইঙ্গিত স্কোয়াডেই দেখা গেছে। সেখানে আগের দুই সিরিজের স্কোয়াডে থাকা পেসার খালেদ আহমেদকে বাদ দিয়েছে বিসিবি। হান্নান বলেন, ‘ঘরের মাঠে প্রতিটি দলই নিজেদের সুবিধা নিতে চায় এবং তাই আমরা এক পেসার কমিয়ে তিন স্পিনার নিয়েছি।’