সকালের সেশনে নিউজিল্যান্ডকে ২৫৫ রানে গুটিয়ে দিয়ে ভারত কিছুটা স্বস্তি নিয়ে মাঠ ছাড়ে। ম্যাচ জিততে তাদের সামনের লক্ষ্য দাড়ায় ৩৫৯ রান। সন্দেহ নেই, অনেক বড় লক্ষ্য। তবে ভারত যে এরচেয়ে বেশি লক্ষ্য তাড়া করে টেস্ট ম্যাচ জিতেছে। সেই ইতিহাসই ভারতকে সাহস যোগাচ্ছিল। কিন্তু শেষমেশ ম্যাচে নতুন ইতিহাস গড়লো নিউজিল্যান্ডই। পুনেতে ১১৩ রানের জয়ে ভারতের মাটিতে প্রথমবারের মতো টেস্ট সিরিজ জয়ের ইতিহাস তৈরি করলো নিউজিল্যান্ড।
সিরিজ বাঁচানোর জন্য পুনেতে স্পিন স্বর্গ বানিয়েছিল ভারত। কিন্তু স্বর্গে ও নরক দেখলো তারা নিজেরাই। দুই ইনিংসে ভারত যে ব্যাটিং করলো তাতে প্রমাণিত হলে এই উইকেটে শুধু ব্যাটিংই নয়, বোলিংয়েও স্বাগতিকদের চেয়ে অতিথি দলই এগিয়ে। দু’দফায় ব্যাটিংয়ে বিপদে পড়েছিল নিউজিল্যান্ড। কিন্তু সেই বিপদ থেকে ঠিকই উদ্ধার পায় তারা। আর ভারতের প্রথম ইনিংস গুটিয়ে যায় মাত্র ১৫৬ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে বিশাল লক্ষ্যের পিছু ধাওয়া করতে নেমে গুটিয়ে যায় ২৪৫ রানে। নিউজিল্যান্ড জিতলো ১১৩ রানের বিশাল ব্যবধানে।
তিন টেস্ট সিরিজের প্রথম দুটোতে জিতেই সিরিজ জিতে নিল নিউজিল্যান্ড। ইতিহাস জানাচ্ছে ভারত-নিউজিল্যান্ড টেস্ট ম্যাচে প্রথমবার মুখোমুখি হয়েছিল ১৯৫৫ সালে। পেছনের ৬৯ বছরে এই প্রথমবারের মতো ভারতের মাটি থেকে টেস্ট সিরিজ জিতে ফিরছে নিউজিল্যান্ড। এই সিরিজের ট্রফিতে নতুন একটা শব্দ যোগ করার দাবি নিউজিল্যান্ড তুলতেই পারে- ঐতিহাসিক! ঘরের মাটিতে ভারত প্রায় এক যুগ পরে কোনো টেস্ট সিরিজ হারলো।
পুনের এই টেস্ট ম্যাচ দু’দলের দুই স্পিনারের কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকছে। ভারতের অফস্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দর। এবং নিউজিল্যান্ডের মিচেল স্যান্টনার। সুন্দর প্রথম ইনিংসে শিকার করেন ৫৯ রানে ৭ উইকেট। ক্যারিয়ার সেরা বোলিং এটি তার। দ্বিতীয় ইনিংসে আরো ৪ উইকেট পান তিনি। ম্যাচে তার সংগ্রহ দাড়ায় ১১ উইকেট।
খানিকবাদে সুন্দরের ‘সুন্দর’ বোলিংয়ে ছাড়িয়ে যান মিচেল স্যান্টনার। নিউজিল্যান্ডের অভিজ্ঞ এই স্পিনারের স্পিন যাদুতে ভারতের প্রথম ইনিংস গুটিয়ে যায় মাত্র ১৫৯ রানের মামুলি স্কোরে। স্যান্টনার পান ৫৩ রানে ৭ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসেও স্যান্টনার ছিলেন দুর্বার! দলের ৬০.২ ওভারের মধ্যে তিনি একাই করেন ২৯ ওভার। শিকার করেন ১০৪ রানে ৬ উইকেট। ম্যাচে সব মিলিয়ে তার শিকার সংখ্যা ১৩ উইকেট!
পুনে তো ভারত তো স্যান্টনারের কাছেই হারলো!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউজিল্যান্ড ২৫৯ ও ২৫৫।
ভারত ১৫৬ ও ২৪৫।
ফল: নিউজিল্যান্ড ১১৩ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: মিচেল স্যান্টনার।
সিরিজ: নিউজিল্যান্ড ২, ভারত ০।
শেষ টেস্ট: মুম্বাইয়ে ১ নভেম্বর শুরু।
এই তো এক সিরিজ আগের কথা। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে বাংলাদেশ ইতিহাসই গড়েছিল। অধিনায়ক হিসেবে এই কীর্তিটা লেখা ছিল নাজমুল হোসেন শান্তর নামের পাশে।
তবে এরপর ভারতের কাছে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টিতে হোয়াইটওয়াশ হওয়া, এরপর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ঘরের মাঠে টেস্ট হার বাংলাদেশকে টালমাটাল করে দিয়েছে আবার। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে চট্টগ্রামে এখন দলের মিশন সিরিজ বাঁচানোর। ঠিক এ সময় এসে রীতিমতো বোমা ফাটালেন শান্ত, বিসিবিকে জানিয়ে দিয়েছেন, নেতৃত্বে আর তিনি থাকতে চান না।
তার নেতৃত্ব ছাড়ার মূল কারণ বাংলাদেশ দলনেতা হওয়ার পর থেকে তার ব্যাটিং ফর্ম। টেস্ট আর টি-টোয়েন্টিতে নেতৃত্ব পাওয়ার পর থেকে তার ব্যাটিং গড় ক্যারিয়ার গড়ের চেয়েও কম। ওয়ানডেতে তা বেড়েছে বটে, কিন্তু তা তার সমালোচনার পথ বন্ধ করতে পারেনি।
সে কারণেই হয়তো সিরিজের মাঝপথে এসে তিনি জানিয়েছেন, দলের নেতৃত্বে আর থাকতে চান না তিনি। চলতি সিরিজের পরই তিনি নেতৃত্ব ছেড়ে দিতে চান বলে জানিয়েছেন বোর্ডকে। এখন অপেক্ষা স্রেফ সভাপতি ফারুক আহমেদের অনুমোদনের। আজ-কালের ভেতর তার ওমরাহ শেষ করে দেশে আসার কথা। এরপরই শান্তর নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা আসতে পারে।
একাধিক বিসিবি কর্তা তাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে সিদ্ধান্ত বদলের চেষ্টা করছেন। তবে ক্রিকবাজ জানিয়েছে, তার ভাবনায় শান্ত অটল থাকার সম্ভাবনাই বেশি। যার ফলে বাংলাদেশকে এখন আবারও নতুন নেতা খোঁজ করার মিশনে নামতে হবে।
শান্ত নেতৃত্ব ছেড়ে দিলে কে হবেন বাংলাদেশের অধিনায়ক, এখন প্রশ্ন উঠছে এখানে। তবে যেই আসুন, তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক হবেন না তিনি, এটা অনেকটাই পরিষ্কার। তিন ফরম্যাটে সমানতালে খেলছেন, পারফর্ম করছেন, এমন কেউ তো দলেও নেই! তাসকিন আহমেদের নাম এখানে আসতে পারত, তবে তার চোটাঘাতের কারণে নিয়মিত খেলা নিয়েও আছে প্রশ্ন।
সে ভাবনা থেকে টেস্ট-ওয়ানডের জন্য আলাদা ও টি-টোয়েন্টির জন্য আলাদা অধিনায়ক নির্বাচনের পথে হাঁটতে পারে বিসিবি। সেক্ষেত্রে বেছে নেওয়া হতে পারে সেরা দুই পারফর্মারকে। দীর্ঘতর ফরম্যাটে ব্যাটে-বলে দারুণ পারফর্ম করা মেহেদি হাসান মিরাজকে দেওয়া হতে পারে টেস্ট আর ওয়ানডে ক্রিকেটের নেতৃত্ব। সঙ্গে টি-টোয়েন্টিতে দলের ক্রমাগত ব্যাটিং ব্যর্থতার মাঝে ব্যতিক্রম হয়ে থাকা তাওহীদ হৃদয়কে দেওয়া হতে পারে ক্ষুদ্রতর ফরম্যাটের নেতৃত্ব।
তবে শেষমেশ চূড়ান্তভাবে কার নাম ঘোষণা করা হয়, নাকি শান্তকেই বুঝিয়ে রেখে দেওয়া হয় শেষ পর্যন্ত, সেসব প্রশ্নের জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও অন্তত একটা দিন।
লক্ষ্যটা ৩৬ রানের ছিল। শান মাসুদরা সে লক্ষ্যটা তাড়া করে ফেললেন মোটে ৩.১ ওভারেই, ৯ উইকেট হাতে রেখে। আর তাতে পাকিস্তান সিরিজটা নিজেদের করে নিল, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ইনিংস ব্যবধানে হারের পর পরের দুটো ম্যাচ জিতে ২-১ ব্যবধানে হাসল শেষ হাসি।
ইংল্যান্ড প্রথম টেস্টে ৭ উইকেট খুইয়ে তুলেছিল ৮২৩ রান। পরের চার ইনিংসে ৪০ উইকেটেও মিলিয়েও সমান রান তুলতে পারেনি দলটা। কারণটা সাজিদ খান আর নোমান আলীর উপস্থিতি। দুজন প্রথম টেস্টে ছিলেন না, ছিলেন পরের দুই টেস্টে। দুজন মিলে পরের দুই টেস্টে ইংলিশদের ৪০ উইকেটের ৩৯টিই নিজেদের করে নিয়েছেন।
শুধু কি বল হাতে? পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে তো ব্যাট হাতেও ত্রাতা বনে গিয়েছিলেন দলের! দুজন মিলে তুলেছেন ৯০ রানের মতো, পাকিস্তানের লিড ছিল ৭৭ রানের; বুঝুন তাহলে তাদের ওই দুটো ইনিংসের গুরুত্ব! গুরুত্ব সাউদ শাকিলের ১৩৪ রানের ইনিংসেরও কম নয়, তার ওই ইনিংসই যে পাকিস্তানকে খাদের কিনার থেকে তুলে এনেছিল!
৭৭ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করা ইংল্যান্ড আগের দিনই ২৪ রানে ৩ উইকেট খুইয়ে বসেছিল। আজও হ্যারি ব্রুক, বেন স্টোকস, জেমি স্মিথরা প্রতিরোধ গড়তে পারেননি আদৌ। সাজিদ আর নোমান মিলে আবারও হামলে পড়েন ইংলিশ ব্যাটারদের ওপর। এবার নেতৃত্বটা দেন নোমান, ৬ উইকেট তুলে নেন, ওপাশ থেকে সাজিদ শিকার করেন ৪ উইকেট। তাতে ইংল্যান্ড গুটিয়ে যায় ১১২ রানে।
৩৬ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান শুরু থেকেই মারমুখী ছিল। সাইম আইয়ুবের উইকেট খোয়ালেও শেষমেশ ১৯ বল খরচায় পেয়ে যায় কাঙ্ক্ষিত জয়। প্রথম ম্যাচে ইনিংস ব্যবধানে হারের পরও সিরিজটা শেষমেশ ২-১ ব্যবধানে জিতে নেয় স্বাগতিকরা।
নিজের সিদ্ধান্ত ক্রিকেট বোর্ডকে জানিয়ে দিয়েছেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। অধিনায়কত্ব করতে আর রাজি নন তিনি। দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়ার নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন বিসিবিকে।
অপেক্ষায় রয়েছেন বিসিবি থেকে কি সিদ্ধান্ত আসে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টেও অধিনায়কত্ব করতে চাইছেন না তিনি।
চলতি বছরের শুরুতে তিন ফরম্যাটেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পান নাজমুল হোসেন শান্ত। তার নেতৃত্বেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে বাংলাদেশ। তার অধিনায়কত্বে দলের পারফর্ম্যান্স ভালো-মন্দের মাঝামাঝি গেলেও দলের ব্যাটার হিসেবে নাজমুলের পারফরমেন্স ভীষণ দুর্বল।
বিশেষ করে টেস্ট ম্যাচে পেছনের ৮ টেস্টে তার মাত্র একটি হাফসেঞ্চুরি রয়েছে। দলের প্রধান ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি খুবই বাজে ফর্মে রয়েছেন। অধিনায়কত্বের চাপ ব্যাটে সামাল দিতে পারছেন না নাজমুল।
বিষয়টা জানিয়েছে ক্রিকবাজ। বিসিবির এক নির্ভরযোগ্য সূত্র ওয়েবসাইটটিকে জানিয়েছে, 'হ্যাঁ, সে আমাদের জানিয়েছে যে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের পর দলের নেতৃত্ব দিতে চায় না।'
এরপর অধিনায়ক শান্তও বিষয়টা জানিয়েছেন ক্রিকবাজকে। বলেছেন, 'দেখি কী হয়। কারণ আমি এখনও বিসিবি সভাপতির কথা শোনার অপেক্ষায় আছি।'