দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয়
পবিত্র শবে বরাতের মহামান্বিত এক রাত। এমন রাতে সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমায় নিজের ভাগ্যটাও বদলে নিল টাইগাররা। দুরন্ত পারফরম্যান্সে ঐতিহাসিক এক জয়ের রঙে রাতটি অবিস্মরণীয় করে রাখল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এটাই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রথম জয়। দুর্ভাগ্য ঝেরে ফেলে ইতিহাস গড়াটা জয়টা ধরা দিল ৩৮ রানে। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে নয় ম্যাচ খেলেও কোনো ম্যাচ জিততে পারেনি লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এবার দশম ম্যাচ হয়ে উঠল জয়ের মঞ্চ। তাতেই উড়ল বিজয়ের কেতন।
লক্ষ্যটা ছিল চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু তারপর ৩১৫ রান স্কোর ছোঁয়ার জন্য চেষ্টার কোনো কমতি রাখেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু দুর্ভাগ্য স্বাগতিকদের। দিনটি যে সৃষ্টিকর্তা বাংলাদেশের জন্যই লিখে রেখেছিলেন। ব্যাটিং দৃঢ়তার পর সাকিবদের দাপুটে বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে প্রোটিয়ারা হলো ধরাশায়ী।
রসি ভ্যান ডার ডাসেন ৯৮ বলে খেলেন ৯ বাউন্ডারি ও এক ১ ছক্কায় ৮৬ রানের চোখ ধাঁধানো এক ইনিংস। আর ডেভিড মিলার ৫৭ বলে ৮ বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কায় উপহার দেন ৭৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। সঙ্গে দলীয় স্কোরে ৩১ রান যোগ করেন ক্যাপ্টেন টেম্বা বাভুমা। কিন্তু ৪৮.৫ ওভারে ২৭৬ রানে গুটিয়ে যায় প্রোটিয়াদের ইনিংস।
বাংলাদেশের হয়ে একাই চার উইকেট শিকার করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। তিন উইকেট পান তাসকিন আহমেদ। শরিফুল ইসলাম দুটি ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ একটি উইকেট নেন।
তার আগে দক্ষিণ আফ্রিকা বিপক্ষে দাপুটে ব্যাটিং করে বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতে ফিফটি হাঁকান সাকিব আল হাসান, লিটন দাস ও ইয়াসির আলী। ত্রয়ীর ব্যাটিং দৃঢ়তায় শুরুতে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩১৪ রানের পুঁজি গড়ে বাংলাদেশ।
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এটিই টাইগারদের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশ করেছিল ৩৩০ রান। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে এই প্রথম বাংলাদেশের তিন ব্যাটসম্যান এক ম্যাচে ফিফটি হাঁকালেন।
ব্যাট হাতে ঝলক দেখালেন সাকিব আল হাসান। দিলেন সেঞ্চুরির আভাস। শতক না পেলেও অসাধারণ এক ফিফটি হাঁকিয়েছেন বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার। ৬৪ বলে ৭ বাউন্ডারি ও ৩ ছক্কায় সাজান ৭৭ রানের দুর্বার এক ক্রিকেটীয় ইনিংস।
কেশব মহারাজের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরার আগে অর্ধ-শতকের দেখা পান ওপেনার লিটন দাস। তারকা এ ওপেনার দুর্দান্ত ইনিংসটি সাজান ৬৭ বলে ৫ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায়। ক্রিজ থেকে বিদায় নেওয়ার আগে দারুণ এক ফিফটি মারেন ইয়াসির আলী রাব্বীও। ৪৪ বলে ৪ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় পান তিনি ৫০ রানের চমৎকার এক ইনিংস। চতুর্থ উইকেটে সাকিবের সঙ্গে গড়েন ১১৫ রানের (৮২ বলে) পার্টনারশিপ।
তবে তামিম ইকবাল ৯ রানের জন্য মিস করেন ফিফটি। তারকা এ ওপেনার ফেরেন ৪১ রান নিয়ে। লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের অধিনায়কের ইনিংসটি আসে ৬৭ বলে ৩ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কার বিনিময়ে। তার আগে শুরুটা ছিল দারুণ। লিটনের সঙ্গে তামিম গড়েন ৯৫ রানের ওপেনিং জুটি। যা দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটির রেকর্ড। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এনে দেন ২৫ রান। দলীয় স্কোরে ১৭ যোগ করেন আফিফ হোসেন। ১৯* রানে অপরাজিত থেকে যান মেহেদী হাসান মিরাজ।
সেঞ্চুরিয়নের সুপারস্পোর্ট পার্কে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে দুটি করে উইকেট নেন মার্কো জানসেন ও কেশব মহারাজ। একটি করে উইকেট পান লুঙ্গি এনগিদি, ক্যাগিসো রাবাদা ও অ্যান্ডিল ফেহলুকওয়ে।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে টস জিততে পারেননি টাইগার ক্যাপ্টেন তামিম ইকবাল। টস জিতে ফিল্ডিং বেছে নেন প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। তাই টস হেরে শুরুতে ব্যাট হাতে মাঠে নামে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ খেলে আফগান সিরিজের একাদশ নিয়ে। এ ম্যাচে খেলেননি কুইন্টন ডি কক। তার বদলে মাঠে নামেন কাইল ভেরেইন।
বাংলাদেশ একাদশ: তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), ইয়াসির আলী, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, আফিফ হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, শরিফুল ইসলাম ও মুস্তাফিজুর রহমান।
দক্ষিণ আফ্রিকা একাদশ: কাইল ভেরেইন (উইকেটরক্ষক), জানেমান মালান, টেম্বা বাভুমা (অধিনায়ক), এইডেন মার্করাম, রসি ভ্যান ডার ডাসেন, ডেভিড মিলার, অ্যান্ডিল ফেহলুকওয়ে, কেশব মহারাজ, ক্যাগিসো রাবাদা, মার্কো জানসেন ও লুঙ্গি এনগিদি।