লিটন-নাসুম জাদুতে শুরুটা জয়ে রাঙাল টাইগাররা

  • স্পোর্টস ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নাসুম আহমেদের উইকেট উদযাপন

নাসুম আহমেদের উইকেট উদযাপন

আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে দাপুটে জয় ছিনিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ। নাসুম আহমেদের আগুনে বোলিংয়ে টাইগাররা জিতেছে ৬১ রানের বড় ব্যবধানে। দুরন্ত এ জয়ে দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। ওয়ানডের পর কুড়ি ওভারের সিরিজও ছিনিয়ে নেয়ার পথে এক ধাপ এগিয়ে রইল টাইগাররা।

বাঁ হাতের খেল দেখিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়ে ফেলেছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদরা। আফগানদের সবকটি উইকেটই নিয়েছেন বাংলাদেশের বাঁহাতি বোলাররা। টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো কোনো দলের দশ উইকেট শিকার করেছে প্রতিপক্ষ দলের বাঁহাতি বোলাররা।

বিজ্ঞাপন

শহীদ আফ্রিদিকে টপকে বিশ্বরেকর্ড করেছেন সাকিব আল হাসানও। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সাকিব ৮৪১টি ডট বল দিয়ে নতুন মাইলফলক গড়েছেন। বিশ্বের প্রথম বাঁহাতি স্পিনার, তৃতীয় স্পিনার ও নবম বোলার হিসেবে সাদা বলের ক্রিকেট তথা ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে ৪০০ উইকেট শিকারের অনন্য ইতিহাস লিখেছেন সাকিব। তার উইকেট এখন ৪০১টি।

শুরুতেই বল হাতে স্পিন জাদু দেখান ম্যাচসেরা নাসুম আহমেদ। ইনিংসের প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজকে ফিরিয়ে আফগান ব্যাটিং লাইন-আপে ধস নামিয়ে দেন। একাই ফেলে দেন ৪ উইকেট। তার সঙ্গে বল হাতে ঘূর্ণি বলের ভেলকি দেখান সাকিব আল হাসান। আর পেস বোলিংয়ে ঝড় তোলেন শরিফুল ইসলাম।

বিজ্ঞাপন

ত্রয়ী বোলারের বোলিং দাপটে আফগান ব্যাটসম্যানরা দাঁড়াতেই পারেননি। অতিথিদের হয়ে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২৭ রান করেন নাজিবুল্লাহ জাদরান। ২০ রান এনে দেন আজমাতুল্লাহ ওমরজাই। আর ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ নবী দলীয় স্কোরে যোগ করেন মাত্র ১৬ রান। বাকি ব্যাটসম্যানরা দুই অঙ্কও স্পর্শ করতে পারেননি। যে কারণে ১৭.৪ ওভারে মাত্র ৯৪ রানে গুটিয়ে যায় সফরকারীরা।

বাংলাদেশের হয়ে বিধ্বংসী বোলিংয়ে নাসুম একাই নেন ৪ উইকেট। বাঁ-হাতি এ স্পিনার চার ওভারে খরচ করেন মাত্র ১০ রান। ২৯ রানে ৩ উইকেট পান তরুণ পেসার শরিফুল ইসলাম। সাকিব আল হাসানের পকেটে যায় ২ উইকেট। তবে এজন্য বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার খরচ করেন ১৮ রান।

তবে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের শুরুটা মোটেই ভালো ছিল না। দলীয় ১০ রানে ওপেনার মোহাম্মদ নাঈমকে হারায় স্বাগতিকরা। দলীয় ২৫ রানে সাজঘরে ফেরেন অন্য ওপেনার মুনিম শাহরিয়ারও। ধুঁকতে থাকা দলের হাল ধরেন লিটন দাস। ক্রিজের এক প্রান্ত আগলে রেখে ব্যাটিং লড়াইটা চালিয়ে যান। ওয়ানডাউনে নামা লিটন খেলেন ৬০ রানের দাপুটে এক ইনিংস। দুর্বার ইনিংস সাজান তিনি ৪৪ বলে ৪ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায়।

কিন্তু লিটনকে ঠিক মতো সঙ্গই দিতে পারছিলেন না কেউ। অন্য প্রান্তে নিয়মিত উইকেট যেতে থাকে। আফগান বোলারদের বিপক্ষে আফিফ হোসেন কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। তবে ব্যক্তিগত স্কোরটা বড় করতে পারেননি তরুণ এ অলরাউন্ডার। ২৪ বলে ২ বাউন্ডারিতে আফিফ এনে দেন ২৫ রান।

অভিষেকে মাঠে নেমেই দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের আভাস দিয়েছিলেন মুনিম। কিন্তু ১৭ রানে সাজঘরে ফেরেন তরুণ এ ব্যাটসম্যান। ১৮ বলে ৩ বাউন্ডারি হাঁকিয়ে রশিদ খানের এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে পড়েন মুনিম। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ অধিনায়কোচিত ব্যাট করতে পারেননি। মাত্র ১০ রান আসে তার ব্যাট থেকে। বাকি ব্যাটসম্যানরা থেকে যান ডিঙ্গেল ডিজিটে।

আফগানদের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন ফজলহক ফারুকী ও আজমাতুল্লাহ ওমরজাই। একটি করে উইকেট পান রশিদ খান ও কায়েস আহমেদ।

তার আগে মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে টস ভাগ্য সহায় হয় বাংলাদেশের। তাই তো টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেন টাইগার ক্যাপ্টেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

ঘরোয়া ক্রিকেটে আলো ছড়িয়ে সবার নজর কেড়েছিলেন মুনিম শাহরিয়ার। কথা হচ্ছিল টি-টোয়েন্টিতে তার অভিষেক নিয়ে। আজ ঠিকই তার অভিষেক হয়ে গেল। তার সঙ্গে অভিষেক হলো ইয়াসির আলীরও। তবে হাতের চোট নিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যান মুশফিকুর রহিম। তার বদলে গ্লাভস হাতে উইকেটের পিছনে দাঁড়ান লিটন দাস।

বাংলাদেশ একাদশ: লিটন দাস (উইকেটরক্ষক), মোহাম্মদ নাঈম, সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), ইয়াসির আলী, আফিফ হোসেন, মুনিম শাহরিয়ার, মেহেদী হাসান, নাসুম আহমেদ, শরিফুল ইসলাম ও মুস্তাফিজুর রহমান।

আফগানিস্তান একাদশ: রহমানুল্লাহ গুরবাজ (উইকেটরক্ষক), হজরতুল্লাহ জাজাই, নাজিবুল্লাহ জাদরান, মোহাম্মদ নবী (ক্যাপ্টেন), রশিদ খান, আজমতুল্লাহ ওমরজাই, মুজিব উর রহমান, করিম জান্নাত, ফজলহক ফারুকী, কায়েস আহমেদ ও দরবেশ রসুলী।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ১৫৫/৮, ২০ ওভার (মুনিম ১৭, লিটন ৬০, মাহমুদউল্লাহ ১০, আফিফ ২৫; ফারুকী ২/২৭, রশিদ ১/১৫, কায়েস ১/২১ ও ওমরজাই ২/৩১)।

আফগানিস্তান: ৯৪/১০, ১৭.৪ ওভার (নাজিবুল্লাহ ২৭, নবী ১৬, ওমরজাই ২০; নাসুম ৪/১০, মুস্তাফিজ ১/১৯, শরিফুল ৩/২৯ ও সাকিব ২/১৮)।

ফল: বাংলাদেশ ৬১ রানে জয়ী।

সিরিজ: দুই ম্যাচের টোয়েন্টি সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।

ম্যাচসেরা: নাসুম আহমেদ।