সিরিজ জিতে বিশ্বকাপ সুপার লিগের শীর্ষে টাইগাররা
প্রথম ওয়ানডের মতো দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও দাপুটে জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। ৮০ রানে উড়িয়ে দিয়েছে আফগানিস্তানকে। দুরন্ত এ জয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ এক ম্যাচ হাতে রেখেই ২-০ ব্যবধানে নিশ্চিত করল টাইগাররা। সিরিজ নিশ্চিতের সঙ্গে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগের পয়েন্ট তালিকায় ইংল্যান্ডকে টপকে শীর্ষে উঠে গেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
ম্যাচসেরা লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিমের রেকর্ড গড়া পার্টনার শিপে আফগানদের সামনে রানের পাহাড় ছোঁয়ার চ্যালেঞ্জটা আগেই ছুঁড়ে দিয়েছিল লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। চ্যালেঞ্জটা স্পর্শ করার সাহসও দেখিয়ে গেছে সফরকারীরা। ওপেনার রহমত শাহ ও নাজিবুল্লাহ জাদরানের ফিফটিতে জয় ছিনিয়ে নিয়ে সিরিজে সমতায় ফেরার স্বপ্নও বনে ছিল অতিথিরা। কিন্তু বাংলাদেশের সম্মিলিত বোলিং দাপটে আফগানদের স্বপ্নটা আলোর মুখ দেখতে পারেনি। ব্যাটিং ব্যর্থতায় তাদের সেই জয়ের আশা মিলিয়ে গেছে দূর দিগন্তে।
অবশ্য আফগানিস্তানের ব্যাটিংয়ের শুরুটা মোটেই ভালো ছিল না। দলীয় ৩৪ রানে হারিয়ে ফেলে তারা ৩ উইকেট। চতুর্থ উইকেটে নাজিবুল্লাহ জাদরান ও রহমত শাহর পার্টনারশিপে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। ৯০ বলে ৮৯ রানের দুরন্ত জুটি গড়ে দলকে স্বপ্ন দেখিয়ে ছিলেন বটে। কিন্তু ফিফটি গড়ে নিজেদের ব্যক্তিগত স্কোর বেশি দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি দুজনে। যেকারণে স্বপ্নটা আরও সত্যি হয়নি।
রহমত শাহ ৭১ বলে ৪ বাউন্ডারিতে খেলেন ৫২ রানের দারুণ এক ক্রিকেটীয় ইনিংস। ৬১ বলে ৭ বাউন্ডারিতে নাজিবুল্লাহ জাদরানের ব্যাট থেকে আসে ৫৪ রান। তাদের সঙ্গে মোহাম্মদ নবী ৩২ ও রশিদ খান ২৯ রান যোগ করেন দলীয় স্কোরে। তাতেই ৪৫.১ ওভারে আফগানিস্তানের ইনিংস থামে ২১৮ রানে।
বাংলাদেশের হয়ে দুটি করে উইকেট শিকার করেন তাসকিন আহমেদ ও সাকিব আল হাসান। একটি করে উইকেট নেন মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, মেহেদী হাসান মিরাজ, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও আফিফ হোসেন।
প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে বাংলাদেশের টপ-অর্ডার ব্যাটসম্যানদের দিনটি ছিল বড়ই অপয়া। তবে দ্বিতীয় ম্যাচেই কেটে যায় সেই দুর্ভাগ্যটা। দুরন্ত ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি দেখা পেয়েছেন লিটন দাস। তার ব্যাটিং পার্টনার মুশফিকুর রহিম পেয়েছেন ফিফটির দেখা। দুজনের ব্যাটিং তাণ্ডবের ওপর ভর করে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৫০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩০৬ রানের বিশাল পুঁজি গড়েছে তামিম ইকবালের দল।
ব্যাট হাতে মাঠে নেমে টাইগারদের শুরুটা ছিল দারুণ। ক্রিজের এক প্রান্ত আগলে রেখে লিটন ব্যাট করে গেলেও তামিম ইকবাল ফেরেন একটু আগে ভাগেই। দেশসেরা এ ওপেনারের ব্যাট থেকে আসে মাত্র ১২ রান।
তামিম বিদায় নিলেও লিটনকে সঙ্গ দিতে থাকেন সাকিব আল হাসান। তবে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার নিজের হাতের ব্যাটটা হাসাতে পারেননি ঠিক মনমতো। দারুণ শুরুর আভাস দিয়েও ২০ রানেই থামতে হয় এ ক্রিকেট সুপারস্টারকে।
তামিম-সাকিব সাজঘরের পথ ধরলেও উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান লিটন দাস ব্যাটিং ঝলক দেখিয়ে যান। পরে ব্যাটিং জাদু নিয়ে হাজির হন মুশফিকুর রহিম। ১২৬ বলে লিটন খেলেন ১৩৬ রানের চমৎকার এক ক্রিকেটীয় ইনিংস। তার এ দুর্বার ব্যাটিং অভিযানে ছিল ১৬ চার ও ২ ওভার বাউন্ডারির মার।
অন্য দিকে সেঞ্চুরির আভাস দিয়েও মুশফিকুর রহিম পাননি জাদুকরী তিন অঙ্কের দেখা। তারকা এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানকে সন্তুষ্ট থাকতে হয় ৮৬ রানের চোখ ধাঁধানো এক ইনিংসে। ৯৩ বলের এই দুর্দান্ত ইনিংস সাজান তিনি মন ভোলানো ৯ বাউন্ডারিতে। দুজনে মিলে তৃতীয় উইকেটে ১৮৬ বলে গড়েন ২০২ রানের অনন্য এক পার্টনারশিপ।
পরপর দুই বলে লিটন-মুশফিক দুজনকে ফিরিয়ে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের রানের গতিটা কমিয়ে দেন ফরিদ আহমেদ। নিলে দলীয় স্কোরটা আরও বড় হতে পারতো। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (৬*) ও আফিফ হোসেন (১৩*) অপরাজিত থেকে যান। শেষের ৩.৩ ওভারে আসে মাত্র ২১ রান।
আফগানিস্তানের হয়ে দুটি উইকেট শিকার করেন ফরিদ আহমেদ। আর একটি করে উইকেট পান ফজলহক ফারুকী ও রশিদ খান।
আজ আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে টস ভাগ্যটা কথা বলেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের পক্ষে। তাইতো টস জিতেই ব্যাটিং নেয় বাংলাদেশ। ম্যাচে বাংলাদেশের একাদশে কোনো পরিবর্তন আসেনি। প্রথম ওয়ানডের উইনিং কম্বিনেশন অটুট রেখেছে টাইগাররা। প্রথম ওয়ানডের অপরিবর্তিত দল নিয়েই আজ মাঠে নামে স্বাগতিকরা।
আফগানিস্তানের একাদশে তিনটি বদল আসে। দল থেকে ছিটকে যান ইব্রাহিম জাদরান, ইয়ামিন আহমেদজাই ও গুলবাদিন নাইব। তাদের বদলে দলে জায়গা করে নেন ফরিদ আহমেদ, রিয়াজ হাসান ও আজমাতুল্লাহ ওমরজাই।
বাংলাদেশ একাদশ: লিটন দাস, তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), ইয়াসির আলী, মাহমুদউল্লাহ, আফিফ হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান।
আফগানিস্তান একাদশ: রহমানুল্লাহ গুরবাজ (উইকেটরক্ষক), রিয়াজ হাসান, রহমত শাহ, হাশমতুল্লাহ শাহীদি (অধিনায়ক), নজিবুল্লাহ জাদরান, আজমাতুল্লাহ ওমরজাই, মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান, মুজিব উর রহমান, ফরিদ আহমেদ ও ফজলহক ফারুকী।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৩০৬/৪, ৫০ ওভার (তামিম ১২, লিটন ১৩৬, সাকিব ২০, মুশফিক ৮৬, মাহমুদউল্লাহ ৬*, আফিফ ১৩*; ফরিদ ২/৫৬, ফারুকী ১/৫৯ ও রশিদ ১/৫৪)।
আফগানিস্তান: ২১৮, ৪৫.১ ওভার (রহমত ৫২, নাজিবুল্লাহ ৫৪, নবী ৩২, রশিদ ২৯; মুস্তাফিজ ১/৫৩, তাসকিন ২/৩১ ও সাকিব ২/২৯)।
ফল: বাংলাদেশ ৮৮ রানে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ বাংলাদেশ ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে রইল।
ম্যাচসেরা: লিটন কুমার দাস।