মিরাজ-আফিফ ঝলকে টাইগারদের অবিশ্বাস্য জয়
আফগানিস্তানের স্কোর ২১৫। এ আর এমন কি স্কোর! টি-টোয়েন্টিতেও দুইশ ছোঁয়া ইনিংস আছে ভুরিভুরি। ২১৬ করলেই তো জিতবে বাংলাদেশ। এ আর এমন কি ব্যাপার? ওয়ানডে বলে কথা। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে এটা তো কোনো ব্যাপারই না। আফগানদের অল্পে গুটিয়ে দিয়ে যেন আত্মতৃপ্তিতেই ভুগছিল বাংলাদেশ। তাতেই সবুজাভ উইকেটে হতবাক করা যে চিত্রনাট্য মঞ্চস্থ হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। মেহেদী হাসান মিরাজ ও আফিফ হোসেন জাদু ব্যাটিং উপহার দিয়ে সেটা আর হতে দেননি। দুজনের দুর্বার জুটিতে ৭ বল হাতে রেখেই ৪ উইকেটের অবাক করা জয় ছিনিয়ে নিয়েছে বাংলাদেশ।
সপ্তম উইকেটে মিরাজ ও আফিফ ১৭৪* রানের (২২৫ বলে) হার না মানা রেকর্ড গড়া জুটিতে দলকে এনে দিয়েছেন জয়। সপ্তম উইকেটে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে এমনভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর কীর্তি যে আর কখনোই লেখা হয়নি বাংলাদেশের।লক্ষ্য তাড়ায় বা দ্বিতীয় ইনিংসে সপ্তম উইকেটে বিশ্ব রেকর্ড গড়া পার্টনারশিপের মালিক এখন মিরাজ-আফিফ। দুজনের বীরত্ব গাঁথাতেই লেখা হলো সেই রূপকথার গল্প। চট্টগ্রামের তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডে জিতে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
দুরন্ত এ জয়ে ১৩ ম্যাচে ৯ জয় আর ৫ হারে ৯০ পয়েন্ট নিয়ে পুরুষদের আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ সুপার লিগে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। শীর্ষে থাকা ইংল্যান্ডের চেয়ে এখন টাইগাররা মাত্র ৫ পয়েন্টে পিছিয়ে।
তবে টাইগারদের ব্যাটিংয়ের শুরুটা ছিল যাচ্ছে তাই বাজে। ফজলহক ফারুকীর বোলিং ঝড়ের সামনে যেন দাঁড়াতেই পারছিলেন না স্বাগতিক ব্যাটসম্যানরা। মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকার হয়ে বিপিএলে আলো ছড়িয়ে তারকা এ আফগান পেসার এবার আলো ছড়ান জাতীয় দলের জার্সিতে। ফারুকী শুরুতে একাই চার উইকেট শিকার করে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন-আপে ধস নামিয়ে দেন। তার বিধ্বংসী বোলিংয়ে দলীয় ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে ধুঁকতে থাকে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
তবে টাইগারদের ব্যাটিংয়ের শুরুটা ছিল যাচ্ছে তাই বাজে। ফজলহক ফারুকীর বোলিং ঝড়ের সামনে যেন দাঁড়াতেই পারছিলেন না স্বাগতিক ব্যাটসম্যানরা। মিনিস্টার গ্রুপ ঢাকার হয়ে বিপিএলে আলো ছড়িয়ে তারকা এ আফগান পেসার এবার নজর কাড়লেন জাতীয় দলের জার্সিতে। ফারুকী শুরুতে একাই চার উইকেট শিকার করে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন-আপে ধস নামিয়ে দেন। তার বিধ্বংসী বোলিংয়ে দলীয় ৪৫ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে ধুঁকতে থাকে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
১১.২ ওভারের মধ্যে বিদায় নেয়া ছয় ব্যাটসম্যানের মধ্যে সাকিব আল হাসান কেবল দুই অঙ্ক স্পর্শ করেন। তাও আবার তার ব্যাট থেকে আসে মাত্র ১০ রান। বাকিদের সিঙ্গেল ডিজিটে হতবাক করেন আফগান বোলাররা। তামিম ইকবাল (৮), লিটন দাস (১), মুশফিকুর রহিম (৩), ইয়াসির আলী (০) ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (৮)।
শেষ দিকে এসে ব্যাট হাতে দৃঢ়তা দেখান আফিফ হোসেন ও মেহেদী হাসান মিরাজ। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলে তারা পৌঁছে দেন জয়ের বন্দরে। তাতে করে একশ রানের আগে গুটিয়ে যাওয়ার লজ্জা থেকে বাঁচিয়ে ক্যাপ্টেন তামিম ইকবালের দলকে ভাসান জয়ের উচ্ছ্বাসে। পুরো চিত্রনাট্যটা যেন অলৌকিক ও বিস্ময়কর। আফিফ-মিরাজের ব্যাটিং ঝলকে লক্ষ্য টপকে ৪৮.৫ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে টাইগাররা তুলে ফেলে ২১৯ রান। ৭ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন আফিফ। ১১৫ বলে ১১ বাউন্ডারি ও এক ছক্কায় খেলেন ৯৩* রানের হার না মানা দুর্বার এক ইনিংস খেলেন তরুণ এ অলরাউন্ডার। ব্যাটিং নৈপুণ্য দেখিয়ে ম্যাচসেরা হন মিরাজ। ১২০ বলে ৯ বাউন্ডারিতে এনে দেন ৮১ রানের অসাধারণ এক ক্রিকেটীয় ইনিংস। তার আগে বল হাতে আলো ছড়ান তারকা এ অলরাউন্ডার। কোনো উইকেট না পেলেও করে গেছেন কিপ্টেমি বোলিং।
আফগানিস্তানের হয়ে ফজলহক ফারুকী একাই শিকার করেন ৪ উইকেট। ১০ ওভারে খরচ করেন তিনি ৫৪ রান। তার সঙ্গে একটি করে উইকেট পান মুজিব উর রহমান ও রশিদ খান।
আফগানিস্তানের ব্যাটিংয়ের শুরুটা মোটেই ভালো হয়নি। দলীয় ১১ রানে ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজকে ফিরিয়ে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। শুরুতে হোঁচট খেলেও রহমত শাহ ও হাশমাতুল্লাহ শহীদির ব্যাটিং দৃঢ়তায় বিপদ কাটিয়ে উঠে আফগানরা। পরে নাজিবুল্লাহ জাদরানের ফিফটিতে ৪৯.১ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২১৫ রানের সম্মানজনক পুঁজি গড়ে সফরকারীরা। জাদরান ৮৪ বলে ৪ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় ৬৭ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন। রহমতের ব্যাট থেকে আসে ৩৪ রান। ক্যাপ্টেন শহীদি দলীয় স্কোরে যোগ করেন ২৮ রান।
তাদের সঙ্গে মোহাম্মদ নবী ২০, ইব্রাহিম জাদরান ১৯ ও গুলবাদিন নাইব ১৭ রান এনে দেন। বাংলাদেশের হয়ে একাই তিন উইকেট নেন মুস্তাফিজুর রহমান। এজন্য ৯.১ ওভারে খরচ করেন তিনি ৩৫ রান। সঙ্গে দুটি করে উইকেট নেন সাকিব আল হাসান, তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম।
তার আগে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম ওয়ানডেতে টস ভাগ্যটা সহায় হয়নি বাংলাদেশ ক্যাপ্টেন তামিম ইকবালের। টস জিতে বাংলাদেশকে বোলিংয়ে পাঠান আফগানিস্তান অধিনায়ক হাশমাতুল্লাহ শহীদি। বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক হয়েছে মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান ইয়াসির আলী। ওয়ানডে ক্যাপ পেয়েছেন এ তরুণ ক্রিকেটার।
বাংলাদেশ একাদশ: লিটন দাস, তামিম ইকবাল (অধিনায়ক), সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), ইয়াসির আলী, মাহমুদউল্লাহ, আফিফ হোসেন, মেহেদী হাসান মিরাজ, শরিফুল ইসলাম, তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান।
আফগানিস্তান একাদশ: রহমানুল্লাহ গুরবাজ (উইকেটরক্ষক), ইব্রাহিম জাদরান, রহমত শাহ, হাশমতুল্লাহ শাহিদি (অধিনায়ক), নজিবুল্লাহ জাদরান, গুলবাদিন নায়েব, মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান, মুজিব উর রহমান, ইয়ামিন আহমেদজাই ও ফজলহক ফারুকী।সং
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ২১৫/১০, ৪৯.১ ওভার (ইব্রাহিম ১৯, রহমত ৩৪, শাহিদি ২৮, নাজিবউল্লাহ, নবি ১৭; মুস্তাফিজ ৩/৩৫, তাসকিন ২/৫৫, সাকিব ২/৫০, শরিফুল ২/৩৮)।
বাংলাদেশ: ২১৯/৬, ৪৮.৫ ওভারে (সাকিব ১০, আফিফ ৯৩*, মিরাজ ৮১*; ফারুকি ৪/৫৪, মুজিব ১/৩২ ও রশিদ ১/৩০)।
ফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজ ১-০ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
ম্যাচসেরা: মেহেদী হাসান মিরাজ।