ঐতিহাসিক সিরিজ জিতল টাইগাররা
প্রথমে বল হাতে দুরন্ত পারফরম্যান্স উপহার দেন টাইগাররা। পরে ব্যাট হাতে দাপট দেখান লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। তাতে বাংলার দামাল ছেলেরা ম্যাচ জিতে নেয় ৬ উইকেটে। এবং সেটা ৫ বল হাতে রেখে। দুর্বার এ জয়ে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতল বাংলাদেশ।
পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ৩-১ ব্যবধানে নিজেদের করে নিল টাইগাররা। ইতিহাস গড়ে এই প্রথম নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতল সাকিব-মুশফিকরা।
লক্ষ্যটা ছিল সহজ। কিন্তু শুরুটা ছিল যারপর নাই খারাপ। লিটন আউট হন মাত্র ৬ রানে। দলীয় মাত্র ৮ রানে ওপেনার লিটন দাস বিদায় নিলে বিপদে পড়ে যায় স্বাগতিকরা। তবে অপর প্রান্তে ব্যাট হাতে লড়তে থাকেন অন্য উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ নাঈম শেখ।
ওয়ানডাউনে নেমে সাকিব আল হাসান দলের হাল ধরার চেষ্টা করেন। জুটি গড়েন নাঈমের সঙ্গে। তবে ক্রিজে খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। তিনি ফেরেন মাত্র ৮ রান নিয়ে। দলীয় স্কোর তখন ৩২। পরে ভক্তদের হতাশ করেন দলের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। কোনো রান যোগ না করেই শূন্য রানে সাজঘরের পথ ধরেন এ উইকেটরক্ষক।
বাংলাদেশ শিবিরে তখন অজানা এক আশঙ্কা। ভক্ত-সমর্থকরা আগের ম্যাচের চিত্রনাট্যই যেন মনে করছিল বারবার। কিন্তু ক্যাপ্টেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ব্যাট হাতে নেমে দলের বিপদ কাটিয়ে তোলেন। চতুর্থ উইকেটে দুজনে গড়েন ৩৪ রানের পার্টনারশিপ। তাতেই গড়ে উঠে দলের জয়ের ভিত। ওপেনার নাঈম ২৯ রানে ফিরলেও ব্যাট হাতে লড়াইটা চালিয়ে যান রিয়াদ।
পঞ্চম উইকেটে এবার মাহমুদউল্লাহ পেয়ে যান তরুণ অলরাউন্ডার আফিফ হোসেনকে। পঞ্চম উইকেটে ২৯ রানের জুটি গড়ে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়ে তবেই মাঠ ছাড়েন দুজনে। ৪৮ বলে এক বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় ৪৩* রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলে অপরাজিত থেকে যান রিয়াদ।
দাপুটে ব্যাটিং দৃঢ়তায় ১৯.১ ওভারে মাত্র চার উইকেট হারিয়ে জয়ের লক্ষ্য টপকে ৯৬ তুলে ফেলে বাংলাদেশ। কিউদের হয়ে দুটি উইকেট নেন আজাজ প্যাটেল। কোল ম্যাককনকি পান বাংলাদেশ ইনিংসের বাকি উইকেট।
শুরু থেকে দাপুটে বোলিংয়ে নিউজিল্যান্ডকে চাপে ফেলে টাইগাররা। নাসুম আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমানের আগুনে বোলিংয়ে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা সফরকারীদের আটকে দেয় ৯৩ রানে। ফলে চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে জয়ের জন্য বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় মাত্র ৯৪।
উইল ইয়াং ফিফটির আভাস দিয়েও বঞ্চিত হন। ৪৬ রান নিয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। ক্যাপ্টেন টম লাথাম করেন ২১ রান। ফিন অ্যালেন যোগ করেন ১২। বাকি ব্যাটসম্যানরা কেউ দুই অঙ্কও ছুঁতে পারেননি। মিরপুরের মন্থর উইকেটে টাইগারদের বোলিং তোপ সামলে উঠতে না পেরে পুরো ২০ ওভারও খেলতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। ১৯.৩ ওভারে ৯৩ রানেই গুটিয়ে গেছে কিউইরা।
চারটি করে উইকেট শিকার করেন নাসুম আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান । একটি করে উইকেট নেন মেহেদী হাসান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
তার আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে চতুর্থ টি-টোয়েন্টিতে টস হেরে শুরুতে বল হাতে মাঠে নামে টাইগাররা। টস জিতেই ব্যাটিং বেছে নিয়ে বাংলাদেশকে ফিল্ডিংয়ে পাঠান সফরকারী দলের ক্যাপ্টেন টম লাথাম।
এ ম্যাচে বাংলাদেশের একাদশে কোনো পরিবর্তন আসেনি। তবে নিউজিল্যান্ড একাদশে পরিবর্তন এসেছে দুটি। বাদ পড়েছেন স্কট কুগেলেইজন ও জ্যাকব ডাফি। একাদশে ফিরেছেন হামিশ বেনেট ও ব্লেয়ার টিকনার।
বাংলাদেশ একাদশ: মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (অধিনায়ক), লিটন কুমার দাস, মোহাম্মদ নাঈম শেখ, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, আফিফ হোসেন, নুরুল হাসান সোহান, শেখ মেহেদি হাসান, মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন, মুস্তাফিজুর রহমান, নাসুম আহমেদ।
নিউজিল্যান্ড একাদশ: টম ল্যাথাম (অধিনায়ক), রাচিন রবীন্দ্র, উইল ইয়াং, টম ব্লান্ডেল, হেনরি নিকোলস, কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম, কোল ম্যাকনকি, এজাজ প্যাটেল, ফিন অ্যালেন, হামিশ বেনেট ও ব্লেয়ার টিকনার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউজিল্যান্ড: ৯৩/১০, ১৯.৩ ওভার (অ্যালেন ১২, ল্যাথাম ২১, ইয়াং ৪৬; নাসুম ৪/১০, মুস্তাফিজ ৪/১২)।
বাংলাদেশ: ৯৬/৪, ১৯.১ ওভার (নাঈম ২৯, মাহমুদউল্লাহ ৪৩*; আজাজ ২/৯, ম্যাককনকি ১/৩৪)।
ফল: বাংলাদেশ ৬ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ বাংলাদেশ ৩-১ ব্যবধানে নিশ্চিত করল।
ম্যাচসেরা: নাসুম আহমেদ।