জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ

  • স্পোর্টস ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

তামিম ইকবাল

তামিম ইকবাল

হাতের ব্যাট যেন হয়ে উঠল জাদুর কাঠি। আর তামিম ইকবাল নিজে বনে গেলেন ক্রিকেট জাদুকর। তাই তো চোটকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে পাঠিয়ে দিলেন মাঠের বাইরে। দেখালেন ব্যাটিং ঝলক। পেলেন দাপুটে এক সেঞ্চুরির দেখা। শেষ দিকে ব্যাট হাতে বিধ্বংসী ইনিংস খেললেন দীর্ঘ দিন পর জাতীয় দলে ফেরা নুরুল হাসান সোহান।

সুবাদে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা জিতল ৫ উইকেটে। এবং সেটা ১২ বল হাতে রেখে। দুর্বার এ জয় দিয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে স্বাগতিক জিম্বাবুয়েকে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করল টাইগাররা। নিজেদের দেশে ওয়ানডে ক্রিকেটে আফ্রিকান দলটি এই প্রথম হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশের কাছে।

বিজ্ঞাপন

শুরুতে ব্যাটিংয়ে নেমে জয়ের জন্য টাইগারদের সামনে ২৯৯ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য ছুঁড়ে দিয়েছিল স্বাগতিক জিম্বাবুয়ে। লক্ষ্যটা টপকে ৫ উইকেটের বিনিময়ে ৪৮ ওভারে ৩০২ রান তুলে ফেলে বাংলাদেশ। এ ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপ ক্রিকেট লিগে আরও দশটি পয়েন্ট পেল বাংলাদেশ। আর সিরিজ থেকে পেল পুরো ৩০ পয়েন্ট। ফলে ১২ ম্যাচ খেলে ৮ জয় আর ৪ হারে ৮০ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে টাইগাররা। ৯৫ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে রয়েছে ইংল্যান্ড।

ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৪তম শতক হাঁকিয়ে সাজঘরে ফেরেন তারকা এ ওপেনার। তামিম খেলেন ১১২ রানের চমৎকার এক ক্রিকেটীয় ইনিংস। তামিমের পর ক্রিজ থেকে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তবে তারকা এ অলরাউন্ডার আউট হয়েছেন শূন্য রানে। দাপুটে ব্যাটিংয়ের আভাস দিয়ে ছিলেন সাকিব আল হাসান। কিন্তু খুব বেশিক্ষণ ক্রিজে টিকতে পারেননি। বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার ৩০ রান করে ফেরেন ড্রেসিং রুমে।

বিজ্ঞাপন

৩২ রান করে ওয়েসলি মাধেবেরের বলে তাদিওয়ানাশে মারুমানির হাতে ক্যাচ দিয়ে ক্রিজ থেকে বিদায় নেন টাইগার ওপেনার লিটন দাস। মোহাম্মদ মিঠুন ৩০ রান যোগ করেন দলীয় স্কোরে। ২৬* রানে অপরাজিত থেকে যান আফিফ হোসেন। তার সঙ্গে ৪৫* রানের হার না মানা ঝড়ো এক ইনিংস খেলে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিয়ে তবেই মাঠ ছাড়েন নুরুল হাসান সোহান। জিম্বাবুয়ের হয়ে দুটি করে উইকেট নেন ডোনাল্ড তিরিপানো ও ওয়েসলি মাধেবেরে।

ব্যাট হাতে শুরুতে দ্যুতি ছড়ালেন ওপেনার রেগিস চাকাভা। পরে দাপট দেখালেন সিকান্দার রাজা আর রায়ান বার্ল। দুজনেই পেলেন দুরন্ত ফিফটির দেখা। ত্রয়ীর ব্যাটিং দৃঢ়তায় সবকটি উইকেট হারিয়ে ৪৯.৩ ওভারে ২৯৮ রানের চ্যালেঞ্জিং পুঁজি গড়ে জিম্বাবুয়ে।

দুরন্ত ব্যাটিংয়ে ফিফটির দেখা পেয়েছিলেন ওপেনার রেগিস চাকাভা। এগিয়ে যাচ্ছিলেন জাদুকরী তিন অঙ্কের দিকে। কিন্তু তাসকিন আহমেদের পেস তোপে সেটা আর হয়নি। তাসকিনের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরের পথ ধরার আগে চাকাভা খেলেন ৮৪ রানের অনবদ্য এক ক্রিকেটীয় ইনিংস। ডিওন মেয়ার্সের সঙ্গে তৃতীয় উইকেটে ৭১ রানের জুটি গড়ে দলের বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন তিনি।

৫৯ রানের দুরন্ত ইনিংস খেলে রায়ান বার্ল ফেরেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের বলে লিটন দাসের তালুবন্দী হয়ে। তার আগে সিকান্দার রাজা সংগ্রহ করেন ৫৭ রান। ষষ্ঠ উইকেটে দুজনে ১১২ রানের পার্টনারশিপ গড়ে দলকে এনে দেন বড় পুঁজি।

ক্যারিয়ারের ২০০তম ওয়ানডেতে দুটি উইকেট পেলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৩৪ রান করা ডিওন মেয়ার্সকে বোল্ড করেছেন দেশের এ তারকা অলরাউন্ডার। ক্যারিয়ারের এ বিশেষ ম্যাচে শুরুর দিকে মাহমুদউল্লাহ ফিরিয়ে দেন স্বাগতিক ক্যাপ্টেন ব্রেন্ডন টেলরকে। সাজঘরে ফেরার আগে দলীয় স্কোরে ২৮ রান যোগ করেন টেলর।

তার আগে টস হেরে শুরুতে ব্যাটিংয়ে নেমে ভালো শুরুর আভাস দিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। বিনা উইকেটেই তুলে ফেলেছিল তারা ৩৬ রান। এরপরই ঘটে ছন্দপতন। স্বাগতিকদের ব্যাটিং লাইন-আপে প্রথম আঘাত হানেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডারের এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পা দিয়ে সাজঘরে ফিরেন ওপেনার তাদিওয়ানাশে মারুমানি। ফেরার আগে দলীয় স্কোরে তিনি যোগ করেন মাত্র ৮ রান। মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে তিনটি করে উইকেট শিকার করেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।

প্রথম দুই ওয়ানডেতে টস ভাগ্য সহায় হয়নি ক্যাপ্টেন তামিম ইকবালের। অবশেষে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে টস জেতেন দেশসেরা এ ওপেনার। তবে বোলিং বেছে নেন তিনি। তাই শুরুতে বল হাতে মাঠে নামে টাইগাররা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

জিম্বাবুয়ে: ২৯৮/১০ (চাকাভা ৮৪, টেলর ২৮, মায়ার্স ৩৪, রাজা ৫৭, বার্ল ৫৯; তাসকিন ১/৪৮, সাইফ ৩/৮৭, মুস্তাফিজ ৩/৫৭, মাহমুদউল্লাহ ২/ ৪৫ ও সাকিব ১/৪৬)।

বাংলাদেশ: ৩০২/৫, ৪৮ ওভার (লিটন ৩২, তামিম ১১২, সাকিব ৩০, মিঠুন ৩০, সোহান ৪৫*, আফিফ ২৬*; জঙ্গুয়ে ১/৪৪, তিরিপানো ২/৬১ ও মাধেভেরে ২/৪৫)।

ফল: বাংলাদেশ ৫ উইকেটে জয়ী।

সিরিজ: বাংলাদেশ তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতল।

ম্যাচসেরা: তামিম ইকবাল।

সিরিজসেরা: সাকিব আল হাসান।