মুস্তাফিজ বলছিল দোস্ত তোর জন্য ভয় লাগছে’
চট্টগ্রাম টেস্ট নিয়ে অনেকেই অনেককিছু চিন্তা ও পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু কারো পরিকল্পনায় কি ছিল- এই টেস্টের প্রথম ইনিংস মেহেদি হাসান মিরাজ ব্যাট হাতে রাঙাবেন। দলে মূলত খেলেন তিনি স্পিনার হিসেবে; যে স্পিনার প্রয়োজনের সময় ব্যাট করতে পারে। কিন্তু সেই তিনি বল হাতে নেওয়ার আগে সিরিজের প্রথম টেস্টে অনবদ্য সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে আলো ছড়ালেন। টেস্টে এটি মেহেদি হাসান মিরাজের প্রথম সেঞ্চুরি। প্রথম শ্রেনীর ক্রিকেটে তার কোন সেঞ্চুরি ছিল না। সেই তিনি একেবারে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ আসরে সেঞ্চুরির আনন্দে ভাসলেন। চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয়দিনের খেলা শেষে নিজের সেই আনন্দ ভাগাভাগি করছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
প্রথম সেঞ্চুরির অনুভূতি প্রসঙ্গে..
আলহামদুলিল্লাহ্! আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া। খুব ভালো লাগছে যে, আসলে এরকম একটা সেঞ্চুরি পেয়েছি। খুব ভালো লাগছে এবং আসলে আনবিলিভেবল। আমার নিজের কাছেই অনেক ভালো লাগছে।
ক্যারিয়ারে এই সেঞ্চুরির ক্যারিয়ারে কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
টেস্টে আমি যখন শুরু করেছিলাম, তখন আমি হয়তো ভালো ব্যাটিং করতে পারছিলাম না। কিন্তু আমি আস্তে আস্তে চেষ্টা করেছি নিজেকে যতটুকু উন্নতি করা যায়। আমি মনে করি, গত কয়েকদিনে যা কাজ করেছি, তা অনেক ভালো হয়েছে, সেটার জন্য হয়তো আজকের ব্যাটিংটা ভালো হয়েছে, আল্লাহর রহমতে রান করতে পেরেছি।
ভালো ব্যাটিংয়ের রহস্য, তামিমের পরামর্শ কেমন কাজে লেগেছে?
আমি যখন সেদিন নেটে ব্যাটিং করছিলাম তখন তামিম ভাই আমাকে ২-১টা পরামর্শ দিচ্ছিলেন। এর আগেও আমি যখন ব্যাটিং করতাম তখন মুশফিক ভাই অনেক পরামর্শ দিয়েছিলেন। উনি যখন আগে আগে ব্যাটিং প্র্যাকটিশে আসতেন, আমাকেও নিয়ে আসতেন। উনিও ব্যাটিং করতেন, আমাকেও ব্যাটিং করাতেন। গত এক সপ্তাহ আগেও আমি তার সাথে ব্যাটিং নিয়ে অনেক কাজ করেছি। তারপর তামিম ভাই সেদিন আমাকে একটা পরামর্শ দিয়েছেন, জোরে বলগুলো কীভাবে খেলতে হবে? শরীরের দিকে আসা বলগুলো কীভাবে খেলতে হবে? তামিম ভাই শুধু একটা কথা বলেছেন যে, শরীরের দিকে আসা বলগুলো সোজা রাখার জন্য, এটা যেন ঘুরিয়ে না দেই। আজকে এটা অ্যাপ্লাই করেছি। গ্যাব্রিয়েল যখন আমাকে শরীর বরাবর বল করেছে, যতটা সম্ভব সোজা রাখতে পেরেছি এবং ছেড়ে দিয়েছি। এক সপ্তাহ আগে মুশফিক ভাইয়ের সঙ্গে যে ট্রেনিং করেছি, তখন মুশফিক ভাই একটা কথা বলেছেন যে, সোজা ব্যাটে খেলতে হবে এবং বাইরের বলে খোঁচা না দিয়ে বরং যেন ছেড়ে দেই। দুজনের পরামর্শই অনেক কাজে লেগেছে।
সাকিবের সঙ্গে ব্যাটিংয়ের সময় প্রসঙ্গে..
আমি যখন উইকেটে এসেছি, তখন একটু নার্ভাস ছিলাম। সাকিব ভাইয়ের সাথে আমি কথা বলছিলাম যে, ভাই কী করলে ভালো হয়। সাকিব ভাই একটা কথা বলেছেন নরমাল ক্রিকেট খেলতে এবং যদি কনফিডেন্ট থাকে যে মারলে পার হয়ে যাবে তবেই যেন সেই শট খেলি । যেমন মাঝখানে হয়তো আমি নিজের প্রেসার রিলিজ করতে একটা স্লগ সুইপের চেষ্টা করি, তখন সাকিব ভাই আমাকে বলেন যে, এখানে স্লগ সুইপের চেয়ে প্যাডল সুইপ করলে ভালো। তখন আমার মাথায় চিন্তাটা কাজে লেগেছে যে, আমি যদি স্লগ সুইপের বদলে প্যাডল সুইপ খেলি তাহলে হয়তো ভালো হবে, আউট হওয়ার চান্স কম থাকবে। এসব ছোট ছোট জিনিস অনেক গুরুত্বপূর্ণ, যা আমাকে হয়তো সাহস দিয়েছে। যেমন নামার আগে মুশফিক ভাই হয়তো দুই-একটা কথা বলেছে যে, এ উইকেটে অনেক সুযোগ আছে, ভালো কিছু যেমন ৭০ রানে নটআউট থাকতে পারবি- এ জিনিসগুলো যখন ড্রেসিংরুমে সিনিয়ররা যখন ব্যাকআপ করে জুনিয়র খেলোয়াড়দের, তখন কিন্তু আমাদের বুক অনেক বড় হয়ে যায় এবং ভালো করতে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করা যায়।
মুস্তাফিজকে পেলেন শেষ জুটিতে, কি আলাপ হলো তখন?
মুস্তাফিজ বলছিল, দোস্ত, আমার খুব ভয় লাগছে তোর টেনশনে! তোর তো ৯০ রান হয়ে গেছে, এখন যদি আমি আউট হয়ে যাই! আমি তখন তাকে একটা কথাই বলেছি, দোস্ত এটা তোর হাতেও না, আমার হাতেও না। তুই তোর নরমাল ক্রিকেট খেল। যদি আমার কপালে থাকে, আল্লাহ্ যদি আমার ওপর রহম করে তাহলে ১০০ হবে। এটা তো তোর হাতে নাই। তুই তোর মতোন খেল। চেষ্টা কর ভালো মতন খেলার। আমার যদি কপালে থাকে, তাহলে ১০০ হবেই। আমি ঐভাবেই মেন্টালিটি নিয়েই খেলে গেছি। চিন্তা করেছি যে, আল্লাহ্ যদি আমার কপালে রাখে তাহলে সেঞ্চুরি হবেই।