দেশের হয়ে খেলাটাই আমার কাছে বড় বিষয়, অন্যকিছু নয়: সাকিব
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরার আগে সাকিব আল হাসান ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলেছিলেন। কিন্তু সেই টুর্নামেন্টে সাকিব ব্যাট-বলে তেমন ভাল পারফরমেন্স করতে পারেননি। তখনই সাকিবকে নিয়ে অনেকের চিন্তা শুরু হয়ে যায়, লম্বা সময়ের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিবের ফেরাটা না জানি কেমন হয়?
তবে নিষেধাজ্ঞা শেষে প্রায় ১৪ মাস পরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে নিজের প্রথম ম্যাচেই সাকিব জানিয়ে দিলেন- কেন তিনি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার! ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই দুর্দান্ত বোলিং করলেন। ৭.২ ওভারে ২২ মেডেনসহ মাত্র ৮ রান খরচায় ৪ উইকেট! ব্যাট হাতে ৪৩ বলে ১৯ রান করেন। বোলিং কৃতিত্বের জন্য হলেন ম্যাচ সেরা।
এমন কৃতিত্বের দিনে ঘরোয়া ক্রিকেটে তার সাম্প্রতিক ‘দুর্বল’ পারফরমেন্স প্রসঙ্গে পুরানো কথাটা উঠতেই সাকিব যেন রাইজিং বলে বাউন্ডারি হাঁকানোর ভঙ্গিতে বললেন- ‘দেখুন আমার কাছে কাউন্ট করে না (ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফরমেন্স)। অনেকে হয়তো করে। কিন্তু আমি না। আপনারা করলে করতে পারেন। কিন্তু আমার কাছে এসব ম্যাটার (কোন বিষয়ই নয়) করে না। আমার কাছে বড় বিষয় হলো আমি দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করা এবং সেটা কিভাবে করি সেটাই ম্যাটার। সেদিক থেকে আমি হ্যাপি। তবে হ্যাঁ ব্যাট হাতে এই ম্যাচটা শেষ করে আসতে পারলে আরো ভালো লাগত।’
সাকিব জানিয়ে দিলেন ঘরোয়া ক্রিকেটে ব্যাট বা বল হাতে কখন কোথায় তিনি কি করলেন না করলেন, সেসব নিয়ে অনেকেই হয়তো চিন্তায় চুল ছিঁড়ে ফেললেও তিনি নির্বিকার। তার কাছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তথা দেশের জার্সি গায়ে খেলাটাই আসল খেলা।
একবছরের বেশি সময় ফিরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেই ম্যাচ সেরা পারফরমেন্স। এমন কিছু কি এই ম্যাচের আগে সাকিবের চিন্তায় বা স্বপ্নে ছিল? এই প্রশ্নের উত্তরও সাকিব দিলেন দার্শনিকের ভঙ্গিতে- ‘কেউ কি কোনো কিছু এক্সপেক্ট করতে পারে? মানুষ যা করতে পারে তা হলো চেষ্টা ভালো করা খারাপ করা আলটিমেটলি কপালের ব্যাপার। একজন খেলোয়াড় সব সময় যেটা করতে পারে তা হলে চেষ্টা। শতভাগ চেষ্টা।’
সাকিব এই ম্যাচে সেই চেষ্টাই করেছেন। আর তাই ম্যাচে দু’দলের ২২ জন খেললেও সাকিবের চেষ্টাটাই সেরা সাফল্য পেল!
বিশ্বকাপে তিন নম্বর ব্যাটিংয়ে নেমে সাকিব দারুণ সাফল্য পেয়েছিলেন। দুটো সেঞ্চুরি সহ ৬০৬ রান করেছিলেন। অথচ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে চলতি সিরিজে সাকিবের ব্যাটিং অর্ডার বদলে গেছে। চার নম্বরে ব্যাট করতে নামছেন তিনি। তিন নম্বর জায়গা ছেড়ে দিয়েছেন তিনি নাজমুল হোসেন শান্ত’র জন্য। ব্যাটিং অর্ডারের এই বদলি প্রসঙ্গে সাকিবের জবাব পরিষ্কার, ‘দেখুন, কোচ, অধিনায়ক, টিম ম্যানেজমেন্ট একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা খেলোয়াড় হিসেবে আমাকে রেসপেক্ট করতে হবে। আমি রাজি না অ-রাজি সেটা বড় কথা না। সব সময় আমি টিমের হয়ে খেলার চেষ্টা করি। আমার কাছে ব্যক্তিগত অর্জনের থেকে দলগত অর্জন সব সময়ই বড় মনে হয়। এটা বড় কোনো পার্থক্য করবে না মনে হয়।’
সিরিজের প্রথম ম্যাচে অভিষেক হয়েছে পেসার হাসান মাহমুদের। তরুণ এই পেসার জীবনের প্রথম ম্যাচেই তিন উইকেট পেয়েছেন। হাসান মাহমুদের পারফরমেন্স প্রসঙ্গেও সাকিব বাস্তবতার পথেই হাঁটলেন- ‘কাউকে আপনি এক ম্যাচে জাজ করবেন না। এই ম্যাচে সে ভালো করেছে। এক বছর যেতে দেন। তারপর এই প্রশ্ন করতে পারেন।’