জাপায় মহাসচিব বাবলু, প্রমোশন না ডিমোশন

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু/ছবি: সংগৃহীত

জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু/ছবি: সংগৃহীত

জিএম কাদের’র প্রমোশনের বিরোধীতা করে মহাসচিব পদ খুইয়েছিলেন জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। সেই বাবলুকে এবার মহাসচিব পদে নিয়োগ দিলেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান খোদ জিএম কাদের।

ক্ষমতা কিছুটা বেশি হলেও কো-চেয়ারম্যান বাবলুর এটি প্রমোশন হলো নাকি ডিমোশন হলো বলা কঠিন। যদি মহাসচিব পদ অতিরিক্ত দায়িত্ব হয় তাহলে এক রকম। আর যদি শুধু মহাসচিব পদ নির্ধারিত হয় তাহলে তাকে ডিমোশন বলাই যুক্তিযুক্ত হবে। জাপার গঠনতন্ত্র অনুযায়ী মহাসচিবের একধাপ উপরের পদ কো-চেয়ারম্যান। আর সেই পদেই ছিলেন জিয়াউদ্দিন আহমদে বাবলু। যদিও মাহসচিব হিসেবে নিয়োগের ওই চিঠিতে কোনো কিছুই খোলাসা করা হয় নি।

বিজ্ঞাপন

যুগ্ম-দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলম স্বাক্ষরিত এক খবর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী জিএম কাদের এম পি ২৬ জুলাই এক সাংগঠনিক আদেশে জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ বাবলুকে পার্টির মহাসচিব হিসাবে নিয়োগ প্রদান করেছেন। উল্লেখ্য যে, জিয়াউদ্দিন আহম্মেদ বাবলু মহাসচিব হিসেবে মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি'র স্থলাভিষিক্ত হবেন। জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রের ২০/১(১)ক উপধারা এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ আদেশ অদ্য ২৬ জুলাই ২০২০ থেকে কার্যকর হবে।

যুগ্ম-দপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আলমকে প্রশ্ন করা হলে তিনিও খোলাসা করতে পারেন নি। তিনি বলেছেন, কো-চেয়ারম্যানও মহাসচিব পদে দায়িত্ব পালন করতে পারে। এতে কোনো বাঁধা নেই। পাল্টা প্রশ্ন ছিল, তাহলে তো অতিরিক্ত দায়িত্ব কথাটি চিঠিতে থাকার কথা। জবাবে বলেন, হ্যাঁ তা থাকলে ভালো হতো।

পরে পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের’র সঙ্গে কথা বলে তার বরাত দিয়ে বলেন, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবং মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। অতিরিক্ত দায়িত্ব নয়।

রাজনীতিতে নাকি শেষ বলে কিছু নেই। আবার কেউ স্থায়ী শত্রু, কিংবা কেউ স্থায়ী মিত্র বলে কোনো কথা নেই। বহুল প্রচলিত এক প্রবচনেই আরেকবার সত্য বলে প্রমাণিত হলো। জিএম কাদের ও জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু সম্পর্কটা অনেকটা সাপ-নেউলের মতো ছিল। বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচন এবং পরবর্তীতে একইসঙ্গে সরকার ও বিরোধীদলে থাকা নিয়ে মত পার্থক্য চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এরশাদের উপস্থিতিতে জনসভায় (আইডিইবি মিলনায়তন) দু’জনেই তর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। এমনকি তৎকালীন মহাসচিব বাবলু সেদিন ক্ষুব্ধ হয়ে সভামঞ্চ থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। সেদিন অল্পের জন্য হাতাহাতির থেকে রক্ষা পায়।

কিছুদিন পর রংপুরের এক জনসভায় ছোটভাই জিএম কাদেরকে কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা দেন এরশাদ। এরপর ক্ষোভে ফেটে পড়েন বাবলু। পার্টির চেয়ারম্যানের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে বসেন মহাসচিব। এমনকি রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করে পাল্টা জাতীয় পার্টি গঠনের পথে এগুতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে রওশন এরশাদকে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ঘোষণা করে ভাঙন ঠেকান এরশাদ। আর (২০১৬ সালের জানুয়ারি) দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে মহাসচিব বাবলুকে অপসারণ করেছিলেন এরশাদ। যদিও তখন পর্যন্ত জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রে কো-চেয়ারম্যান পদ বলে কিছু ছিল না। পরে ২০১৬ সালের কাউন্সিলে গঠনতন্ত্র সংশোধনী এনে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান এবং কো-চেয়ারম্যান পদ যুক্ত করা হয়। এখন ২০২০ সালের কাউন্সিলে কো-চেয়ারম্যান পদ বাড়িয়ে ৭ করা হয়েছে।

আগাগোড়া রওশন পন্থী বলে পরিচিত বাবলু হঠাৎ করে কাদের’র ঘনিষ্ট হয়ে উঠেছেন। যদিও তারা এখন বৈবাহিক সূত্রে শ্বশুর-জামাই সম্পর্কে আবদ্ধ। ২০১৭ সালের এপ্রিলে জিএম কাদের’র বোন মেরিনা রহমানের মেয়ে মেহেজেবুন নেসা টুম্পার সঙ্গে বিবাহে আবদ্ধ হন বাবলু।

জাতীয় পার্টির নতুন মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু

মহাসচিব পরিবর্তনে জাপার মিশ্র প্রতিক্রিয়া