নিয়মিত-অনিয়মিতদের নিয়েই ছাত্রদলের কমিটি চায় বর্তমান নেতারা

  • শিহাবুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

নিয়মিত এবং অনিয়মিত ছাত্র মিলেই ছাত্রদলের নতুন কমিটি চান ছাত্রদলের বর্তমান নেতারা। তাঁরা বলছেন, বিএনপি দীর্ঘ সময় ক্ষমতার বাইরে। ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায়, যদি নতুন কমিটি করার সময় বয়স সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে, বিপুল নেতা-কর্মী বাদ পড়ে যাবেন। অথচ তারা সরকার বিরোধী আন্দোলনসহ সব সময় দলে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন।

ছাত্রদলের বর্তমান নেতারা বলছেন, ছাত্রদলে সিনিয়র ও জুনিয়র মিলেই এক বছরের জন্য একটি কমিটি দ্রুত করা হোক। পরের বছর আরেকটি কমিটি। এভাবে পর পর দুই বছর কমিটি দিলে বয়সের ব্যবধান কমে আসবে। একই সঙ্গে যারা গত ৮-৯ বছর ধরে দলের জন্য কাজ করছেন কোনো পদ না পেয়ে, তারা বঞ্চিত হবেন না। কিন্তু বয়স সীমাবদ্ধ করে দিলে আন্দোলন সংগ্রামে থাকা অথচ পদে ছিলেন না তারা বঞ্চিত হবেন। যা তাদের প্রতি অমানবিক কাজ করা হবে।

বিজ্ঞাপন

এদিকে গত ২৭ মে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির বর্তমান নেতারা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে স্মারকলিপি পাঠিয়েছেন। ওই দিন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতারাসহ বিভিন্ন ইউনিটের প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী একত্রিত হয়ে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর কাছে ওই স্মারকলিপি জমা দেন।

স্মারকলিপিতে ছাত্রদলের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে মূলত তিনটি অনুরোধ করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে, কমিটি গঠনে বয়সের সুনির্দিষ্ট সীমারেখা না রেখে ছাত্রদলের কমিটি গঠনের চিরাচরিত ঐতিহ্যকে অনুসরণ করে একটি ধারাবাহিক কমিটি আগামী বছরের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত গঠন করা, পরবর্তীতে স্বল্পমেয়াদি একটি ধারাবাহিক কমিটি গঠন করা ও বর্তমান কেন্দ্রীয় সংসদের সঙ্গে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, মহানগর ও কলেজ সমূহের সমন্বয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা।

ছাত্রদলের সর্বশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছিল ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর। যার মেয়াদ ছিল ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত। মেয়াদ শেষ হওয়ার আড়াই বছর পার হলেও নতুন কমিটি করেনি বিএনপি। তাই দলের সিনিয়র নেতারা চাইছেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা ও আন্দোলন জোরদার করতে দ্রুত ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠন।

ছাত্রদল নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠন করতে একটি সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। যে কমিটিতে রয়েছেন ছাত্রদলের সাবেক নেতারা। এদের মধ্যে রয়েছেন, শামসুজ্জামান দুদু, আমান উল্লাহ আমান, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, শহিদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, এবিএম মোশররফ হোসেন, শফিউল বারী বাবু, আবদুল কাদির ভূইয়া জুয়েল, আজিজুল বারী হেলাল, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, হাবিবুর রশিদ হাবিব।

ছাত্রদলের সহ সভাপতি নাজমুল হাসান বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'আমাদের চাওয়া সবার একটাই, যে এক বছরের জন্য একটি কমিটি হোক, সেখানে সিনিয়র-জুনিয়র মিলে হোক। পরের বছর আরেকটি কমিটি হোক, তাহলে সবার এজ লিমিট (বয়সসীমা) অটোমেটিক (স্বয়ংক্রিয়ভাবে) কমে যাবে, বয়সের জন্য কেউ বাদ যাবে না। এটাই আমাদের মূল চাওয়া।

তিনি বলেন, আন্দোলন সংগ্রামে যারা কাজ করেছেন, মামলা খেয়েছেন, কারাভোগ করেছেন, আহত হয়েছেন, তাদের হঠাৎ করে একটি নির্দিষ্ট বয়স বেধে দিয়ে বাদ দেওয়া অমানবিক।

তিনি বলেন, শোনা যাচ্ছে, কমিটি করার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ বয়স ২৯ ধরে দেওয়া হবে। কিন্তু এটা করলে লাখ লাখ নেতা-কর্মী বাদ পড়ে যাবে। আমরা এমনিতেই বিরোধী দলে, তারপর অনেক দিন ধরে কমিটি হয় না। দেখা যাবে যে, ৭-৮ বছর দলের জন্য কাজ করেছে কিন্তু কোনো পদ পায়নি, অথচ বয়স ৩০ বা ৩১, ৩২ হয়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে তারা বাদ পড়ে যাবেন। এজন্য আমরা চেয়েছি, বয়সের লিমিট (সীমা) না দিয়ে সিনিয়র-জুনিয়র মিলে কমিটি করা হোক।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/May/30/1559190848126.jpg

বর্তমান কমিটির ছাত্রদলের সহ সভাপতি এজমল হোসেন পাইলট বার্তা২৪.কমকে বলেন, 'আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে, সার্চ কমিটিকে কিছু প্রস্তাবনা পাঠিয়েছি। এখন বর্তমান কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তিনি কথা বলবেন, তারপর সিধান্ত নেওয়া হবে। আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হবে। আর এখন কীভাবে, কি করা যায় সেগুলো নিয়েই কথা হচ্ছে।

তিনি বলেন, 'আমরা টানা তিনবারের বিরোধী দল, সেখানে একটু পরিপক্ক নেতৃত্ব দরকার, সাহসী নেতৃত্ব দরকার। এখন আমরা যদি সরকারি দলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাটি সেটা তো হয় না। একটু সমালোচনা হতেই পারে, কিন্তু সংগঠনের প্রশ্নে আপস করা যাচ্ছে না। আমাদের নেত্রী জেলে আছেন, সত্যিকার অর্থেই আমরা চাই একটা আন্দোলন মুখর কমিটি হোক।’

 তিনি আরও বলেন, বিরোধী দল হিসেবে চাপ আছে, তো এরকম নেতৃত্ব দিল যে, চাপই নিতে পারল না, তাহলে তো হবে না। ছাত্রলীগে যে কেলেঙ্কারি হলো, এসব অপরিপক্বতার কারণে হয়েছে। তাদের ছেলেদের মধ্যে যদি সাহসিকতা থাকতো তাহলে এগুলো হতো না।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, কাদের নিয়ে কমিটি করা হবে তা এখনো সুনির্দিষ্ট করা হয়নি। তবে আমাদের নেতা তারেক রহমান সকল নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলছেন। এরপর কমিটি করা হবে। তিনি বলেন, ছাত্ররাই ঠিক করবে তাদের নেতৃত্ব কারা দেবেন। আমরা শুধু তাদের নেতৃত্ব বাছাইয়ে পরামর্শ ও সহযোগিতা করব।