বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, একটি গণতান্ত্রিক বিশ্বাসী দল ক্ষমতায় থাকলে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন স্থানীয় সরকারে হওয়া সম্ভব। জাতীয় না স্থানীয় সরকার নির্বাচন আগে, এধরণের বিতর্ক করে জাতীয় সরকারকে পিছিয়ে দেয়ার কিছু নেই।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টায় জাতীয় শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
রিজভী বলেন, লড়াই তো শুধু রাস্তাঘাটে লড়াই করা না, আমাদের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার জন্য লড়াই করতে হবে। আমরা যাতে আইনের শাসন, মানবিক সাম্য, ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে পারি, সুবৃহৎ গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে পারি, আমরা যদি গণতন্ত্রের বিরাট উষার দেখতে চাই তাহলে আমাদের এই শর্তগুলোকে নিশ্চিত করতে হবে। শুধু অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন চাওয়া না, এটা নিশ্চিতও করতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে রুহুল কবির রিজভী বলেন, এখন একটি অন্তর্বর্তী সরকার, এই সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করা, তার সাথে আরও কিছু আনুষাঙ্গিক কাজ আছে, সংস্কার আছে, যেটা প্রয়োজনীয় সংস্কার, যে সময় আছে সে সময়েই করা সম্ভব। কিন্তু জনগণকে আশ্বস্ত করতে হবে।
আগে স্থানীয় সরকার না পরে জাতীয় সংসদ এই বিতর্কে অন্তর্বর্তী সরকারের অংশগ্রহণ করা উচিত নয় উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন, এই সরকারকে জনগনের ক্ষমতা জনগণকে ফিরিয়ে দিতে হবে। জনগণ নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে যে সরকার গঠন করবে তারাই নির্ধারণ করবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন বা অন্যান্য নির্বাচন কখন হবে।
বিএনপির আমলে স্থানীয় সরকারের কথা স্বরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় চট্টগ্রামে মহিউদ্দিন জিতেছে, সিলেটে কামরা জিতেছে, ঢাকায় হানিফ জিতেছে। রাজনৈতিক দলের অধীনে স্থানীয় নির্বাচন কখন খারাপ হয়েছে? বিশেষ করে বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে হয়নি কিন্তু বিএনপি তো নিশ্চিত করেছে। বিএনপি ক্ষমতায় ঢাকায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী হানিফ জিতেছে, সিলেটে কামরান জিতেছে। এটা কি করে সম্ভব হয়েছে? চট্টগ্রামে মহিউদ্দিন দুই বার জিতেছে দুইবারই বিএনপি ক্ষমতায়।
বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, যে দেশের জনগণ এবং তরুণ প্রজন্ম, আজকে যাদের বয়স ১৮ বছর , ২১ বছর তারা কেউ ভোট দিতে পারেনি। তারা ভোট কী জানে না। কারণ ১৭ বছর ভোট হয়েছে চতুষ্পদ জন্তু ঘুমিয়ে ভোট কেন্দ্রে। ১৭ বছর দিনের ভোট রাতে হয়েছে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে ধ্বংস করেছে। ভোট ধ্বংস করেছে। এগুলোকে নিশ্চিত করা। জনগণকে আশ্বস্ত করার জন্যই একটি অবাধ, সুষ্ঠু, ইনক্লুসিভ, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে হবে। এটা সরকারের দায়িত্ব।
ফেসবুকে বিএনপি নেতাদের প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি প্রচারণা নিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমাদের কোন কোন নেতা ফেসবুকে বলছেন, আগামী দিনে বিএনপি ক্ষমতায় আসলে তারেক রহমান প্রধানমন্ত্রী হবেন, বেগম খালেদা জিয়া রাষ্ট্রপতি হবেন। এটা তার ব্যক্তিগত অভিমত হতে পারে কিন্তু এটা আমাদের দলের অবস্থান নয়।
তিনি বলেন, আমাদের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রাস্তায় দাড়াতে সাহস যুগিয়েছে ২১ ফেব্রুয়ারি। আমরা এই পথ ধরেই নব্বই অর্জন করেছি। এরশাদের মত ঘৃণ্য স্বৈরশাসকের পতন ঘটানো হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় জনগণের কাধের ওপর ভয়ংকর অত্যাচার করে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ১৭ বছর ক্ষমতা দখল করে ছিলেন সেই রক্তপিপাসু শেখ হাসিনা পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় ৫ আগস্ট। ওগুলো সব কিছুতেই ২১ ফেব্রুয়ারি প্রেরণা যুগিয়েছে, উদ্বুদ্ধ করেছে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আব্দুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাসিরুদ্দিন অসীম, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন প্রমুখ।