আ.লীগের বিচারের জন্য সরকার কি করেছে, প্রশ্ন সালাহউদ্দিনের
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রেখে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, সরকারের অংশ হিসেবে যদি কোন উপদেষ্টা বলেন আমরা আওয়ামী লীগের বিচার চাই, তাহলে বিচার চাওয়ার জন্য তো আপনারা কিছু করলেন না?
মঙ্গলবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন কর্তৃক আয়োজিত 'জুলাই গণঅভ্যুত্থান: গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা' শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংগঠন হিসেবে বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের আইনে একটা সংশোধনি আনার কথা ছিলো সংবিধানের আর্টিকেল ৪৭ এর উপর ভিত্তি করে কিন্তু সেখান থেকে সরকার সরে গেলেন। এখন যদি সরকারের অংশ হিসেবে কোন উপদেষ্টা যদি বলেন আমরা আওয়ামী লীগের বিচার চাই, তাহলে বিচার চাওয়ার জন্য তো আপনারা কিছু করলেন না? আর বিচার করার জন্য আমরা দাবি করছি, আপনারা দাবি করছেন, জনগণ দাবি করছে ফ্যাসিবাদী শক্তি, গণতন্ত্র হত্যাকারী শক্তি, গণহত্যাকারী, মানবতাবিরোধী অপরাধে যারা দায়ী সে সংগঠনের বিচার হোক। বিচারের মাধ্যমে নির্ধারণ হোক, তাহলে জনগণ মেনে নিবে।
তিনি বলেন, আমরা সবাই বিচ্ছিন্নভাবে কথা বলছি, গতকালও দেখলাম আওয়ামী লীগ এই দেশে নির্বাচন করতে দেয়া হবে না, নিষিদ্ধ করা হবে। এই বিষয়ে তো আমরা পরিষ্কার বলেছি, বাংলাদেশের জনগণ নির্ধারণ করবে যে দল ফ্যাসিবাদী চরিত্রে গণহত্যা চালিয়েছে, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য যে দল দায়ী, যে দলের সরকার দায়ী অনির্বাচিত হলেও, শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীত্ব করেছেন অনির্বাচিত সরকারের, অবৈধ সরকারের। তার সিদ্ধান্তে এবং আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে এই দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ হয়েছে। সুতরাং ব্যক্তির সাথে সেই সংগঠনেরও বিচার করতে হবে।
সাবেক অবৈধ প্রধানমন্ত্রীসহ সবার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে এবং অন্যান্য আদালতে মামলা হয়েছে, বিচার নিশ্চিত করতে হবে উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, কিন্তু সংগঠন হিসেবে একটি রাজনৈতিক দলের বিচার করার প্রভিশন আর্টিকেল ৪৭ এ আছে বাংলাদেশের বর্তমান সংবিধানে। যেহেতু সংবিধান জীবিত এবং এই সংবিধান অনুযায়ী এই সরকার পরিচালিত হচ্ছে, শপথ নিয়েছে বৈধ সরকার হিসেবে। সুতরাং সংগঠন হিসেবে বিচারের জন্য আমরা তো এখনো ততবেশি সোচ্চার নই। কেউ তো উচ্চারণ করছে না। বিচ্ছিন্নভাবে যদি বলি ওমুককে নির্বাচন করতে দিবো না, আইন কি বলে? নির্বাচন কমিশন যদি তফসিল ঘোষণা করে সেই সময় পর্যন্ত যারা নিবন্ধন বৈধ থাকবে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে।
তিনি বলেন, আমরা যদি এই সরকারকে সফল হতে দিতে চাই তাহলে এই সরকারকে পরিচালনা করার জন্য আমাদে যথেষ্ট সমালোচনা করতে হবে। এমন কি আমাদের সড়কে আন্দোলনও করতে হতে পারে সরকারকে সঠিক রাস্তায় নিয়ে আসার জন্য। সরকার মাত্রই সিদ্ধান্তের মধ্যে ভুল করতে পারে। সেটা সকল সরকারের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এক্ষেত্রে গণমাধ্যগুলোর ভূমিকা যেমন আছে রাজনৈতিক, সামাজিক শক্তিগুলোরও তেমন ভূমিকা আছে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মাঝে মাঝেই বলেন যে, আমরা বেশি বেশি যেন সমালোচনা করি। সরকার যেন সঠিক পথে থাকে। এই সরকারের একটা গুণ আছে, সরকার মাঝে মধ্যে ভুল সিদ্ধান্ত নিলেও সমালোচনার মধ্যে সেগুলো শুধরায়, গো ধরে বসে থাকে না। সরকার যখন শোধরায় তখনই মনে করতে হবে এই সরকার জনগণের সরকার।
সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, নির্বাচন যদি বিলম্বিত হয় তাহলে কেন বিলম্বিত হবে সে যুক্তিগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। ইতিমধ্যে ৬ মাস পার হয়েছে। সংস্কার কমিশনগুলো রিপোর্ট প্রদান করেছে সরকারের কাছে। সেই রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে সামাজিক শক্তি ও রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলার কথা। রিপোর্ট প্রদানের পরে প্রায় ১৪/১৫ দিন পার হয়ে গেছে সে উদ্যোগ এখনো দেখা যায়নি। আমি আশা করি খুব শীঘ্রই আপনারা সামাজিক শক্তিগুলো, রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যমত পোষণ করতে পারে সেগুলো চিহ্নিত করুন।