দিন যতোই গড়াচ্ছে নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ততোই সরব হচ্ছে। নির্বাচন ও সরকারের রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে কথার হচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। বিশেষ করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টাদের বক্তব্যে কড়া প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছেন বিএনপির নেতারা। এছাড়া আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচেনে নিজেদের শক্ত অবস্থান জানান দিতে চষে বেড়াচ্ছেন নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায়, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি।
এমন পরিস্থিতিতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সংস্কার, উন্নয়ন ও বিএনপির রাজনৈতিক ভাবনা নিয়ে বার্তা২৪.কম-এর সঙ্গে একান্তে কথা বলেছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন স্টাফ রিপোর্টার মো. নজরুল ইসলাম।
বার্তা২৪.কম: আপনার নির্বাচনী এলাকার উন্নয়ন নিয়ে ভাবনা কী?
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স: হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলা নিয়ে আমার নির্বাচনী এলাকা। বিগত সময়ে সীমান্তবর্তী এই আসনে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। তাই এ অঞ্চলে প্রথমেই যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কাজ করতে হবে। এতে সাধারণ মানুষের উন্নয়ন হবে, বিশেষ করে কৃষকদের উৎপাদিত ফসল খেত খামার থেকে সহজে পরিবহন করে বাজারে বিক্রি করতে পারবে। সেজন্য আমরা স্টেপ ওয়ান, স্টেপ টু আকারে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের তালিকা করছি, সেভাবেই কাজ করছি। সীমান্তে মাদক নিয়ন্ত্রণে জিরো টরারেন্স নীতি গ্রহণ করা হয়েছে।
এছাড়া এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে গত তিন বছর ধরে বন্ধ থাকা গোবরাকুড়া-কড়ইতলী স্থলবন্দর চালু করা হয়েছে। এই বন্দর দিয়ে শুধু আমদানি নয় যেন রফতানিও করা যায় সেটার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। আমাদের ময়মনসিংহের মাছ আখাউড়া হয়ে ইন্ডিয়াতে রপ্তানি হয়। এসব মাছ আমাদের বন্দর দিয়েই রপ্তানি করবো।
বার্তা২৪.কম: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স: ৫ আগস্ট আমাদের জাতির ইতিহাস একটি স্মরণীয় দিন। এদিন একটা কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থাকে হটিয়ে আমরা দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জন করেছি। গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের পথে নতুন করে যাত্রা শুরু হয়েছে। এই সরকারকে দেশের সংস্কারের জন্য যৌক্তিক সময় দেওয়ার কথা আমরা বলেছি। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় যে সংস্কারগুলো শেষ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার কথা বলেছি। এটা তিন মাসের বাইরে গিয়ে এক বছরও হতে পারে। তবে এই সময়ের মধ্যে জনগণের যে চাহিদা তা মেটাতে হবে। আমি মনে করি বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সরকারের হানিমুন পিরিয়ড শেষ হয়েছে। জনগণ বৃহত্তর স্বার্থে অনেক কিছু মেনে নিয়েছে।
এ সরকারের বড় সফলতা হচ্ছে দেশের মানুষ আজ মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিতে পারছে। দেশ মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিবেশে রয়েছে। সংস্কার এবং নির্বাচনের পথে যাত্রা শুরু করেছে। আমরা আশা করি এটা আরো সফল হবে।
আর ব্যর্থতার কথা যদি বলি, জনগণের সকল চাহিদা যেমন নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম বৃদ্ধি, আওয়ামী লীগের আমলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দুর্নীতির মাধ্যমে অনিয়মের মাধ্যমে, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের দাম আকাশচুম্বী হয়েছিল। জনগণের স্বাভাবিক একটা প্রত্যাশা ছিল
যেহেতু আওয়ামী লীগের অবসান হয়েছে এখন হয়তো এটা হয়তো জনগণের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। কিন্তু প্রত্যাশিত সেই আকাঙ্ক্ষা আমরা পাইনি।
বার্তা২৪.কম: সংসদ নির্বাচন ও রাষ্ট্র কাঠামোর সংস্কার নিয়ে বিএনপির পরিকল্পনা কী?
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স: সংস্কার আমরা চাই। তবে সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া। আমরা কিন্তু বলিনি যে তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন দিন। সংস্কার যুগ যুগ ধরেই চলবে। তবে সেটি যৌক্তিক সময়ের মধ্যে শেষ করে সরকারকে নির্বাচনের দিকেই এগিয়ে যেতে হবে। সমস্ত সংস্কার যদি আমরা একবারে করতে চাই তাহলে তো ৫-১০ বছর সময় লেগে যাবে। এখন যে সংস্কার গুলোর কথা বলা হচ্ছে তার দু একটি ছাড়া সবগুলি আমাদের ৩১ দফার মধ্যে রয়েছে। সংস্কার কমিশন যে প্রস্তাবগুলো সুপারিশ করবে সেগুলো আমরা যদি নির্বাচিত হই তা অবশ্যই বাস্তবায়ন করবো। গত ৫ আগস্ট যে পরিবর্তন হয়েছে এটা শুধু ক্ষমতার হাত বদল নয়, এর মাধ্যমে রাজনৈতিক পরিবর্তনও হবে।
বার্তা২৪.কম: আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী? আপনার কাছে জানতে চাই।
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স: আওয়ামী লীগ তো একটি ভয়ঙ্কর দল। তাদের ভয়ঙ্কর রূপ এ দেশের জনগণ দেখেছে। তারা যেভাবেই ফিরে আসার চেষ্টা করুক না কেন এদেশের জনগণ তাদেরকে আর গ্রহণ করবে না।
বার্তা২৪.কম: রাজনীতির ভিত্তি ৭১ নাকি ২৪ হবে?
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স: ৭১ তো আমার চেতনা, সেটা সঙ্গে অন্য কিছু তুলনা চলে না। তবে হ্যাঁ, এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ৭৫ এর চেতনা, ৭ নভেম্বরের চেতনা, ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের চেতনা এবং ২৪ এর ছাত্র জনতার এই আন্দোলনের চেতনা।
বার্তা২৪.কম: ছাত্রদের রাজনৈতিক দলকে কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স: বিএনপি বহুদলীয় গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। যে কেউ রাজনৈতিক দল গঠন করলে আমরা তাদেরকে আমরা স্বাগতম জানাই। তবে রাষ্ট্রীয় শক্তিকে ব্যবহার করে বিভিন্ন প্রশাসনকে ব্যবহার করে যদি কোনো রাজনৈতিক দল গঠন করার চেষ্টা করা হয় জনগণ এগুলোকে কখনোই মেনে নেবে না। উপদেষ্টাদের মধ্য থেকে কেউ যদি রাজনৈতিক দল গঠন করেন তাহলে স্বাভাবিকভাবে এই সরকার তার নিরপেক্ষতা হারাবে। এজন্য আমাদের মহাসচিব বলেছেন, নির্বাচনের জন্য একটা নির্দলীয় সরকারের প্রয়োজন হবে।
বার্তা২৪.কম: ছাত্রদের সঙ্গে কী বিএনপির দূরত্ব বাড়ছে?
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স: এ বিষয়ে আমার জানা নেই। আসলে তারা তো তরুণ এই বয়সে একটু অস্থিরতা, উত্তেজনা থাকে। সেই অস্থিরতা বা উত্তেজনার কারণে কিনা তা জানিনা। আমাদের বিএনপি মহাসচিব একটি কথা বললো সেই কথার যেভাবে তারা প্রতিক্রিয়া তারা জানালো, ঠিক একই কথা যখন জামাতের আমির ড. শফিকুর রহমান বললো তখন তারা সেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখালো না। এখানে আমরা একটা কিন্তু খুঁজে পাই।
বার্তা২৪.কম: বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্কে ভাটা পড়েছে কি না?
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স: বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল, জামায়াত ভিন্ন একটি রাজনৈতিক দল। তাদের ভিন্ন ভিন্ন নীতি আদর্শ রয়েছে। আমাদের সঙ্গে জামায়াতের যে ঐক্য ছিল তা ইস্যুভিত্তিক। এখানে রাজনৈতিক প্রশ্নে আমাদের কোনো ঐক্য নেই। তবে কোনো কোনো দলের মধ্যে যে অস্থিরতা দেখতে পাচ্ছি, বিএনপিকে ঘায়েল করার জন্য নানান রকম যে বয়ান, এসব বয়ানে আওয়ামী লীগের বয়ানের মিল খুঁজে পাচ্ছি। এরকম বয়ান যদি দিতে থাকে জনগণ সিদ্ধান্ত নিবে কী করতে হবে।
বার্তা২৪.কম: জিয়াবাদ-মুজিববাদ আমরা কোনো বাদ বাংলাদেশে চাই না; এ প্রসঙ্গে কি বলবেন?
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স: এই ভদ্রলোক বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় থাকার চেষ্টা করেন বলে আমার কাছে মনে হয়েছে। জিয়াবাদ বলে আমাদের কোনো বাদ নাই, বিএনপি প্রতিষ্ঠা থেকে এ পর্যন্ত বিএনপি'র কোনো নেতা বা কোনো কর্মী কখনোই জিয়া বাদের কথা বলেনি। উনারা জিয়াবাদ কোথা থেকে আবিষ্কার করেছেন? এই নতুন নতুন আবিষ্কার করে রাজনীতির ময়দানে একটি বিশৃঙ্খলা, উত্তেজনা সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যটা আসলে কী তা জানা নেই। এসব করে রাজনীতির ময়দানে টিকে থাকা যায় না।
বার্তা২৪.কম: বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক কেমন হবে?
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স: ভারত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। ভারতের সঙ্গে আমাদের অনেক সমস্যা রয়েছে। বিএনপি ভারত বিরোধী রাজনৈতিক দল নয়। কিন্তু বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, জনগণের বিরুদ্ধে ভারত যদি অবস্থান নেয় বিএনপি অবশ্যই জনগণের পক্ষে অবস্থান নেবে। আমরা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই। তাদেরকে বাংলাদেশের জনগণের সেন্টিমেন্টের প্রতি, আস্থা বিশ্বাস রাখতে হবে।