একাত্তরকে বাদ দিয়ে জাতির অস্তিত্ব চিন্তা করতে পারি না: মির্জা ফখরুল

  • নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

একাত্তরকে বাদ দিয়ে জাতির অস্তিত্ব চিন্তা করা যায় না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যুগান্তরকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন তিনি। নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানসহ সমকালীন রাজনীতির বিভিন্ন প্রসঙ্গেও কথা বলেছেন মির্জা ফখরুল। সাক্ষাৎকারের চুম্বকাংশ বার্তা২৪.কম এর পাঠকদের জন্য প্রকাশিত হল:

‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ দেবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। নেতারা বলেছেন, ঘোষণাপত্রে বাহাত্তরের মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচিত হবে। আপনি বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

বিজ্ঞাপন

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : ছেলেরা তো অনেক অবেগপ্রবণ। যুবক, তাদের তারুণ্যে সবকিছু মিলিয়ে তাদের তো একটা আকাঙ্ক্ষা থাকতেই পারে। সেভাবে তাদের মতো করে তারা বলেছে। আমি মনে করি, তারা তাদের আবেগ থেকেই বলেছে, তারুণ্য থেকে বলেছে। এটাকে (বাহাত্তরের সংবিধান বাতিলের দাবি) এই মুহূর্তে বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। ভবিষ্যতে যদি কখনো সুযোগ আসে, সময় আসে, তখন জাতির চিন্তা করে দেখা উচিত বলে আমি মনে করি।

আরেক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আমরা যেন একাত্তরকে ভুলে না যাই-হঠাৎ কেন এ কথা বললেন?

বিজ্ঞাপন

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : আমরা লক্ষ করছি কোনো কোনো ব্যক্তি মাঝেমধ্যে ভিন্নভাবে কথা বলার চেষ্টা করছেন। একাত্তর সালকে অনেকে কটাক্ষ করছেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিষয়কে তারা ইগনোর করছেন। সেক্ষেত্রে আমি এ কথা বলতে বাধ্য হয়েছি যে, একাত্তরকে বাদ দিয়ে আমাদের দেশের জাতির অস্তিত্ব আমরা চিন্তা করতে পারি না।

‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ নিয়ে আপনিও কথা বলেছিলেন। এমন কিছু কি সন্দেহ করছেন?

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : আমাদের তো একটা অভিজ্ঞতা আছে, খারাপ অভিজ্ঞতা। ‘ওয়ান-ইলেভেন’-এর সেই অভিজ্ঞতা আমরা দেখলাম যে সরকার এলো, এসে দুই বছর থাকল। দুই বছর থেকে তা হাইকোর্ট থেকে পাস করিয়ে নিল। আমি মনে করি, এ জিনিসগুলো দেখা উচিত। তবে এখন আর মাইনাস টু ফর্মুলা আছে বলে মনে করি না। কিন্তু তারপরও বলেছি, বিএনপিকে মাইনাস করার ক্ষমতা কারও নেই। সুতরাং মাইনাস টু ফর্মুলা এখন আর চলবে না।

একক নাকি জোটগতভাবে বিএনপি নির্বাচন করবে?

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : এটা এ মুহূর্তে বলা সম্ভব না। নির্বাচন এলে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা হয়, তারপর সিদ্ধান্ত হয়।

আওয়ামী লীগের রাজনীতি ও নির্বাচনে অংশ নেওয়া নিয়ে বিএনপির অবস্থান কী?

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : আমরা এর আগেও বলেছি, এ বিষয়ে জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে। এ সিদ্ধান্ত আসবে জনগণের কাছ থেকে।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে কবে ফিরবেন?

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : এখনো সময় নির্ধারণ হয়নি। তার অনেক মামলা আছে। বেশ কিছু মামলা শেষ হয়েছে, আরও কিছু বাকি আছে। মামলা শেষ হলেই উনি চলে আসবেন।

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উন্নত চিকিৎসার জন্য কবে নাগাদ লন্ডন যেতে পারেন?

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : তারিখ সুস্পষ্টভাবে বলতে পারব না। কারণ, ওনার শরীর মাঝেমধ্যে একটু খারাপ হয়ে যাচ্ছে। যে কারণে বিলম্বিত হচ্ছে। এখন মনে হয়, নতুন বছরের প্রথমদিকেই যাবেন।

দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে দেশের অস্থিরতা বা সংকট অনেক কমে যাবে বলে বিএনপিসহ বিভিন্ন দল বলছে। একই সঙ্গে দলগুলো বলেছে এখনো সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : আমরা সুস্পষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছি। নির্বাচন হলে যে সংকটগুলো তৈরি হচ্ছে, তা অনেকাংশে কমে আসবে। নির্বাচিত সরকারে মানুষের যে আস্থা, সেই সঙ্গে নির্বাচিত সরকারের যে শক্তি তৈরি হয়, সেটা অনেক শক্তিশালী হয়। যে কারণে তারা অনেক কাজ করতে পারেন, যা অনির্বাচিত সরকারের পক্ষে সম্ভব হয় না।

যদি জানুয়ারির মধ্যেও নির্বাচনি সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা না হয়, সেক্ষেত্রে দলের ভাবনা কী।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : এটা ঠিক এ মুহূর্তে বলতে পারব না। এ মুহূর্তে কোনো বিরোধে কারও সঙ্গে যেতে চাই না। আমি মনে করি, এখন যেটা দরকার-সব বিষয়ে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা আমাদের একটা দায়িত্ব। সেভাবে আমরা কাজ করতে চাই।

ঠাকুরগাঁওয়ে জনসভায় বলেছেন ভোট-ভাতের অধিকার আদায়ে আবার রাস্তায় নামতে হবে। আন্দোলনে নামার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না?

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : আমাদের ভোটের অধিকার যদি জনগণ ফিরে না পায়, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা যদি না হয়; তাহলে তো আমাদের রাস্তায় নামতেই হবে। এটা আমাদের কাজ।

আগামী জাতীয় নির্বাচন কবে নাগাদ চান?

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : আমরা সেভাবে কিছু বলিনি। তবে আমরা মনে করি, ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্বাচন হওয়া সম্ভব। সেটা ২৫ সালের মধ্যেই সব ব্যবস্থাই নিয়ে নেওয়া যায়, যেগুলো প্রয়োজন নির্বাচনের জন্য।

জাতীয় প্রেস ক্লাবে একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, মানুষের মধ্যে ধারণা হচ্ছে সরকার ইচ্ছা করে নির্বাচন বিলম্ব করছে। কেন মনে হলো?

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : হঠাৎ করে দেখলাম ভোটারের ন্যূনতম বয়সসীমা ১৭ বছরের কথা বললেন প্রধান উপদেষ্টা। তো এটা স্বাভাবিকভাবে আমাদের নির্ধারণ করা তো আছেই ১৮ বছর। সেটা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো বা অন্য স্টেকহোল্ডাররা তো কেউ কথা বলেননি। সেখানে এটিকে আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এই যে বিভিন্নভাবে ছাত্ররা মুভমেন্ট করছেন, সেই মুভমেন্টে বেশিদিন ধরে ক্ষমতায় থাকার জন্য একটা প্রবণতা দেখা যায়। এটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু বয়সটা যদি কমানো যায়, সেটা আরও সময় লাগবে। নতুন ভোটার তালিকা তৈরি করতে হবে। অনেক সময় লাগবে। তো সেই ব্যাপারটার কারণে আমি বলেছি।

সরকারের দুয়েকজন এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা বলছেন, সংস্কার শেষে জাতীয় নির্বাচন। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন। এ বিষয়ে আপনার মন্তব্য কী?

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : বিএনপি সংস্কার চায় না, নির্বাচন চায়-এটা ঠিক নয়। বিএনপি প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচন চায়। আমরা বারবার বলছি, একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যেটুকু (সংস্কার) দরকার, সেটুকু শেষে নির্বাচনে যেতে চাই। নির্বাচন যত দেড়ি হবে, দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট তত বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং আমরা বিশ্বাস করি, দ্রুত দ্রুত নির্বাচন সম্ভব করতে পারলে দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা দল গঠনের কথা বলছেন। কীভাবে দেখছেন...

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : রাজনৈতিক সংগঠন করার অধিকার তো আমাদের সংবিধানেই দেওয়া আছে। এটা আমি মনে করি, সবাই করতে পারেন; কিন্তু সেটা মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে তো। মানুষ গ্রহণ করলেই সেই দল কার্যকরভাবে কাজ করতে পারবে।

জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে আন্দোলনরত সব রাজনৈতিক দল নিয়ে ‘জাতীয় সরকার’ করবে বিএনপি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর : আমরা যখন ৩১ দফা দিই, এরও আগে আমরা যখন ১০ দফা দিয়েছিলাম গোলাপবাগে; সেখানেও কিন্তু বলেছিলাম আমরা নির্বাচনে জয়ী হলে আন্দোলনরত সব দল নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করব। যাতে রে সব কাজ একসঙ্গে করতে পারি। ঠিক একইভাবে আমরা এখনো বলেছি, ভোটে যারা নির্বাচিত হয়ে আসবে অথবা আন্দোলনরত দলগুলোর মধ্যে যারা ছিলেন, তাদের সঙ্গে নিয়ে জাতীয় সরকার গঠন করা হবে এই ৩১ দফা বাস্তবায়িত করার জন্য।