নির্বাচন যত দেরি হবে, সমস্যা তত বাড়বে: মির্জা ফখরুল

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচিত নয়, তাদের ম্যান্ডেট নেই বলে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাই আমরা মনে করি যৌক্তিক সময়ে সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দিতে হবে। আর তা না হলে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় থেকে যেতে চায়- এমন ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হবে।

সোমবার (১৮ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব অডিটোরিয়ামে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। আলোচনা সভার আয়োজন করে বিএনপির মওলানা ভাসানী মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটি।

বিজ্ঞাপন

বিএনপি মহাসচিব এসময় গত দেড় দশকের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে পূর্ণতা দেওয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের কর্মকাণ্ডের ভূয়সী প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বিএনপি গত ১৫ বছর ধরে আন্দোলন করলেও শেষ গোলটা করেছে শিক্ষার্থীরা। তারা স্ট্রাইকার, বুক পেতে গুলি নিয়েছে তরুণ ভ্যানগার্ডরা। ছাত্রদের সঙ্গে কখনোই দূরত্ব সৃষ্টি করা যাবে না।

বিএনপির নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা তো কম কষ্ট করেননি, কিন্তু বুক পেতে দিতে পারেননি। সাঈদ যেভাবে বুক পেতে দাঁড়িয়েছিল সেটাই শেখ হাসিনার পতনের টার্নিং পয়েন্ট।

বিজ্ঞাপন

দ্রুত জাতীয় নির্বাচন ও সংস্কার ইস্যুতে মির্জা ফখরুল বলেন, ছাত্ররা অনেক কথা বলছে, বলবে। আমরা হিসেবি। তাই অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, দ্রুত নির্বাচন জাতির জন্য জরুরি। কারণ এই ধরণের সরকার যত বেশিদিন ক্ষমতায় থাকবে, তত বেশি সমস্যা তৈরি হবে। কারণ এটা তো নির্বাচিত সরকার নয়। সংস্কারের কথা বিএনপিও বলেছে। অবশ্যই সংস্কার চাই। সেটা যৌক্তিক সময় হতে হবে। এসব না করতে পারলে সমাজ পরিবর্তন করা যাবে না।

দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের এই সময়ে সবাইকে সতর্ক থাকার প্রতিও গুরুত্বারোপ করেন বিএনপি মহাসচিব। বলেন, এমন কাজ করা যাবে না, যা আমাদের দেশকে অস্থিরতার দিকে নিয়ে যাবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা একটি ক্রান্তিকাল পার করছি। গতকাল প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে বক্তৃতা দিয়েছেন, ভাল হয়েছে। অনেকেই আশান্বিত হয়েছেন, আমি একটু আশাহত হয়েছি। আমি আশা করেছিলাম প্রধান উপদেষ্টা তার সকল প্রজ্ঞা দিয়ে সমস্যা চিহ্নিত করে একটি নির্বাচনের রূপরেখা দিবেন।

বারবার নির্বাচনের কথা বলার বিষয়ে তিনি বলেন, কারণ নির্বাচন দিলেই আমার অর্ধেক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। বিএনপি ক্ষমতায় যাক, না যাক সেটা ইমমেটেরিয়াল। যারা বাংলাদেশের ক্ষতি করতে চাচ্ছে, স্থিতিশীলতা নষ্ট করতে চাচ্ছে, সংঘাতের মধ্যে যারা জড়িয়ে দিতে চাচ্ছে তারা তখন পিছিয়ে যেতে বাধ্য হবে। কারণ তখন সরকারের ভিতরের জনগণের সমর্থন থাকবে।

তিনি বলেন, আমরা সংস্কার অবশ্যই চাই এবং সংস্কার আমরা করবো। আপনারা দয়া করে যেভাবে করলে সুন্দর হয়, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয় সেভাবেই এগিয়ে যান। আমরা এখন পর্যন্ত কোন বাধা সৃষ্টি করিনি। আপনাদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছি।

সচিবালয়ে এখনো স্বৈরাচারের দোসররা বসে আছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, কিভাবে সংস্কার করবেন আপনি? কাদের দিয়ে সংস্কার করবেন? এরা সংস্কার করতে দিবে না। বেশির ভাগ আমলা বসে আছে, যারা স্বৈরাচারের দোসর। যারা কোটি কোটি টাকা আয় করেছে, দুর্নীতি করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেন এমনটা তো আমরা দেখতে পাচ্ছি না। এগুলো দৃশ্যমান করেন।

প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে তিনি বলেন, গভর্ন্যান্সের দিকে লক্ষ দিতে হবে। প্রশাসনকে চালানো, দেশ শাসন করা, মানুষ যেনো শস্তি পায়। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম এমনভাবে বেড়েছে মানুষ শান্তি পাবার কোন কারণ নেই। তাও মানুষ মেনে নিচ্ছে। কারণ আপনি একটা সুন্দর জিনিস দিবেন। আপনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন এগুলোকে দৃশ্যমান করেন। সিন্ডিকেট ভাঙার চেষ্টা করেন। লোকদের যদি এখনও কাজ করতে গেলে ঘুষ দিতে হয়, সচিবালয়ে গিয়ে যদি আগের মতো দালালদের দেখতে হয়, তাহলে মানুষ কখনো ভাল চোখে দেখবে না।

মওলানা ভাসানী ও জিয়াউর রহমানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসছেন, তাকে মানুষ প্রচন্ড ভালোবাসেন। জিয়াউর রহমানের সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন মওলানা ভাসানী। তিনি তার মাথায় হাত দিয়ে বললেন, তুমিই পারবে, তুমি তরুণ, তুমি যুবক, তুমি সৎ, তুমি দেশকে ভালবাসো, তুমিই পারবে পরিবর্তন আনতে। সেটা মনে রেখেছিলেন জিয়াউর রহমান। মৃত্যুর সময় তাকে সে সম্মান দিয়েছিলেন তিনি।

মওলানা ভাসানীর কথার উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, এই দেশের মানুষের মধ্যে ধর্মবোধকে বাদ দিয়ে কোন কাজ হবে না। আমরা যারা কমিউনিস্ট করতাম তখন মিন করতাম ধর্ম বড় কোন বিষয় না কিন্তু তখনই মওলানা ভাসানী আমাদের বলেছিলেন, এই দেশে ধর্ম-কর্ম বাদ দিয়ে কোন কিছু হবে না।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন মওলানা ভাসানী মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান। সঞ্চালনা করেন মওলানা ভাসানী মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটি সদস্য সচিব ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু।