দেশ এখন বিভক্ত হয়ে গেছে: জিএম কাদের

  • স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। ছবি- বার্তা২৪.কম

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের। ছবি- বার্তা২৪.কম

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, অনেক আশা করে আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলাম দেশে কোনো বৈষম্য থাকবে না, কিন্তু দেশ এখন বিভক্ত হয়ে গেছে। তারা পবিত্র আর সকলে অপবিত্র।

শুক্রবার (১ নভেম্বর) জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি কোনো দল কিংবা কারো নাম উল্লেখ না করে এমন মন্তব্য করেন। বৃহস্পতিবার রাতে পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনার প্রতিবাদে জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়।

বিজ্ঞাপন

জিএম কাদের বলেন, কে দোষী কে নির্দোষ তা তারা নির্ধারণ করবে, এখানে কোনো তদন্তের প্রয়োজন নেই। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এমনটা হয়েছিল, এখন আমরা কি তার রিপিটেশন দেখতে পাচ্ছি! সারাদেশে হাজার হাজার লোকের নামে মিথ্যা মামলা হচ্ছে, কোটের মধ্যে হইহই করে রায় বদলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। জুডিশিয়ালী আবার কি দলীয়করণ হচ্ছে, আমরা কি আগের চিত্র দেখতে পাচ্ছি! আওয়ামী লীগও দলীয়করণ করেছিল, এখন আবার সেই কি ধারা দেখতে পাচ্ছি!

তিনি বলেন, এখনকি দেশ সঠিক পথে চলছে! কেউ দোষ করলে তার বিচার হোক, কিন্তু বিচার না করেই কারো অফিস বন্ধ করে দেওয়া- এটা বৈষম্যবিরোধী! আমরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েও বৈষম্যের শিকার। আমাদের নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা হত্যা মামলা দেয়া হচ্ছে। অল্প সংখ্যক লোক পবিত্র আর বেশি সংখ্যক লোক অপবিত্র। বেশি সংখ্যক লোক দোষী হলে, আর দোষী মানুষের সংখ্যা বেশি হলে তারা নেতৃত্ব দিতে চাইতে পারে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ না হলে, মানুষ না খেয়ে মারা গেলে সংস্কার দিয়ে কি হবে। আইনশৃঙ্খলা অবস্থা কি দেখছি, কোনো লোক এসে গুলি করে মেরে ফেলতে পারে। আল্লাহ ছাড়া কোন নিরাপত্তা নেই।

জিএম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টিকে ধ্বংস করার যে ষড়যন্ত্র ১৯৯০ সালে চালু হয়েছে, তা এখনও অব্যাহত রয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে আমরা মনে করেছিলাম ষড়যন্ত্র বন্ধ হবে, কিন্তু না ষড়যন্ত্র থেমে নেই।

তিনি বলেন, জাপা একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক দল, সারাদেশে কর্মী সমর্থক রয়েছে। সেটাই তাদের বড় ভয়, তারা মনে করে এটাকে ধ্বংস করতে হবে। কিন্তু তারা অতীতেও পারেনি ভবিষ্যতেও পারবে না। যতোই অপবাদ দেওয়া হোক, জনগণের মনে থাকা জায়গা নষ্ট করতে পারবে না, আমরা মরে গেলে সন্তানরা দলকে তুলে ধরবে। জাতীয় পার্টি বারংবার কবর থেকে উঠে এসেছে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জেলে থেকে ৫টি আসনে বিজয়ী হয়েছিলেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই শীর্ষস্থানীয় নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমকে রংপুরে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার ইস্যুতে বলেন, রংপুরের মেয়র ক্ষোভ থেকে করেছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করাটাও স্বাভাবিক, যে ছাত্রদের আন্দোলনে সরাসরি অংশ নেন, সেই ছাত্ররাই আবার জাতীয় পার্টিকে প্রতিহত করার ডাক দেন। তখন ক্ষুব্ধ হওয়াই স্বাভাবিক।

দীর্ঘ বক্তৃতায় আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিএনপিরও সমালোচনা করেন জিএম কাদের। তিনি বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়া কোনো অপরাধ নয়। বিশ্বের কোনো আইনে একে অপরাধ বলা হয় নি। যদি অপরাধ হয়েই থাকে তাহলে সমান দোষী বিএনপিও। কারণ তারা ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ না নিলেও পরে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়ে সরকারকে বৈধতা দিয়েছে, আবার ২০১৮ সালে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে।

জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগের দোসর ঘোষণা দিয়ে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তার প্রতিক্রিয়ায় রংপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টির ঘোষণার পর সারজিস আলম রংপুরে গেলে লাঠি ও ঝাড়ু মিছিল করে প্রতিবাদ জানায়। এরপর থেকে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে চলে এসেছে।