রাসিক নির্বাচন: লিটনেই ভরসা আওয়ামী লীগের
নির্বাচন কমিশন (ইসি) ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ২১ জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। নির্বাচনকে ঘিরে এরই মধ্যে রাজশাহীজুড়ে রয়েছে নানা গুঞ্জন। সিটি নির্বাচনে আবারও দলীয় মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও বর্তমান রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। তার পক্ষে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা দলীয় মনোনয়নপত্র উত্তোলন করেন।
সোমবার (১০ এপ্রিল) বেলা ১১টায় রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে দলীয় মনোনয়নপত্রটি তোলা হয়।
এ সময় রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী, শাহাদাত হোসেন বাদশা, সৈয়দ শাহাদাত হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক নূরুল ইসলাম সরকার আসলাম ও আইন বিষয়ক সম্পাদক মুসাব্বিরুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
এদিন সন্ধ্যায় রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, আমরা আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ আজ মেয়র লিটনের পক্ষে মনোনয়ন উত্তোলন করেছি। আগামীকাল বা পরশু এটা পূরণ করে জমা দেওয়া হবে। আর প্রার্থীর ব্যাপারে পরে মনোনয়ন বোর্ড থেকেই পরবর্তী সিদ্ধান্তের কথা জানাবে। জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দিবে তার জন্যই আমরা কাজ করব। তিনিই আমাদের চালিকাশক্তি।
সম্প্রতি রাজশাহীর রাজনীতিতে গুঞ্জন ছড়িয়েছিল আসন্ন সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করবেন লিটন। এমপি নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রীও হতে পারেন বলে ধারণা করছিলেন অনেকে। এ ব্যাপারে তিনি নিজেও গণমাধ্যমকে স্পষ্ট করেননি কিছুই। কেবল জানিয়েছেন দলীয় প্রধান তাকে যেখানে চাইবেন সেখানেই নির্বাচন করবেন। আওয়ামী লীগ ছাড়া কারো এখনো মনোনয়ন নেওয়ার কথা জানা যায়নি।
তবে রাসিক নির্বাচনে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা শাহাবুদ্দিন বাচ্চুকে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন দলটির জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ইকবাল হোসেন। গত ২৫ মার্চ দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে তার নাম ঘোষণা করা হয়। কিন্তু তার সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থিতা ঘোষণাকে ‘প্রতারণা’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির রাজশাহী মহানগরের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম। দলের কেন্দ্রীয় ও রাজশাহীর নেতাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই বাচ্চুকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন ফরম তুলতে পারেন বলে গুঞ্জন ছিল। তবে সম্প্রতি তার একটি অশ্লীল ভিডিও ফাঁস হওয়ায় তুমুল সমালোচনার মুখে পড়েন। এমন কি তাকে দল থেকে অপসারণে প্রকাশ্যে নানা কর্মসূচি পালন করে মহানগর আওয়ামী লীগ। দল থেকে ডবলুকে বহিষ্কারের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছে আবেদনও করেছে মহানগর আওয়ামী লীগ। এ ঘটনার পর থেকে ডাবলুকে দলীয় কোনো কর্মসূচিতেও রাখা হচ্ছে না। ফলে কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন তিনি।
এবিষয়ে ডাবলু সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন।
সর্বশেষ সিটি নির্বাচনে খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে পরাজিত হন তৎকালীন মেয়র বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তবে এবারের নির্বাচনে বিএনপির কেউ অংশ নিচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন দলটির একাধিক নেতা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার মেনে নেওয়ার আগে আর কোনো নির্বাচনে যাবেন না বলেও জানিয়েছেন তারা।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাবেক রাসিক মেয়র ও সাবেক এমপি মিজানুর রহমান মিনু বলেন, নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার মেনে না নিলে বিএনপি আর কোনো স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেবে না।
খায়রুজ্জামান লিটন ২০০৮ সালের ২৮ আগস্ট নির্বাচনে প্রথম রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৩ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তিনি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের কাছে হেরে যান। ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই পুনরায় মেয়র নির্বাচন করে জয়লাভ করেন। দীর্ঘদিন তিনি রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর তিনি আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কমিটি সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। এরপর গত ২৪ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তিনি পুনরায় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচিত হন।